গুড টাচ হলো ভালো বা নিরাপদ স্পর্শ। যা শিশুদের নিরাপত্তাবোধ বা ভালোলাগা দেয় এবং যেই স্পর্শে বাচ্চারা কমফোর্ট ফিল করে।
আর ব্যাড স্পর্শ হলো অনাকাঙ্খিত স্পর্শ। শরীরের স্পর্শকাতর স্থানে যখন অন্য কেউ অযোচিতভাবে স্পর্শ করে থাকে তাকে অনাকাঙ্খিত স্পর্শ বলে। অনেক ক্ষেত্রেই বাচ্চারা এমনকি কিশোর-কিশোরীরাও এ ধরনের স্পর্শের বিষয়টা বা তাদের সাথে কি হচ্ছে সেটা ঠিকমত বুঝে উঠতে পারে না।
কারা অনাকাঙ্খিত স্পর্শের শিকার হয়ে থাকেন?
সাধারণত শিশু-কিশোররা এই ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত স্পর্শের শিকার হয়ে থাকে। তবে ছেলেদের চাইতে মেয়েরা বেশি অনাকাঙ্খিত স্পর্শের শিকার হয়।
কাদের দ্বারা অনাকাঙ্খিত স্পর্শের শিকার হতে হয়?
সাধারণত নিকটাত্মীয়দের দ্বারা অনাকাঙ্খিত স্পর্শের শিকার হতে হয় বেশি। যেমন- চাচা, মামা, ভাই, বোন, স্কুলের শিক্ষক, হোম টিউটর, চাচাতো, ফুফাতো, মামাতো, খালাতো ভাই এবং পাড়া বা মহল্লার দুষ্ট ছেলেদের দ্বারা শিশু-কিশোররা বেশি অনাকাঙ্খিত স্পর্শের শিকার হয়ে থাকে।
অনাকাঙ্খিত স্পর্শের মানসিক প্রতিক্রিয়া
শৈশবে এ ধরনের অনাকাঙ্খিত ঘটনা শিশু-কিশোরদের মনে গভীর ভাবে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। যেমন-
১. ব্যক্তিত্বের ত্রুটি। ২. মেয়ে শিশুর ক্ষেত্রে পরবর্তীকালে পুরুষদের প্রতি অবিশ্বাস বা নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি জন্মায়। ৩. ভয় পেয়ে থাকে। ৪. বিষণ্ণতার ভাব দেখা দেয়। ৫. দাম্পত্যে ও যৌন সম্পর্কের সমস্যা হয়ে থাকে। ৬. কনভারশন ডিসঅর্ডারে ভুগে থাকে। যেমন- ক. হাত পা অবশ হয়ে যাওয়া। খ. কথা বন্ধ হয়ে যাওয়া। গ. কাঁপুনি হওয়া। ঘ. খাবার গিলতে অসুবিধা ইত্যাদি।
কিভাবে নিরাপদ ও অনাকাঙ্খিত স্পর্শ এর পার্থক্য শিশুকে বোঝানো যাবে?
শিশুদের উপর যৌন নির্যাতন বর্তমান সমাজে যেন ব্যাধির আকার ধারণ করেছে। শুধুমাত্র কন্যা সন্তান নয় পুত্র সন্তানও হতে পারে নির্যাতনের শিকার। এজন্য অবশ্যই মানসিকতার বদল প্রয়োজন। একই সঙ্গে শিশুকেও প্রথম থেকেই শিক্ষিত করে তোলা প্রয়োজন।
আর এ দায়িত্ব প্রাথমিক ভাবে মা-বাবাকেই নিতে হবে। ছোট থেকেই নিরাপদ ও অনাকাঙ্খিত স্পর্শ এর পার্থক্য শিশুকে বুঝিয়ে দিতে হবে। শিশুর শিক্ষা যেন শুরু হয় বাড়ি থেকেই।
শিশুকে অনাকাঙ্খিত স্পর্শ সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধিতে আপনার করণীয়?
