শিশুর অনাকাঙ্খিত আচরণ ও আমাদের করণীয়

ডা. মাহাবুবা রহমান

শিশু ছেলে সিয়ামকে নিয়ে ইদানিং খুব টেনশনে আছেন সেলিম সাহেব। সিয়ামের বয়স এই জুলাইয়ে ৭ বছর হয়েছে৷ ইদানীং ভীষণ জেদ করে সিয়াম।

শিশু সিয়ামের জেদগুলো তার বিভিন্ন শখ পূরণ নিয়ে৷ যেমন- গত দুই মাস আগে সে একটা সাইকেলের বায়না করেছিল। সেলিম সাহেব সেটি যথাসময়ে কিনে দিতে না পারায় ওনার ব্যবহৃত মোবাইল ফোনটি আছাড় দিয়ে ভাংগে সিয়াম। এদিকে আবার খাওয়া-দাওয়াও বন্ধ করে দেয়। বাধ্য হয়ে সেলিম সাহেব ছেলেকে সাইকেল কিনে দেন।

জন্মদিন উপলক্ষে নতুন বায়না ধরেছে সিয়াম। গেম খেলার জন্য ট্যাব কিনে দিতে হবে তাকে। কিন্তু আপাতত ট্যাব কেনার মত টাকা সেলিম সাহেবের নেই। যথাসময়ে ট্যাব কিনে দিতে না পারলে শিশু ছেলে আবার কী কান্ড ঘটায় সেই টেনশনে রাতে ঘুম হয় না সেলিম সাহেবের৷

শিশু সিয়ামের এই লাগামছাড়া চাহিদা একদিনে তৈরি হয়নি। বাবা মায়ের একমাত্র সন্তান সিয়াম, সেজন্য আদর করতে কখনো কার্পন্ন করেনি দুজনের কেউই। সেলিম সাহেব একটা মোটামুটি বেতনের প্রাইভেট কোম্পানিতে চাকুরী করেও ছেলের সব শখ পূরণ করে এসেছেন।

ছোটবেলায় সিয়ামের শখগুলো ছিল ছোট ছোট। তাই সেগুলো পূরণ করতে গায়ে লাগত না সেলিম সাহেবের৷ কিন্তু আস্তে আস্তে যত বড় হতে লাগল সিয়াম, ওর শখগুলোও যেন বড় হতে লাগল। একসময় বাধ্য হয়ে সেলিম সাহেব তার সন্তানের আবদারে “না” বসাতে শুরু করলেন৷

কিন্তু শিশু সিয়াম তো “না” শুনে অভ্যস্ত না। আকস্মিক বাবার আচরণগত পরিবর্তনে সিয়ামের মধ্যেও আসল বিশাল পরিবর্তন। বাসার জিনিসপত্র ভাংচুর, বাবাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ কিংবা মেহমানদের সামনে মাটিতে গড়িয়ে গড়িয়ে চিৎকার- কিছুই বাদ থাকল না।

উপায়ন্তু না দেখে, নিজের মান সম্মানের কথা চিন্তা করে সেলিম সাহেব ধার-কর্য করে হলেও শিশু ছেলের আবদার পূরণ করতে লাগলেন। প্রতিবারই ভাবতেন এই বুঝি শেষ, এরপর থেকে হয়ত ছেলে আর এমন বায়না করবে না। কিন্তু সেলিম সাহেবের ধারণা ভুল প্রমান করে যত দিন যাচ্ছিল সিয়ামের বায়নাগুলো যেন ততই আকাশছোঁয়া হতে লাগল।

আসলেই কি বাচ্চার সব আবদার পূরণ করলেই বাচ্চা বাবা-মার কথা শুনবে? সাইকোলজি কি তাই বলে? চলুন জানা যাক।

রিইনফোর্সমেন্ট (Reinforcement), পানিশমেন্ট (Punishment) এবং বিহেভিয়ার মডিফিকেশন:

