শিশু মনে দেশপ্রেমের ভাবনা

শিশু মনে দেশপ্রেমের ভাবনা
শিশু মনে দেশপ্রেমের ভাবনা

আপনার ঘরের ছোট্ট শিশুটি যে আগামী প্রজন্মের একজন কখনও ভেবেছেন? এই শিশুটিই যে ভবিষ্যতে দেশের একজন সুনাগরিক হিসেবে দায়িত্ব পালন করবে এমন করে ভেবেছেন কখনও? হয়তো আপনি আমি থাকবো না, কিন্তু আমাদের শিশুরা এই দেশটাকে চালাবে, আমাদের প্রিয় দেশটাকে আমরা তার হাতেই তুলে দিয়ে যাবো। আমরা কি তাকে সেইভাবে প্রস্তত করতে পারছি? অথবা শিশুর মাঝে দেশাত্নবোধ জাগ্রত করতে বাবা মায়ের ভূমিকা কতটুকু – কখনও একটু সময় নিয়ে ভেবে দেখেছি? কয়েকটি প্রশ্নের আলোকে বিষয়গুলো ব্যাখ্যা করছি-

শিশুদের মানসিক বিকাশের সময়ে দেশপ্রেম তৈরীতে বাবা মায়ের ভূমিকা আছে কি?
একটি শিশু যখন শারীরিক ভাবে একটু একটু করে বড় হয়ে ওঠে, তার মনটাও যে একটু একটু করে বড় হয়। বাড়ন্ত শরীরের যেমন পুষ্টি প্রয়োজন, তেমনি বেড়ে ওঠা মনের জন্যও প্রয়োজন নানা রকমের উপাদান। ঠিক তেমনই একটি বিষয় হলো দেশপ্রেম। বিভিন্ন বয়সের সাথে সাথে বিভিন্ন ভাবে তাদের মনের মাঝে গেঁথে দিতে হয় দেশের ইতিহাস, দেশের গর্বগাঁথা, দেশের প্রতি কর্তব্য ও দেশের মর্যাদা সমুন্নত রাখার অঙ্গীকার।

কিভাবে খেলার ছলে শিশুদের শেখাবেন দেশের প্রতি ভালোবাসা?
একেক বয়সে একেকভাবে দেশের প্রতি ভালোবাসা শেখানো যায়। যেমন – স্কুল শুরু করেছে যেই শিশুটি সে যখন চিত্রাংকন করে, জাতীয় পতাকাটি যখন রং করবে, এটা বাংলাদেশের পতাকা,আমার দেশের পতাকা এই তথ্যটুকু তাকে দেয়া যেতে পারে। আবার বিশেষ দিবসগুলোতে বাড়ির ছাদে পতাকা ওড়ানোর অভ্যাস করুন এবং শিশুদের কে এ ক্ষেত্রে সাথে রাখুন এবং তারা আপনাকে এই কাজে যখন সাহায্য করবে, তখন আপনা আপনিই দেশের প্রতি ভালোবাসা জন্মাবে৷ আরেকটু বড় হলে বিভিন্ন দিবসের ইতিহাস গল্পের ছলে বলা যেতে পারে। দেশের বীর সন্তানদের গল্প করুন। তাদের বীরত্বগাঁথার গল্প শোনাতে পারেন। জাতীয় নেতৃবৃন্দের পরিচয় দিন। ঐতিহাসিক স্থানগুলোতে বেড়াতে নিয়ে যান বাচ্চাদের। অল্প অল্প করে স্থানগুলো সম্পর্কে বলতে পারেন। দেশের প্রতি ছোট ছোট দায়িত্বের কথা বলতে পারেন। যেমন – করোনা ভাইরাসের কথাই ধরুন না। তাকে বোঝান বাইরে গেলে সে নিজে তো আক্রান্ত হতেই পারে, পাশাপাশি তার কাছ থেকে আরেকজন মানুষ ও আক্রান্ত হতে পারে, এভাবে সারা দেশে ছড়িয়ে পড়তে পারে এই রোগ। তাই সবাই মিলে ঠেকাতে হবে এই রোগের বিস্তার। এভাবে দেশের প্রতি দায়িত্ববোধ জেগে ওঠে একটি শিশুর মাঝে। মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস তাদের কে পর্যায়ক্রমে জানান। তারা জানবে আমরা কিভাবে স্বাধীন হয়েছি। আমাদের মুক্তিযোদ্ধারা দেশকে কিভাবে স্বাধীন করেছে। তাদের মনে গেঁথে যাবে, জীবন দিয়ে হলেও দেশ বাঁচাতে হয়।

দেশ সম্পর্কিত নেতিবাচক বিষয়গুলো কি শিশুদের সামনে উপস্থাপন করা যাবে?
দেশ সম্পর্কিত অনেক নেতিবাচক বিষয় ই অনেক সময় আলোচনায় উঠে আসে বা শিশুর গোচরীভূত হয়। এক্ষেত্রে তাকে বোঝাতে হবে একটি দেশ কখনও খারাপ হতে পারেনা। দেশের মানুষ দেশের প্রতি দায়িত্বশীল না থাকলে একটি দেশ খারাপ রূপ নেয়। দেশের মানুষই পারে দেশকে ভাল ভাবে উপস্থাপন করতে।

কিশোর বয়সে দেশপ্রেমের ভাবনায় কোন পরিবর্তন আসে কি?
একটি কিশোর মন যেন হাজারো রং এর খেলা। কিশোর মনে হাজারো কুঠুরি, হাজারো দরজা-জানালা৷ কত কিছু আসে যায় সেই মনে! কখনও সেই মন বিদ্রোহী কখনও আত্মত্যাগী। ভীষণ ভাবে আবেগ খেলা করা কিশোর মনে দেশপ্রেম ধরা দেয় নানা ভাবে। কখনও মনে হয় এই দেশ ভালো না, এই দেশে থাকা যাবে না, সব ধ্বংস করে দিই৷ তাকে প্রকৃত তথ্য দিন, তার আবেগের মূল্যায়ন করুন। ধমক দিবেন না। ঠিক বিশ্লেষণ করুন৷ তার মধ্যে ভাল-মন্দ, উচিৎ-অনুচিৎ বিশ্লেষণের ক্ষমতা তৈরী করুন। কখনও মনে হয় এই মুহুর্তেই দেশের জন্য অনেককিছু করে ফেলব। তাকে ধাপে ধাপে অগ্রসর হওয়া শেখান। আবেগ আর বাস্তবতার সঠিক মিশেল একজন কিশোরকে নিয়ন্ত্রিত আচরণ ও শেখায়।

পুরো জাতি এখন একটি কঠিন সময়ের মধ্য দিয়ে অতিবাহিত করছি। আমরা করোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে নতুন এক যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়েছি। এ এক অন্যরকম যুদ্ধ। ঘরে বসে থাকার ধৈর্যের এক কঠিন পরীক্ষাও বটে। সেই সাথে আজ ২৬শে মার্চ, মহান স্বাধীনতা দিবস। ঘরে বসে আছি আপনি, আমি, সাথে পরিবারের ছোট্ট শিশুরা। আজকের এই মহান দিনে নিজেরা একটু করোনামুক্ত হয়ে শিশুদের স্বাধীনতা দিবসের গল্পটা বলেছেন একবারও?

Previous articleকরোনাভাইরাস: ঘরে থাকার দিনগুলিতে যা করতে হবে
Next articleকরোনা: মানসিক চাপ মুক্ত থেকে ঘরে থাকার দিনগুলি হোক আনন্দময়
মনোরোগ বিশেষজ্ঞ , ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here