দুশ্চিন্তা প্রভাব ফেলে যৌন উত্তেজনায়

দুশ্চিন্তা প্রভাব ফেলে যৌন উত্তেজনায়

অল্পবয়সী একটি ছেলে যে কিনা এখনো ছাত্রত্বের পাঠ চুকিয়ে কর্মজীবনে প্রবেশ করেনি, বিয়ে-শাদি করে ঘর সংসারী হয়নি, সে যদি বলে তার ইরেকশন বা লিঙ্গ উত্থানজনিত সমস্যা হচ্ছে সেটি মেনে নেয়া কঠিন। আমি ধৈর্য ধরে তার সব কথাই শুনলাম।

যা বুঝলাম তা হলো যৌনতা বিষয়ে সঠিক ধারণা না থাকার কারণে তার এই সমস্যা হচ্ছে। শুধু সে নয়, তার মতো আরো অনেকেই এ ধরনের সমস্যায় ভুগছেন। যদিও তার ধারণা ছিল হস্তমৈথুনের কারণেই তার আজকের এই সমস্যা। এই ধারণার কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই। শোনা কথা বা প্রচলিত বিশ্বাস থেকেই তার এই ধারণা তৈরি হয়েছে। শুধু হস্তমৈথুন নয়, বীর্যের ঘনত্ব, পেনিস বা লিঙ্গের আকার-আকৃতি, যৌনমিলনের স্থায়ীত্বকাল নিয়েও কিছু ধারণা বা বিশ্বাস প্রচলিত আছে যা যৌনরোগ তৈরিতে ভূমিকা রাখে।

এই প্রসঙ্গে যৌনরোগ কী তা একটু সংক্ষেপে বলি- যৌনরোগ হলো সেই ধরনের যৌন সমস্যা যাতে একজন ব্যক্তি (নারী/পুরুষ) যৌন উদ্দীপনায় সাড়া দিতে ব্যর্থ হয় বা যথাযথ আনন্দ লাভে ব্যর্থ হয়। এবার চলুন দেখি হস্তমৈথুন সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা তার মধ্যে কী করে ইরেকটাইল ডিজফাংশন তৈরি করল। হস্তমৈথুনকে সে দেখত কৃত্রিম যৌনতা হিসেবে।

তারভাষায় ‘স্যার এটা তো এক ধরনের আন-ন্যাচারাল ব্যাপার।’ আমি বললাম ন্যাচারাল নয় কেন? সে কোনো উত্তর দিতে পারল না। হয়তো লজ্জা আর জড়তাই এ ক্ষেত্রে কাজ করেছে বেশি। আমি সহজ করার জন্য বললাম নারী-পুরুষের স্বাভাবিক যৌনমিলন থেকে পার্থক্য কী? সে কোনো কথা বলল না। বললাম আপনার সঙ্গী থাকলে কি এটা করতেন? উত্তরে সে জানাল সঙ্গী থাকলে সে এটা করত না। বললাম দুটোই মানুষের স্বাভাবিক যৌন আচরণ। একটা সঙ্গী থাকলে সঙ্গীর সাথে করে যাকে বলে পার্টনার-সেক্স, আরেকটি সঙ্গী না থাকলে একা একা করে যাকে বলে সলো সেক্স। বয়ঃপ্রাপ্তির সাথে সাথে শরীরে যখন যৌন উত্তেজনা আসে তখন সেই উত্তেজনা থেকে চাপমুক্ত হতে সে এটা শিখে ফেলে। কাজেই হস্তমৈথুন একটি ন্যাচারাল বিষয়। তখন তার প্রশ্ন এতে যৌনক্ষমতা নষ্ট হয় কিনা। আসলে এটাই সমস্যা।

হস্তমৈথুন যৌনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর ভাবাতে সে হস্তমৈথুনের পরে এক ধরনের অনুশোচনায় ভুগত। বারবার তার মনে হতো ‘কত যেন ক্ষতি হয়ে যাচ্ছে!’ ‘এটা না করলেই ভালো ছিল।’ ফলে পরবর্তীতে তার মনে উত্তেজনা সেভাবে আসত না কারণ যৌন উত্তেজনাকে সে ভেতরে ভেতরে ভয় পেতে শুরু করেছিল। মনে উত্তেজনা না আসলে শরীরেও তা সেভাবে প্রতিফলিত হতো না। অর্থাৎ শরীরেও উত্তেজনা কম হতো। সত্যি কথা বলতে কী আমরা কতটুকু যৌন উদ্দীপনায় সাড়া দেব তা নির্ধারণ করে আমাদের ব্রেইন। আমাদের ব্রেইন যতটুকু যে মাত্রায় উত্তেজনা সমর্থন করে আমরা ততটুকু সেই মাত্রায় উত্তেজিত হই। জন ব্যাঙক্রাফট  ডুয়েল কন্ট্রোল মডেলে মানুষের যৌন উদ্দীপনায় সাড়া দেয়ার ব্যাপারে তেমনটাই বলেছেন।

আসলে যে-কোনো ধরনের ভীতি বা হুমকি আমাদের যৌন অনুভূতিকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। দুশ্চিন্তার সাথে যৌন উত্তেজনার সম্পর্ক অন-অফের। অর্থাৎ একটা অন হলে অপরটা অফ হয়ে যায়। আবার দুশ্চিন্তার কারণে শরীরে কেন্দ্রীয় রক্ত সরবরাহ বাড়ে আর প্রান্তীয় রক্ত সরবরাহ কমে। ফলে লিঙ্গের উত্থান ব্যহত হয়। যারা প্রচলিত ভ্রান্ত-বিশ্বাস দ্বারা আক্রান্ত তাদের দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হওয়াটাই স্বাভাবিক। কারণ ভ্রান্তবিশ্বাস আমাদের আত্মবিশ্বাস কমিয়ে দেয়। ফলে দেখা যায় সত্যিকার অর্থে কোনো শারীরিক ত্রুটি না থাকা সত্তে¡ও অনেকেই প্রচলিত ধারণার বশবর্তী হয়ে যৌন সমস্যায় ভুগছেন। দেখা যায়, ডাক্তারি পরীক্ষা-নিরীক্ষার রিপোর্ট ভালো থাকা সত্তেও তাদের সমস্যার সমাধান হচ্ছে না। সেক্সচুয়াল পারফরম্যান্সজনিত দুশ্চিন্তা তাদের পিছু ছাড়ছে না।

*লেখাটি মনের খবর মাসিক ম্যাগাজিনে প্রকাশিত।
মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ে চিকিৎসকের সরাসরি পরামর্শ পেতে দেখুন: মনের খবর ব্লগ
করোনায় মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক টেলিসেবা পেতে দেখুন: সার্বক্ষণিক যোগাযোগ
করোনা বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য ও নির্দেশনা পেতে দেখুন: করোনা ইনফো
করোনায় সচেতনতা বিষয়ক মনের খবর এর ভিডিও বার্তা দেখুন: সুস্থ থাকুন সর্তক থাকুন

Previous articleকনভার্সন ডিসঅর্ডার: কারণ ও লক্ষণ
Next articleঅতিরিক্ত দুশ্চিন্তায় বাড়তে পারে যেসব রোগ
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, মনোরোগবিদ্যা বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here