সাইকোলজিতে একটা টার্ম আছে, “লার্নিং” (Learning)। আমাদের আচার আচরণ এবং আচরণগত পরিবর্তন সবই নির্ভর করে লার্নিং এর উপর৷ এই লার্নিং এর অনেকগুলো পদ্ধতি আছে৷ তার মধ্যে একটি পদ্ধতি হল রিইনফোর্সমেন্ট (Reinforcement)। যেকোন আচরণ বৃদ্ধি করার একটি উপায় হচ্ছে রিইনফোর্সমেন্ট ।

উপরের কেস স্টাডিতে সিয়াম যখন তার আবদার পূরণ হচ্ছিল না দেখে বিভিন্ন অনাকাঙ্খিত আচরণ দেখানো শুরু করল, সেলিম সাহেব তখন ছেলেকে থামাতে কষ্ট করে হলেও তার আবদার পূরণ করতে লাগলেন (রিইনফোর্সমেন্ট)। এতে করে রিইনফোর্সমেন্টের মাধ্যমে সিয়ামের মধ্যে এই লার্নিংটা তৈরি হয় যে, কোন কিছু পেতে হলে জিনিসপত্র ভাংচুর, গালিগালাজ কিংবা মাটিতে গড়াগড়ি খেলেই হয়। ফলে পরবর্তীতে সে যখনই কোন বায়না করে সেটা পেতনা, তখনই এ ধরনের অপ্রীতিকর আচরণের আশ্রয় নিত (আচরণ বৃদ্ধি)।

রিইনফোর্সমেন্ট এর ভুল প্রয়োগের মাধ্যমে যেমন একটা ভুল আচরণ বৃদ্ধি করা সম্ভব, তেমনি রিইনফোর্সমেন্টের সঠিক প্রয়োগের মাধ্যমে শিশুর মধ্যে সঠিক বা ‘কাঙ্খিত আচরণ’ বৃদ্ধিও সম্ভব। শিশুর আচরণগত পরিবর্তন তথা বিহেভিয়ার মডিফিকেশন থেরাপীতে ঠিক এই ব্যাপারটাই প্রয়োগ করা হয়।

রিইনফোর্সমেন্টের মত আচরণগত পরিবর্তন আনার আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হচ্ছে পানিশমেন্ট (Punishment)। পানিশমেন্টের উদ্দেশ্য যেকোন ‘অনাকাঙ্খিত আচরণ’ দূর করা। রিইনফোর্সমেন্ট এর মাধ্যমে কাঙ্খিত আচরণ বৃদ্ধি কিংবা পানিশমেন্ট এর মাধ্যমে অনাকাঙ্খিত আচরণ দূর করা, এই দুটোর জন্যই প্রয়োজন কোন একটি স্টিমুলাসের উপস্থিতি অথবা অনুপস্থিতি। শিশুর মধ্যে আচরণগত পরিবর্তন আনার যে স্ট্যাটেজি, সেটি মূলত এই রিইনফোর্সমেন্ট এবং পানিশমেন্ট থিওরীর উপর ভিত্তি করে বানানো।

একটা উদাহরণ দিলে বিষয়টি পরিষ্কার হবে৷ ধরুন, আপনি চাচ্ছেন আপনার শিশুটি প্রতিদিন সন্ধ্যার পর দুই ঘন্টা পড়াশুনা করুক। কিন্তু বহুবার বলার পরেও সে এই কাজটা করছে না৷ এখানে শিশুর পড়তে বসাটা হচ্ছে আপনার কাঙ্খিত আচরণ অর্থাৎ যেই আচরণটা আপনি বাচ্চার থেকে আশা করছেন।

