পরিবর্তনশীল ঋতু অনেকের পছন্দ হলেও কিছু কিছু ক্ষেত্রে তা অনেক ঝামেলাও নিয়ে আসে সঙ্গে করে। বিশেষ করে শীতকালে (Winter)। শীতকাল অনেকের পছন্দের ঋতু। শীত এলেই পরিবেশে আর্দ্রতা বাড়তে থাকে। কিন্তু সেই আর্দ্রতায় ব্যাকটেরিয়া, ছত্রাকের মতো অণুজীবগুলি বৃদ্ধির ভালো সুযোগ পায়। ফলে এই সব জীবাণু মানুষের মধ্যে অনেক রোগের জন্ম দেয়। আবার এর পাশাপাশিই শীতের আগমনে শরীরেও অনেক পরিবর্তন ঘটে। শরীরের প্রয়োজনীয় অঙ্গগুলিকে উষ্ণ রাখতে আরও শক্তির প্রয়োজন হয়। এর জন্য অনেক ধরনের ঘাটতি ও রোগ হতে থাকে এবং আমরা অসুস্থ হয়ে পড়ি। তাই শীতে বিশেষভাবে সতর্ক থাকতে বলেন চিকিৎসকরা।
শীত ও মানসিক সমস্যা
শারীরিক অসুখ ছাড়াও ঋতু পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে কিছু মানুষ মানসিক রোগেও (Psychological Problem) মানুষ আক্রান্ত হতে পারেন। আর এই ঘটনা খুবই স্বাভাবিক একটা বিষয়। একে সিজনাল অ্যাফেক্টিভ ডিসঅর্ডার (Seasonal Affective Disorder) বা সংক্ষেপে এসএডি বলা হয়। বাংলায় মৌসুমী বিষণ্ণতা বলতেই পারেন।
এসএডি কী?
সাধারণত শীতকালে এসএডি রোগ দেখা দেয়। এই রোগের কারণে মানুষ হতাশ বোধ করতে শুরু করে এবং স্বাভাবিক ভাবেই তার হাত ধরে আসতে থাকে বিষণ্ণতা। বিজ্ঞানীরা বলছেন, আমেরিকায় ১ কোটির বেশি মানুষ মৌসুমী বিষণ্ণতায় অর্থাৎ এসএডি রোগে ভুগছেন। আবার ২.৫ কোটির বেশি মানুষের মধ্যে মৌসুমী বিষণ্ণতার হালকা লক্ষণগুলি দেখা যায়। তাই সেক্ষেত্রে তাকে এস এ ডি না বলে উইন্টার Blues বলা যেতে পারে।
কী কী কারণে মৌসুমী অবসাদ হয়?
ঋতুগত বিষণ্ণতার কারণ সম্পর্কে সঠিক তথ্য না থাকলেও বিজ্ঞানীরা বিশ্বাস করেন যে, ঋতু পরিবর্তনের (Season Change) সঙ্গে সঙ্গে মানুষের শরীরে কিছু হরমোনের তীব্র পরিবর্তন ঘটে যা মেজাজকে প্রভাবিত করে। ফলে সময় বিশেষে মানুষ না চাইলেও বিষণ্ণ বোধ করেন, হতাশায় ভোগেন। আবার কিছু কিছু জায়গায় এমনটাও মনে করা হয়, শীত কালে সূর্যের আলো না থাকায় মস্তিষ্কে সেরোটোনিন রাসায়নিক কম হয়ে যায়, যার কারণে মেজাজ ক্ষিপ্ত বা বিষণ্ণ হতে শুরু করে।
মৌসুমী বিষণ্ণতার ফলে কী কী হতে পারে?
১) মৌসুমী বিষণ্ণতার কারণে কোনও ব্যক্তি গভীর বিষণ্ণতায় ডুবে যেতে পারেন।
২) কিছু ক্ষেত্রে মানুষের ওজনও বাড়তে থাকে।
৩) মানুষের মনে দুঃখ, হতাশা এবং বিরক্তি বৃদ্ধি পায়।
৪) মানুষ ক্লান্ত বেশি থাকে।
৫) কিছু মানুষের খিদে বেশি পেতে পারে।
৬) অনেক সময়ে দেখা যায় যে, মানুষ কোনও কিছুতেই মন বসাতে পারছে না।
৭) বিশেষ কিছু ক্ষেত্রে মানুষ একা থাকতে পছন্দ করে। ছবি সৌজন্যে: পিক্সেলস
ঋতুকালীন অবসাদ মোকাবিলা করা যায় কী ভাবে?
বিভিন্ন মানুষের বিষণ্ণতার বিভিন্ন উপসর্গ থাকে। তাই এটি মোকাবিলা করারও উপায় হয় ভিন্ন। দেখে নেওয়া যাক সেগুলি কী কী-
১) ঋতুগত বিষণ্ণতার কারণ শরীরে আলোর অভাব বলে মনে করা হয়। এ জন্য চিকিৎসকরা হালকা থেরাপির পরামর্শ দেন।
২) মেঘ কেটে রোদ বের হলে অবশ্যই হাঁটতে বের হবেন। তেমন বৃষ্টি না হলে বা আকাশ অংশত মেঘলা থাকলেও হাঁটতে বেরোনো উচিত।
৩) অন্তত পক্ষে ১০ থেকে ১৫ মিনিট রোদে বসুন রোজ। নিয়ম করে। এর পর ধীরে ধীরে সেই সময় বাড়িয়ে ৩০ থেকে ৩৫ মিনিট করার চেষ্টা করুন।
৪) নিয়মিত অন্তত আধ ঘণ্টা করে যে কোনও রকম ব্যায়াম করুন।
৫) নিজেকে যতটা বেশি সম্ভব কাজে মগ্ন রাখুন।
মোদ্দা কথা, মন যতই বিষণ্ণ হোক, সেই বিষণ্ণতার পারদকে চড়তে দেবেন না। মন খুলে কথা বলুন। টিভি দেখুন, বই পড়ুন, বন্ধুদের সঙ্গে গল্প করুন। বেরিয়ে পড়ুন রাস্তায়। একলাটি চুপ করে ঘরের কোণে আটকে থাকবেন না। জীবন উপভোগ করুন শীতকালীন রোদের আলোয়।
সুত্রঃ ইন্টারনেট
করোনায় স্বজনহারাদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য পেতে দেখুন: কথা বলো কথা বলি
করোনা বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য ও নির্দেশনা পেতে দেখুন: করোনা ইনফো
মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক মনের খবর এর ভিডিও দেখুন: সুস্থ থাকুন মনে প্রাণে
[poll id=”2″]