১. শিশুকে খেলার মাধ্যমে বোঝানো দরকার। ২. যে কোন কাজে তার অনুমতি নেওয়া দরকার। ৩. শিশুকে তাদের প্রাইভেট পার্ট সম্পর্কে সচেতন করুন। ৪. শরীর হলো সম্পদ বিষয়টি শিশুদের বুঝিয়ে দিন। ৫. তাদের সাথে সহজ ভাবে কথা বলুন। ৬. তাদেরকে চিৎকার করতে শেখান। ৭. শিশুর ভরসা হয়ে উঠুন। ৮. শিশুকে বুঝাতে চেষ্টা করুন সে একা নন তার সাথে আপনি আছেন।
কোন বয়স থেকে শিশুকে অনাকাঙ্খিত স্পর্শ সম্পর্কে জানাবেন?
ঠিক কোন বয়স থেকে শিশুদের নিরাপদ বা অনিরাপদ স্পর্শ সম্পর্কে কথা বলবেন তার সঠিক কোনো ধরাবাধা নিয়ম নেই। সাধারণত বলা যায়, যে বয়স থেকে বাচ্চারা আপনার কথা বুঝতে পারবে তখন থেকেই এ বিষয়ে বলা উচিত।
তবে বলা যায় মোটামুটি দুই থেকে তিন বছর বয়স থেকেই বিশেষত শিশুকে যখন অন্যের কাছে একা ছাড়বেন তখন থেকেই বিষয়টা নিয়ে অল্প অল্প কথা বলা শুরু করা উচিত।
সন্তানের অভিযোগে আপনার প্রতিক্রিয়া কেমন হওয়া দরকার?
আপনার সন্তান অনাকাঙ্খিত স্পর্শ সম্পর্কে অভিযোগ করলে সর্বোচ্চ গুরুত্ব নিয়ে তার কথা মনোযোগ দিয়ে শুনুন। এক্ষেত্রে সন্তানকে অবিশ্বাস করা বা অন্যায়কারীর পক্ষে কথা বলা থেকে বিরত থাকুন।
তার অভিযোগ গ্রহণ করুন এবং তাকে নিশ্চিত করুন এ ধরনের ঘটনা সামনে ঘটবে না। এ ধরনের ঘটনা সন্তান আপনাকে বলছে মানে আপনার কাছে সাহায্য চাচ্ছে, নিরাপত্তা চাচ্ছে। এক্ষেত্রে আপনার উদাসীনতা, অমনোযোগ ও উপযুক্ত পদক্ষেপ না নেওয়ার কারণে আপনার প্রতি শিশুর আস্থার ভিত্তি নড়বড়ে করে ফেলতে পারে।
নিরাপদ স্পর্শ হোক বা অনাকাঙ্খিত স্পর্শ হোক যেকোনো রকম স্পর্শের ভালোলাগা ও খারাপ লাগাটুকু শিশু যেন আপনার সঙ্গে শেয়ার করে সে বিষয়ে নিশ্চিত হোন। শিশুকে বোঝান আপনি ওর ভরসা ও বিশ্বাসের জায়গা।
সব সময় মনে রাখতে হবে সন্তানের অনাকাঙ্খিত স্পর্শের ভয়ে শিশুকে কারও সঙ্গে মিশতে না দেওয়া বা বাইরে খেলতে না দেওয়া ঠিক নয়। খেলাধুলা বা সামাজিক মেলামেশা শিশুর সামাজিক দক্ষতা বাড়ায়। যা শিশুর অনাকাঙ্খিত বিষয়গুলো মোকাবেলা করতে সাহায্য করে থাকে।
পরিশেষে বলবো, শিশুরা অনাকাঙ্খিত বা নিরাপদ স্পর্শের শিকার হয়ে মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়লে দ্রুত মনোচিকিৎসকের শরণাপন্ন হয়ে চিকিৎসাসেবা চালিয়ে যেতে হবে এবং এ অবস্থা থেকে রিলিভ না হওয়া পর্যন্ত নিয়মিত ফলোআপে থাকতে হবে।
আপনার সন্তানকে শারীরিক, মানসিক ও সামাজিকভাবে ভালো রাখার জন্য অবশ্যই তাকে অনাকাঙ্ক্ষিত স্পর্শ থেকে যতটা সম্ভব সজাগ দৃষ্টি দিয়ে দূরে রাখতে হবে।
মো. রিয়াজুল হক
মনোবিজ্ঞানী
স্বজনহারাদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য পেতে দেখুন: কথা বলো কথা বলি
করোনা বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য ও নির্দেশনা পেতে দেখুন: করোনা ইনফো
মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক মনের খবর এর ভিডিও দেখুন: সুস্থ থাকুন মনে