এই কাঙ্খিত আচরণ বাড়ানোর জন্য আপনি দুটা কাজ করতে পারেন- ধরা যাক, আপনার শিশু কোন একটি নির্দিষ্ট খাবার খেতে খুব ভালোবাসে। সেক্ষেত্রে বাচ্চাকে বলতে পারেন, সে যদি আজকে থেকে প্রতিদিন সন্ধ্যায় পড়তে বসে তাহলে এই সপ্তাহ শেষে শুক্রবার বিকেলে আপনি তাকে তার পছন্দের খাবারটি বানিয়ে দেবেন।

এখানে শিশুর পছন্দের খাবার হচ্ছে সেই স্টিমুলাস যেটার মাধ্যমে আমরা বাচ্চার কাঙ্খিত আচরণটা বাড়াতে চাচ্ছি। এটাকে বলা হচ্ছে পজেটিভ রিইনফোর্সমেন্ট (Positive reinforcement)।

আবার ধরা যাক, প্রতিদিন রাত ১০টায় টিভিতে আপনার শিশু তার ভীষণ পছন্দের একটা কার্টুন দেখে। এখন আপনি বাচ্চাকে বলতে পারেন, তুমি যদি সন্ধ্যার পর পড়তে না বসো তাহলে ১০ টার সময় যে কার্টুনটা দেখো, সেটা আর দেখতে দেয়া হবে না৷

এখানে পড়তে না বসাটা হচ্ছে সেই অনাকাঙ্খিত আচরণ যেটা দূর করার জন্য আপনি আপনার শিশুর একটি পছন্দের জিনিস/স্টিমুলাস তার থেকে সরিয়ে নিচ্ছেন। এটাকে বলা হচ্ছে নেগেটিভ (যেহেতু সরিয়ে নেয়া হচ্ছে) পানিশমেন্ট (Negative punishment)।

এখানে কয়েকটি বিষয় মনে রাখা প্রয়োজন

পানিশমেন্ট হবে immediate. অর্থাৎ শিশু সন্ধ্যায় পড়তে বসল না, আপনি ঠিক সেই রাতেই কার্টুন দেখতে দিলেন না। বাচ্চা আজ আপনার কথা শুনল না, আপনি ১ মাস পর তাকে খুব বকা দিলেন এই বলে যে, অমুক দিন তো আমার কথা শোননি! তাহলে কোন লাভ নেই।

অন্যদিকে শিশুকে রিইনফোর্সমেন্ট বা পুরস্কার দেয়ার বেলায়ও আপনার কথার যেন হেরফের না হয়। অর্থাৎ তাকে তার পছন্দের জিনিস যেদিন দিবেন বলেছেন, সেদিনই দিবেন। তার একদিন আগেও না, পরেও না৷

অনেক সময় শিশু আপনাকে শর্ত দিবে, আগে জিনিসটা দাও, তাহলে আমি কাজটা করব। কিন্তু এমন কিছু করা যাবে না। বাচ্চা রিওয়ার্ড বা পুরস্কার পাবে কাঙ্খিত আচরণ করার পর, তার আগে না এবং পুরস্কার হবে এমন কিছু যেটা বাচ্চার পছন্দ এবং তার বয়স অনুপাতে সঠিক।

অর্থাৎ আপনি যদি বাচ্চাকে আপনার যেটা পছন্দ সেটা কিনে দেন কিন্তু সেটা হয়ত বাচ্চার পছন্দ না কিংবা ৫ বছরের শিশুকে একটা মোবাইল কিনে দেন তাহলে সেটা সঠিক পুরস্কার হবে না। কখনো এমন কিছু দেয়ার প্রমিস করবেন না যেটা আপনি পরে পূরণ করতে পারবেন না বা কখনো মিথ্যা প্রমিসও করবেন না। এতে করে বাচ্চা আপনার প্রতি বিশ্বাস হারিয়ে ফেলবে৷

