বাচ্চাদের অবসাদ চিহ্নিত করার উপায়
- খিটখিটে ভাব
- অভিভাবক বা পরিচর্যাকারীদের সঙ্গে একেবারে সেঁটে থাকা
- মাঝে মাঝেই আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়া
- খাদ্যাভ্যাস বা ঘুমের ক্ষেত্রে বড় ধরনের পরিবর্তন
- স্কুলে যেতে না চাওয়া; পড়াশোনায় আগ্রহ হারানো
- বন্ধুদের সঙ্গে খেলতে না চাওয়া
- মাঝে মাঝে পেটে ব্যথা বা মাথা ব্যথা, যা চিকিৎসা করলেও ঠিকঠাক
সারে না
এক্ষেত্রে মনে রাখা জরুরি যে অনেকসময়ে এরকম আচরণ বেশ কিছু ঘন্টা বা দিন ধরে চলতে থাকে। যদি কোনও অভিভাবক ২ থেকে ৩ সপ্তাহ ধরে একনাগাড়ে তার বাচ্চার আচরণে অস্বাভাবিকতা দেখতে পায় তাহলে বুঝতে হবে বাচ্চা মানসিক অবসাদে আক্রান্ত হয়েছে। সমস্যাটা ঠিকঠাক বোঝার জন্য বিশেষজ্ঞের সাহায্য নেওয়াই যুক্তিযুক্ত।
বয়ঃসন্ধিদের অবসাদ চিহ্নিত করার উপায়
- ঘুম এবং খিদে বোধের পরিবর্তন
- বিষণ্ণ মনোভাব
- হামেশাই মেজাজ-মর্জির বদল
- আনন্দের কাজগুলোতে আগ্রহ হারিয়ে ফেলা
- খুব সহজেই কান্ত বোধ বা অধিকাংশ সময়ে আলস্য বোধ করা
- মারমুখী আচরণ
- সবসময়ে নিজের মৃত্যুর কথা ভাবা (যদি আমি মরে যেতাম, জীবনটা যেন দুর্বিষহ হয়ে উঠছে)
- আত্মহত্যার কথা বলা বা আত্মহত্যার চেষ্টা করা
অবসাদগ্রস্ত এবং উদ্বেগরত বাচ্চারা স্কুলে যেতে চায় না; কোনওরকম অসুখ না হলেও তারা সারাদিন বাড়িতেই থাকতে চায়। এইসময়ে তারা এমন কাজ যাতে সক্রিয় অংশগ্রহণের প্রয়োজন হয় না, যেমন টিভি দেখতে বা গান শুনতে পছন্দ করে। তারা ক্রমশ অনিয়মিত রুটিনে অভ্যস্ত হয়ে পড়ে। পড়াশোনা এড়িয়ে চলে। এর প্রভাব পরীক্ষার ফলাফলের উপর পড়ে। আর এজন্য তাদের মানসিক উদ্বেগ আরও বেড়ে চলে। এইসময়ে বাচ্চাদের মনে হয় যে তারা একটা বদ্ধ জীবনে জড়িয়ে পড়েছে।
বয়ঃসন্ধির সময়ে এই আচরণ বেশ কিছু ঘন্টা বা দিন ধরে চলতে থাকে। এই সমস্যা ২-৩ সপ্তাহ ধরে চলতে থাকলে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।
একদম বাচ্চা বয়সে যাদের মধ্যে বিকাশজনিত সমস্যা অর্থাৎ কথা বলতে দেরি হওয়া, ভাষাগত প্রতিবন্ধকতা, বৌদ্ধিক অক্ষমতা বা অটিজম থাকে তাদের ক্ষেত্রে অবসাদ এবং উদ্বেগের লক্ষণ প্রকাশ নাও পেতে পারে। তখন সঠিক রোগ নির্ণয় বা চিহ্নিত করা খুবই অসুবিধাজনক হয়ে ওঠে। যদি অভিভাবকরা তাদের সন্তানের মধ্যে এসব অস্বাভাবিকতা দেখতে পায় তাহলে তাদের উচিত অবিলম্বে মানসিক স্বাস্থ্যের বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া।
নীচের বিকাশজনিত অব্যবস্থাগুলো দেখা দিলে একজন অভিভাবক বুঝতে পারবে যে তার বাচ্চার মানসিক অবসাদ বা উদ্বেগের সমস্যা হয়েছে-
স্বাভাবিক অবস্থা | যখন বিশেষজ্ঞের সাহায্য প্রয়োজন |
দু-বছর বয়সে বাচ্চার খুব রেগে যাওয়া (বিকাশগতভাবে সঠিক) | আট বছর বয়সে হামেশা রাগারাগি করা (বিকাশগতভাবে সঠিক নয়) |
বাচ্চার মধ্যে আনন্দ ও দুঃখের সহাবস্থান; কোনও বিশেষ ক্ষেত্রে ভয়, কিন্তু তাতে তাদের কাজকর্ম ক্ষতিগ্রস্ত হয় না | ভয়ের প্রভাব- ১। শিশুর নিজস্ব কাজকর্মে বাধা। বাচ্চারা খেতে, ঘুমাতে বা নিজেদের যত্নের ক্ষেত্রে অনিয়ম করে। ২। বাচ্চারা সমাজে মেলামেশা করতে চায় না। বন্ধুদের সঙ্গে খেলতে চায় না বা পরিবারের সঙ্গে সময় কাটাতে চায় না। পারিপার্শ্বিক জগৎ থেকে তারা নিজেদের দূরে সরিয়ে নেয়। |
অস্বাভাবিক আচরণ কয়েক ঘন্টা বা দিন অথবা ২-৩ সপ্তাহ ধরে চলতে থাকে। |
উদ্বেগ ও অবসাদের চিকিৎসা
বাচ্চাদের যদি অল্প বা মাঝারি ধরনের অবসাদ এবং উদ্বেগের সমস্যা হয় তাহলে তা থেরাপি অথবা অন্য চিকিৎসায় সেরে যায়। থেরাপির মধ্যে আর্ট অ্যান্ড প্লে থেরাপি খুবই কার্যকরী। একটু বড় বয়সের বাচ্চা এবং বড়দের ক্ষেত্রে কগনিটিভ বিহেভায়র থেরাপি (সিবিটি) বা সমগোত্রীয় অন্যান্য থেরাপি অত্যন্ত উপকারী।
শিশু ও বয়ঃসন্ধিদের মাঝারি অবসাদ ও উদ্বেগের জন্য প্রাথমিকভাবে থেরাপিই ভালো ফল দেয়।
বাচ্চাদের গুরুতর অবসাদ বা উদ্বেগের ক্ষেত্রে থেরাপির সঙ্গে প্রয়োজন হয় ওষুধের। সাধারণত বড়দের তুলনায় বাচ্চা বা বয়ঃসন্ধির ছেলে-মেয়েদের কম মাত্রার ওষুধ দেওয়া হয়। যদি মনোরোগ বিশেষজ্ঞ কোনও শিশুকে ওষুধ খেতে দেয় তাহলে অভিভাবকদের কাছে তার পরামর্শ থাকে যে মাঝে মাঝে ডাক্তারের কাছে এসে বাচ্চাকে দেখাতে হবে ও ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সম্পর্কে নজর রাখতে হবে।
যদি মনোরোগ বিশেষজ্ঞের দেওয়া ওষুধ নিয়ে কোনওরকম চিন্তা থাকে তাহলে তা অবিলম্বে সাইকিয়াট্রিস্টের সঙ্গে আলোচনা করে অন্য ওষুধ দেওয়ার কথা ভাবতে হবে।