এক.
মিসেস রুওশন আরা (ছদ্মনাম) ৬০ বছর বয়স বেশ কিছু যাবৎ দেশেই বসবাস করছেন স্বামী সহ। সন্তানরা সবাই দেশের বাহিরে সেটেল্ড। সবাই সু-প্রতিষ্ঠিতে যার যার অবস্থানে। তিনিও এতোদিন তাদের সাথে ছিলেন। এখন শেষ বয়সে দেশের বাড়িতে চলে এসছেন। তার ইচ্ছা শেষ নিঃশ্বাস টুকু যেনো দেশের মাটিতেই নেন।
ছেলে মেয়েরা বুঝিয়ে তাদের কাছে রাখতে চেয়েছিলেন কিন্তু তিনি চলে এসছেন স্বামী সহ। তারা দুজনেই তাদের পুরাতন বাংলা বাড়িতেই থাকছেন। সেখানে তাদের পুরোনো আত্মীয় ভাই বেরাদায় তাদের দেখাশুনা করেন। টাকা পয়সা যখন যা প্রয়োজন তা ছেলে মেয়েরা পাঠাতে বিন্দুমাত্র কার্পণ্য করছেন না।
ইদানীং রওশন আরা অদ্ভুত কিছু আচরণ করছেন,কথাবার্তা বলছেন। মাঝে মধ্যে তিনি তার স্বামীকে বলেন, “আমার মাঝেমধ্যে আমার মনে হয় আপনি আসল মানুষ নন। অন্য কেউ আপনার রুপ ধারণ করে এসছে। অবিকল আপনার রুপ।”
দীর্ঘ পঞ্চাশ বছরের তাদের দাম্পত্য জীবন তাদের। এমন কথাবার্তায় মি. রহমান সাহেব প্রথম প্রথম খুব একটা পাত্তা না দিলেও ইদানীং বেশ বিব্রত হচ্ছেন। কারণ রওশন আরা তাকে আগন্তুক ভেবে এড়িয়ে চলেন হঠাৎ হঠাৎ।
রওশন আরা কখনো বাংলা বাড়ির এদিক ওদিক ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে বলেন, “জানেন, এটা নকল একটা বাংলা বাড়ি’ যা আমাদের ‘আসল বাংলা বাড়ীটার মতো’ করে বানানো”
এমন অসংলগ্ন কথাবার্তায় গ্রামের আশপাশের পরামর্শে মি রহমান সাহেব “ভুত-প্রেতের” আছর ভেবে নানান কবিরাজ, ভন্ডদের কাছে দ্বারস্থ হয়েছেন। কিছু এলোপ্যাথিক চিকিৎসাও করিয়েছেন। তারা ঘুমের ঔষধ দিয়েছেন। কিন্তু দিন দিন তার এসব অসংলগ্ন আচরন যেনো বাড়ছেই।
দুই.
তিনি যখন বিদেশে থাকতেন তখন তার ছেলেমেয়েরা তাকে প্রায়ই সাইকিয়াট্রিস্ট এর কাছে নিয়ে গিয়ে চিকিৎসা করাতেন। কারন তার ভুলে যাওয়ার সমস্যা ছিলো, প্রায়ই নাস্তা বা দুপুরের খাবার খেয়ে কিছুক্ষন পর বলতেন, “আমি খাইনি বা জিগ্যেস করতেন, আমি কি খেয়েছি”।
মাঝেমধ্যে তিনি কিছু অদ্ভুত কথা বলতেন। বলতেন, ছেলেমেয়েরা তাকে বিদেশে এনে সম্পত্তির জন্যে মেরে ফেলার চক্রান্ত করছে। সাইকিয়াট্রিস্ট বলেছেন এটা ব্রেইনের রোগ “ডিমেনশিয়া” রোগের লক্ষন।
মিসেস রওশন আরা’র বর্তমান যে আচরণ গত সমস্যা দেখা দিয়েছে সেটা আসলে ‘ভুত-প্রেতের’ আছর বলে আদৌ কোন সমস্যা নয়। ভুত প্রেত, ভীমরতি ইত্যাদি বলে কিছু নেই। এসব মানসিক রোগ সম্পর্কে অজ্ঞতার জন্যেই এমন ধারণা। মানসিক রোগ নিয়ে মূর্খ অশিক্ষিত মানুষ যেমন অজ্ঞতায় থাকেন তেমন সাইকিয়াট্রি বা মানসিক রোগ নিয়ে অজ্ঞতা অনেক শিক্ষিত জনের মধ্যেও পাওয়া যায়।
তিন.
মিসেস রওশন আরা’র আসলে কি হয়েছে?
পরিচিত মানুষজন কে অপরিচিত, আগন্তুক ভাবা এর নাম ‘ক্যাপগ্রাস সিন্ড্রোম’। এটা অনেক সময় ডিমেনশিয়া রোগে পাওয়া যায়।
ক্যাপগ্রাস সিন্ড্রোম এর রোগীরা প্রায়শই পরিচিত কাউকে অপরিচিত মনে করেন। তারা মনে করেন বাহিরের ছদ্মবেশী কেউ আপনজনের (ছেলে মেয়ে ভাই বোনের) প্রতিরুপ ধারণ করে এসেছে। মাঝেমধ্যে তারা বলেই ফেলেন, ‘তুমি আমার ছেলে বা মেয়ে নও। ঠিক আমার ছেলে বা মেয়ের রুপ ধারন করে এসছো’।
ব্যাপারটা বেশ পীড়া দায়ক বটে আপনজনদের জন্যে।
ডিমেনশিয়া ছাড়াও ব্রেইনের বা মস্তিষ্কের আঘাত, মৃগী রোগ বা ঘোরতর মানসিক রোগ স্কিজোফ্রেনিয়ার রুগীদের মাঝেও ক্যাপগ্রাস সিমটম পাওয়া যায়।
চিকিৎসাঃ
সাইকিয়াট্রিস্ট দের মতে রুগীর সাথে অত্যন্ত ধৈর্যের সাথে ব্যবহার করতে হয়। তার সাথে এ নিয়ে তর্ক করাও যাবেনা। তাকে পুর্বের মতোই আদর যত্ন করে রাখতে হবে। তার খাবার দাবার ও শারীরিক যত্ন নিতে হবে। যাদু টোনা বান ইত্যাদি ভেবে অপচিকিৎসার দ্বারস্থ হওয়া যাবেনা, তাতে হিতে বিপরীত হতে পারে।
মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ে চিকিৎসকের সরাসরি পরামর্শ পেতে দেখুন: মনের খবর ব্লগ
করোনায় মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক টেলিসেবা পেতে দেখুন: সার্বক্ষণিক যোগাযোগ
করোনা বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য ও নির্দেশনা পেতে দেখুন: করোনা ইনফো
করোনায় সচেতনতা বিষয়ক মনের খবর এর ভিডিও বার্তা দেখুন: সুস্থ থাকুন সর্তক থাকুন