বিহেভিয়ার মডিফিকেশন থেরাপির ক্ষেত্রে বাসার সব সদস্যের আচরণ একই হতে হবে। ইনফ্যাক্ট এটা সব পয়েন্টের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট। বিশেষ করে আমাদের মত দেশে, যেখানে যৌথ পরিবার খুব কমন। দেখা যায় হয়ত আপনি আপনার সন্তানকে নেগেটিভ পানিশমেন্ট দেয়ার জন্য টিভি রিমোট এনে নিজের কাছে রাখলেন যাতে সে তার পছন্দের কার্টুনটা দেখতে না পারে এবং এর প্রেক্ষিতে আপনার শিশু তীব্র কান্নাকাটি, চিৎকার, চেচামেচি শুরু করে দিল (যেটা খুব স্বাভাবিক)।

এদিকে বাচ্চার এই কান্নাকাটি শুনে থাকতে না পেরে শিশুর দাদী আপনার থেকে টিভি রিমোট নিয়ে দিয়ে দিল বাচ্চাকে। ফলাফল, আপনি বাচ্চার যে বিহেভিয়ারটা মডিফাই করতে চাচ্ছিলেন, তার সবটুকুই জলে তো গেলই উলটা বাচ্চার মনে এই ধারণা জন্মাল যে, মা তো আমাকে ভালবাসে না বরং আমার দাদীই আমাকে সত্যিকারের ভালবাসে!

একটা ব্যাপার মাথায় রাখবেন সবসময়, শিশুর কোন একটি অনাকাঙ্খিত আচরণে যদি নেগেটিভ পানিশমেন্ট দিয়ে থাকেন, চেষ্টা করবেন এর পরেই আবার যখন সে কোন ভাল কাজ করবে তখন সেটাতে একটা পুরস্কার দিতে। সেই পুরস্কার সবসময় বস্তুগত জিনিসই হতে হবে এমন না। পুরস্কার হতে পারে আপনার আদর কিংবা প্রশংসা।

অর্থাৎ শিশু যেন নিজেই পার্থক্যটা ধরতে পারে যে আমি যখন কথা শুনছি না বা খারাপ আচরণ করছি, কেবল তখনই মা আমাকে শাস্তি দিচ্ছে কিন্তু যখন ভাল কিছু করি তখন মা আমাকে আদর করে। নতুবা বাচ্চার মনে হতে পারে যে তার বাবা মা কেবল তাকে শাস্তিই দেয় এবং এটা ভেবে বাচ্চার মধ্যে আরো বেশি হতাশা এবং হতাশা থেকে ভুল আচরণ তৈরি হবে।

সর্বোপরি ধৈর্য্য ধারনের বিকল্প নেই। কারণ, বিহেভিয়ার মডিফিকেশনের পুরো ব্যাপারটাই অনেক বেশি সময়সাপেক্ষ। আপনি এই ধাপগুলো যখন শিশুর উপর প্রয়োগ করা শুরু করবেন তখন শুরুর দিকে আপনার বাচ্চা আরো বেশি জেদ করবে, আগের চেয়েও বেশি অবাধ্যতা দেখাবে এবং বেশিরভাগ বাবা-মাই এই সময়টাতে ধৈর্য্য হারিয়ে বসেন।

মনে রাখবেন, বাচ্চা যাই করুক ধৈর্য্য হারানো যাবে না। যেটা একবার ‘না’ বলবেন, সেটা যেন কখনো ‘হ্যা’ না হয়। আবার যেটাতে পুরস্কার দিবেন বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, সেই প্রতিশ্রুতি যেন রক্ষা হয়। যদি আপনি আপনার এই স্ট্রাটেজিতে অনড় থাকতে পারেন তবে কিছু সময় বেশি লাগলেও শেষ পর্যন্ত লাভবান হবেন আপনিই।

পজেটিভ পানিশমেন্ট কেন নয়?

