করোনা মহামারীর এই দুঃসময়ে শিশুদের মনকে ভয়মুক্ত রাখার কিছু কৌশল

0
128
নতুন উপসর্গ নিয়ে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হচ্ছে শিশুরা

বর্তমান সময়টা আমাদের সবার জন্য বিশেষত শিশুদের জন্য খুব কঠিন এবং আশঙ্কাপূর্ণ। এই সময়ে শিশুদের প্রতি তাই বেশী যত্নশীল হতে হবে এবং তাদের মনের সব ভয় এবং আশঙ্কা দূরে রেখে তাদের সুস্থ ও স্বাভাবিক জীবন যাপনের সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে।

বৈশ্বিক মহামারীর মত এই দুঃসময়ে হাসি খুশি এবং দুশ্চিন্তা মুক্ত থাকা সত্যিই কঠিন। আর শিশুদের মানসিক অবস্থা এখন আরও বেশী নাজুক। তাদের ওপর মহামারীর দুস্প্রভাব আরও বেশী মাত্রায় পড়ছে। করোনার সাথে সাথে এই মানসিক চাপ এবং উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা আমাদের দুর্ভোগ বহুগুণ বাড়িয়েছে। শিশুদের সুস্বাস্থ্য বজায় রাখতে শারীরিক অবস্থার সাথে সাথে তাদের মানসিক অবস্থার উন্নতি সাধন করাও আবশ্যক।

তাই করোনা কালে শিশুদের শারীরিকভাবে সুস্থ রাখতে যেমন পুষ্টিকর খাবার, শরীর চর্চা, সুষম আহার ইত্যাদি বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে, তেমনি তারা যেন করোনা কালীন এই সময়ে ভয় থেকে এবং রাগ, দুশ্চিন্তা, অবসাদ, হতাশা, অনিদ্রা ইত্যাদি মানসিক সমস্যা থেকে দূরে থেকে স্বস্তিতে থাকে সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে। শিশুদের ভয় মুক্ত এবং মানসিকভাবে সুস্থ রাখতে তিনটি বিষয়ের প্রতি বিশেষভাবে নজর দিতে হবে- তারা যেন নিজেদের সুরক্ষিত মনে করে, তারা যেন অবসাদগ্রস্ত না হয় এবং তারা যেন পর্যাপ্ত মনোযোগ ও সহানুভূতি পায়।

বড়রা  নিজের ভালো মন্দ নিজেরাই বোঝার সামর্থ্য রাখে। কিন্তু ছোটরা বা শিশুরা তাদের সুরক্ষিত রাখতে সম্পূর্ণ রূপে বড়দের উপর নির্ভরশীল। তাই শিশুরা কখন কি করবে বা করছে সেদিকে বাড়ীর বড়দেরকে পর্যাপ্ত মনোযোগী হতে হবে। তাদের সুস্বাস্থ্য বজায় রাখতে প্রাত্যহিক এবং সাপ্তাহিক কাজের একটা রুটিন তৈরি এক্ষেত্রে করা যেতে পারে। তারা কখন ঘুমোতে যাবে, ঘুম থেকে উঠবে, কখন খাবে, পড়াশুনা করবে, খেলাধুলা করবে, শরীর চর্চা করবে বা পরিবারের সবার সাথে বসে আড্ডা দেবে এসব কিছু নিয়ম মেনে করার চেষ্টা করুন। এতে তারা যেমন সারা দিনে একটি নির্দিষ্ট পরিকল্পনার মধ্য দিয়ে এগিয়ে জীবনের লক্ষ্য পূরণের সামর্থ্য অর্জন করবে তেমনি তাদের মাঝে সময়ানুবর্তীতাও গড়ে উঠবে। তাছাড়া শিশুরা যখন বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত থাকবে, দীর্ঘ দিন ধরে ঘরে থাকার ফলে তাদের মাঝে যে অবসন্ন মনোভাব, অবসাদ এবং বিষণ্ণতা, সেগুলোও দূর হবে। তারা নিজেদের বন্দী ভাবা থেকে বিরত হবে এবং পরিবারের সবার সাথে হাসিখুশি থাকবে।

