‘সন্তানদের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে’

0
46

আমাদের প্রতিদিনের জীবনে ঘটে নানা ঘটনা, দুর্ঘটনা। যা প্রভাব ফেলে আমাদের মনে। সে সবের সমাধান নিয়ে মনের খবর এর বিশেষ আয়োজন প্রতিদিনের চিঠি বিভাগ। এই বিভাগে প্রতিদিনই আসছে নানা প্রশ্ন। আমাদের আজকের প্রশ্ন পাঠিয়েছেন- শারমীন জাহান। বিশেষজ্ঞ হিসেবে পরামর্শ দিয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোরোগবিদ্যা বিভাগের প্রধান প্রফেসর ডা. সালাহ্উদ্দিন কাউসার বিপ্লব।

সমস্যা: আমার নাম শারমীন জাহান। আমার তিন ছেলে-মেয়ে। প্রথম দুই সন্তান শান্ত এবং তাদের কাজের প্রতি মনোযোগী। কিন্তু আমার ছোট সন্তানটি বড্ড বেয়াড়া। সবচেয়ে বড় সমস্যা সে মোবাইলের প্রতি আসক্ত। কোনোভাবেই তার এই সমস্যা থেকে আমি সরাতে পারছি না। মোবাইলের জন্য সে প্রয়োজনে ঝামেলা করে। ঘরে জিনিসপত্র ভাঙচুর করে। পড়ালেখাও তার মন নেই। সারাক্ষণ এক রুমে মোবাইল নিয়ে পড়ে থাকে। সেদিন পরীক্ষার আগে মোবাইল সরিয়েছি কেন, এই জন্য সে পরীক্ষা দিতেই যায়নি। তাকে শাসন করে, আদর করে কোনোভাবেই আমি মোবাইল আসক্তি থেকে সরাতে পারছি না। আমি এই বিষয়ে সমাধান চাই। কী করলে তার মোবাইল আসক্তি কমবে এবং স্বাভাবিক জীবনে অভ্যস্ত হবে।

পরামর্শ: প্রথমেই আপনাকে ধন্যবাদ, আপনার প্রশ্নের জন্য। মোবাইল এখন আমাদের ভীষণ প্রয়োজনীয়। পড়ালেখা থেকে শুরু করে প্রায় সবকিছুর জন্য মোবাইল দরকার আমাদের। তাই শুরুতে আমরা আসক্তির বিষয়টা মাথায় না আনি। এখন আমাদের ব্যক্তিগত, সামাজিক, অর্থনৈতিক সব কাজের জন্যই মোবাইল ও ইন্টারনেটের প্রয়োজন পড়ে। তাই এর ইতিবাচক দিক নিয়েও ভাবার দরকার আছে। প্রয়োজনীয় দিকটাও আমাদের মাথায় রাখতে হবে।

এখনকার সময় ক্লাস থেকে শুরু করে, বন্ধু-বান্ধব, নেটওয়ার্কিং সবক্ষেত্রে আমরা মোবাইল ব্যবহার করে থাকি। করোনার এই সময়ে সামাজিকতা রক্ষার্থে এখন ইন্টারনেট চলে আসছে। সুতরাং প্রথমেই আমরা আসক্তি হিসেবে চিন্তা না করে ইতিবাচকভাবে ভাবতে পারি।

আরেকটি বিষয় হচ্ছে ওদের সঙ্গে আলোচনা করা উচিত। সে কী প্রয়োজনীয় কাজেই ব্যবহার করছে কিনা। আমরা শুরুতেই আসক্তি চিন্তা করে তার প্রয়োজনীয় কাজ বন্ধ করে দিতে পারি না। সুতরাং তার সঙ্গে আলোচনা করে বুঝতে হবে, কোনটা প্রয়োজনীয় কাজ আর কোনটা অপ্রয়োজনীয় কাজ। এছাড়াও আমরা আলোচনা করে একটা কমিটমেন্টে আসতে পারি যে, সে তার প্রয়োজনীয় কাজ শেষ করেই মোবাইল রেখে দিবে কিনা।

আর তার সঙ্গে আলোচনা করলে সেও একসময় বুঝতে পারবে, কোনটা প্রয়োজনীয় আর কোনটা অপ্রয়োজনীয়। আর অবশ্যই প্রয়োজনীয় কাজের পাশাপাশি বিনোদনের অংশটুকুও আমাদের ভাবা উচিত। জরুরী কাজ, বিনোদন এবং নেটওয়ার্কিং এই বিষয়েও তাকে মোবাইল দেওয়া উচিত। এরপরও যদি সে অপ্রয়োজনীয় ভাবে চালায়, সেটা তার সঙ্গে কথা বলে বুঝানো উচিত।

দুই দিক থেকে কথা বলে যদি দেখা যায় সে তাও মোবাইল নিয়ে বিরক্ত করছে তখন অনেক সময় আমাদের কম্প্রোমাইজ বা নিজেদের অবস্থানও পরিবর্তন করতে হবে। তাকে সময়ের সঙ্গে বুঝাতে হবে, তাকে যে সমর্থন দেওয়া হচ্ছে, তখন আশা করি সেও সাহায্য করবে। সেও বলবে সে কোনটা পারবে, কোনটা পারবে না, কোনভাবে কী করা যায়। আবার আমাদের তাদের বিকল্প বিনোদনের বিষয়ও নিশ্চিত করতে হবে। তাদের বন্ধু-বান্ধবের সঙ্গে দেখা করার সুযোগ দিতে হবে। তাদের খেলার ব্যবস্থা করে দিতে হবে। এরপরও যদি তার মোবাইল আসক্তি না কমে তাহলে একটা মনোরোগ বিশেষজ্ঞের সঙ্গে দেখা করে তাকে কাউন্সিলিং করা প্রয়োজন। দরকার পড়লে তাকে ঔষধ সাজেস্ট করতে হবে। প্রয়োজনে সাইকো থেরাপি দিতে হবে।

স্বজনহারাদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য পেতে দেখুন: কথা বলো কথা বলি
করোনা বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য ও নির্দেশনা পেতে দেখুন: করোনা ইনফো
মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক মনের খবর এর ভিডিও দেখুন: সুস্থ থাকুন মনে প্রাণে

“মনের খবর” ম্যাগাজিন পেতে কল করুন ০১৮ ৬৫ ৪৬ ৬৫ ৯৪

Previous articleবৃদ্ধ বয়সে মনোকষ্টের ভার
Next articleদাম্পত্য, যৌন সম্পর্ক এবং প্যানিক ডিজঅর্ডার

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here