আলোচনায় আপনাদের মনে একটা প্রশ্ন জাগতে পারে যে পানিশমেন্টের ক্ষেত্রে আমরা কেন পজেটিভ পানিশমেন্ট (যেমন- বকা দেয়া বা মারধোর করা) এর কথা বলছি না। এর কারণ হল এই যে, পজেটিভ পানিশমেন্টের অনেকগুলো নেতিবাচক দিক আছে।

প্রথমত, পজেটিভ পানিশমেন্ট অনেক সময় শিশুর আচরণ পরিবর্তন করার বদলে বাচ্চার মধ্যে প্রবল ভীতি বা আতংক তৈরি করে। যা পরবর্তীতে বাচ্চার মানসিক সুস্থতায় ব্যাঘাত ঘটাতে পারে।

দ্বিতীয়ত, পজেটিভ পানিশমেন্টকে ধাপে ধাপে বাড়ানোর কোন সুযোগ নেই। অর্থাৎ আপনার শিশু কথা শুনছে না বলে আপনি হয়ত তাকে একটা চড় দিলেন (যেটাতে আমরা কখনোই উৎসাহ দেই না) কিন্তু দেখা গেল এরপরও সে শুনল না৷ সেক্ষেত্রে এর চেয়ে বেশি কিছু কী আপনার করার আছে? নেই।

কিন্তু নেগেটিভ পানিশমেন্টের ক্ষেত্রে আপনি প্রথমে হয়ত তাকে কার্টুন দেখতে দিলেন না, কথা না শুনলে টিভি দেখাই বন্ধ করে দিলেন। এরপরেও কাজ না হলে আপনি তার বাইরে খেলতে যাওয়া বন্ধ করে দিতে পারেন। অর্থাৎ নেগেটিভ পানিশমেন্টে ধাপে ধাপে আপনি শাস্তির মাত্রা বাড়াতে পারেন।

তৃতীয়ত, শিশুর মধ্যে অন্যকে পানিশ করার একটা লার্নিং তৈরী হতে পারে। যার ফলে পরবর্তীতে যেকোন তুচ্ছ ব্যাপারে হয়ত সে নিজের ভাই-বোন বা ক্লাসমেটদের সাথে বকাবাজি বা গায়ে হাত তোলার মত ঘটনা ঘটাতে পারে।

সর্বোপরি, আপনার পজেটিভ পানিশমেন্টের দরুণ সন্তানের মনে আপনার প্রতি একটা নেগেটিভ ইমেজ তৈরী হতে পারে এবং এই নেগেটিভ ইমেজ থেকে পরবর্তীতে আপনার প্রতি প্রবল ভীতি অথবা তীব্র ঘৃনা জন্ম নিতে পারে।

অনাকাঙ্খিত আচরণ প্রতিরোধ

বিহেভিয়ার মডিফিকেশনের স্ট্র্যাটেজিকে বলা যেতে পারে শিশুর অনাকাঙ্খিত আচরণের প্রতিকার। কিন্তু কথায় বলে, প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধ শ্রেয়। সে হিসেবে শিশুর মধ্যে যেন কোন অনাকাঙ্খিত আচরণ তৈরিই না হয় সেজন্য অভিভাবকদের কিছু দ্বায়িত্ব আছে। যেমন-

আপনার সন্তান যে বয়সীই হোক না কেন, তাকে “কোয়ালিটি টাইম” দিন। লক্ষ্য করুন এখানে কোয়ালিটি টাইমের কথা বলা হচ্ছে, শুধু টাইম না। অর্থাৎ আপনার শিশুর হাতে একটা ফোন ধরিয়ে দিয়ে ইউটিউব চালিয়ে দিলেন আর নিজে ওর পাশে বসে বসে টিভি দেখলেন আর ভাবলেন বাচ্চার সাথেই তো আছি, এটাকে কোয়ালিটি টাইম বলে না।

শিশুর সাথে তার বয়স অনুযায়ী খেলা করুন, গল্প করুন, তার মনের কথাগুলো মনোযোগ দিয়ে শুনুন। বিশেষত সন্তান যখন কোন পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যায় যেমন- বয়সন্ধিকাল অথবা স্কুল পরিবর্তন তখন তার মানসিকতা বোঝার চেষ্টা করা খুবই জরুরী।