বর্তমানে আমরা সবাইই মোবাইল ফোন বা টিভি দেখার উপর অনেকটাই ঝুঁকে পড়েছি। বাসায় থেকে নিজেদের কি করবে বুঝতে পারছিনা এবং অবসাদ থেকে সময় কাটানোর নিমিত্ত হিসেবে সারাক্ষণ এসব  নিয়েই ব্যস্ত থাকার চেষ্টা করছি। শিশুরাও একইভাবে এসব জিনিসের উপর আসক্ত হয়ে পড়ছে যা তাদের জন্য মোটেও স্বাস্থ্যকর নয়। অনেক শিশুরাই আজ এসব কারণে চোখের সমস্যায় ভুগছে, তারা ধৈর্যহীন হয়ে নিজের উপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলছে আবার অনিদ্রার মত সমস্যাতেও ভুগছে। তাই অভিভাবকদের উচিৎ হবে তাদের ফোন সহ সব রকম ইলেকট্রনিক ডিভাইস ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ বা ব্যবহারের ক্ষেত্রে  একটা সময় সীমা নির্ধারণ করে দেওয়া। যেমন, ১৮ মাসের নিচের বয়সী শিশুদের ইলেকট্রনিক ডিভাইস ব্যবহার থেকে বিরত রাখা, ১০ বছরের নিচের শিশুদের সর্বোচ্চ ২ঘণ্টা, এবং কিশোর কিশোরীদের জন্য ২-৩ ঘণ্টা ব্যবহারের সুযোগ দেওয়া যেতে পারে। এটিও খেয়াল রাখতে হবে যেন তারা ঘুমাতে যাওয়ার আগে অবশ্যই সব রকম ইলেক্ট্রনিক ডিভাইস ব্যবহার থেকে বিরত থাকে। অভিভাবকদের উচিৎ শিশুদের সময় দেওয়া এবং অন্য কাজে ব্যস্ত রাখা যাতে তারা এসব দিকে ঝুঁকে না পড়ে। এতে তারা অনিদ্রা সহ অন্যান্য মানসিক চাপ থেকে দূরে থাকবে।

এছাড়াও শিশুরা যেন  সব সময় পিতা মাতার কাছ থেকে মানসিক ভরসা পায় সেদিকেও লক্ষ্য রাখতে হবে।  এই অস্বাভাবিক সময়ে তাদের সাথে আরও সৌহার্দপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তুলতে হবে। তারা যেন কখনো নিজেদের একা মনে না করে এবং তাদের সব রকম সমস্যা তাদের অভিভাবকদের সাথে আলোচনা করে সেই পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। তাদের মাঝে যেন আত্মবিশ্বাস বজায় থাকে সেজন্য তাদেরকে সব সময় ইতিবাচক ধারণা প্রদান করা এবং তাদের মাঝে কল্পনা শক্তি জাগ্রত করা অভিভাবকদেরই দায়িত্ব। আর এসব কাজ করলে শিশুরা এই করোনা মহামারীর দুঃসময়েও নিজেদের নিরাপদ, সুরক্ষিত ও আত্মবিশ্বাসী মনে করবে এবং একাকীত্ব, অবসাদ, হতাশা, অনিদ্রার মত মানসিক সমস্যা থেকেও দূরে থাকবে।

সূত্র: https://www.psychologytoday.com/us/blog/family-and-trauma/202008/these-3-things-will-create-sense-safety-your-kids

অনুবাদ করেছেন: প্রত্যাশা বিষ্বাস প্রজ্ঞা

মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ে চিকিৎসকের সরাসরি পরামর্শ পেতে দেখুন: মনের খবর ব্লগ
করোনায় মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক টেলিসেবা পেতে দেখুন: সার্বক্ষণিক যোগাযোগ
করোনা বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য ও নির্দেশনা পেতে দেখুন: করোনা ইনফো
করোনায় সচেতনতা বিষয়ক মনের খবর এর ভিডিও বার্তা দেখুন: সুস্থ থাকুন সর্তক থাকুন

Previous articleব্যক্তিত্ব উন্নয়ন এর জন্য সহায়ক চর্চা
Next articleআত্মবিশ্বাস বাড়াতে করণীয়

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here