আপনার সন্তান বাসায় বা বাসার বাইরে যেমন- স্কুলে, কোনরকম সমস্যা বা মানসিক চাপে আছে নাকি সেটি জানার চেষ্টা করুন ও তার সমস্যা সমাধানে চেষ্টা করুন। অনেক সময় অনাকাঙ্খিত মানসিক চাপ থেকেও বাচ্চাদের মধ্যে আচরণগত সমস্যা দেখা দেয়। সেই সাথে বেশি ছোট শিশু অনেকসময় বাবা-মার মনোযোগ আকর্ষণের জন্যও অনাকাঙ্খিত আচরণ করতে পারে।

অর্থাৎ শিশু হয়ত খেয়াল করেছে সারাদিন মা কাছে আসে না, কিন্তু যখনই সে জিনিসপত্র ছুড়ছে, মা ছুটে এসে বকা দিচ্ছে। এতে করে সে এই আচরণ বারবার করতে থাকে। কারণ সে ভাবে বকার মাধ্যমে হলেও মায়ের মনোযোগ তো পাচ্ছে! এসব ক্ষেত্রেও চলে আসে সন্তানের সাথে কোয়ালিটি টাইম স্পেন্ড করার বিষয়টি।

সবসময় সন্তানের ভুল না ধরে ছোট-বড় সকল ভাল কাজের (নিজের পড়ার টেবিলটা গুছানো, খেলনা গুছিয়ে রাখা, নিজে হাত দিয়ে ভাত খাওয়া ইত্যাদি) প্রশংসা করুন, সম্ভব হলে ছোট ছোট পুরস্কার দিন। এতে করে ভবিষ্যতেও ভাল কাজের প্রতি তার আগ্রহ বাড়বে।

শিশুর সক্ষমতা অনুযায়ী তার প্রতি প্রত্যাশা রাখুন। সবসময় অন্যের সাথে তুলনা করবেন না। অন্যের সন্তান ক্লাসে ফার্স্ট হয় বলে আপনার সন্তানকেও ফার্স্ট হতে হবে এমন কোন ব্যাপার নেই। তার মেধানুযায়ী তাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখুন।

মনে রাখবেন, আমরা সবাই আমাদের সন্তানকে ভালোবাসি। কিন্তু সমস্যাটা হয় তখনই যখন আমরা জানিনা যে এই ভালোবাসার মাত্রাটা কখন, কোথায় এবং কতটুকু হওয়া উচিত। কখনো কখনো সন্তানকে ভালোবাসতে গিয়ে আমরা তার অনাকাঙ্খিত আচরণকে প্রশ্রয় দিয়ে ফেলি। আবার কখনোবা আদর্শ মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে গিয়ে মাত্রাতিরিক্ত শাসনের বেড়াজালে বেঁধে ফেলি।

কাজেই শিশুর সুন্দর আচরণ তৈরিতে সবসময় একটি মধ্যম পন্থা অবলম্বন করুন, নিজের ও সন্তানের মানসিক সুস্থতা বজায় রাখুন৷

ডা. মাহাবুবা রহমান

রেসিডেন্ট, চাইল্ড এন্ড এডোলেসেন্ট সাইকিয়াট্রি

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়।

স্বজনহারাদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য পেতে দেখুন: কথা বলো কথা বলি
করোনা বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য ও নির্দেশনা পেতে দেখুন: করোনা ইনফো
মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক মনের খবর এর ভিডিও দেখুন: সুস্থ থাকুন মনে প্রাণে

Previous articleআমাদের দুজনার বয়সের পার্থক্য অনেকটা
Next articleঅতিরিক্তি হস্তমৈথুন থেকে মুক্তির উপায়

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here