ডা. আফসানা বিনতে আনোয়ার
এমবিবিএস, এফসিপিএস-২ প্রশিক্ষণার্থী
জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইন্সটিটিউট, ঢাকা
আমাদের গ্রখমে জানতে হবে, আমরা শিশু কাদের বলছি?? ১৮ বছরের নীচে যাদের বয়স তাদের কে আমরা শিশু বলে থাকি।
সাধারণত একটি শিশুর পরিপূর্ণ বিকাশ তখনি ঘটে, যখন সেই বিকাশ টি হয়, মানসিক ও শারীরিক উভয় ভাবেই।
শিশুরা আমাদের সমাজের ভবিষ্যত। তাদের সঠিক শিক্ষা, চর্চা এবং নৈতিক উন্নতি তাদের পরবর্তী জীবন গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তবে, বর্তমানে অনেক শিশু অলসতার শিকার হচ্ছে, যা তাদের ভবিষ্যতে বিরাট ক্ষতির কারণ হতে পারে।
শিশুদের অলসভা এক ধরনের মনের অবস্থা যা তাদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য, শিক্ষা, এবং সামাজিক জীবনকে প্রভাবিত করে। অলসতা সাধারণত এমন এক পরিস্থিতি সৃষ্টি করে যেখানে শিশুরা প্রয়োজনীয় কাজ বা শখের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলে এবং একে একে উদ্যমহীন হয়ে পড়ে। এটির প্রভাব কেবল তাদের বর্তমান সময়ের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে না, বরং ভবিষ্যতের জন্যও তা ক্ষতিকর হতে পারে।
শিশুদের অলসতার কারণ:
১. টেকনোলজি ও গেমিং: আধুনিক প্রযুক্তি ও ভিডিও গেমস শিশুরা অনেক সময় বাস্তব জগত থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। তারা দীর্ঘ সময় ধরে স্ক্রীনের সামনে বসে থাকে, ফলে তাদের শারীরিক কার্যকলাপ কমে যায় এবং সৃজনশীলতা ধীর হয়ে পড়ে।
২. অতিরিক্ত আরামপ্রিয়তা: অনেক ক্ষেত্রে বাবা-মায়েরা শিশুদের জন্য সবকিছু সহজ করে দেন। যে কারণে ভারা নিজেরা কিছু করার প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলে এবং অলস হয়ে যায়।
৩. শিক্ষাগত চাপের অভাব: আজকের দিনে অনেক শিশুই সঠিকভাবে শিক্ষা পাচ্ছে না, বা তাদের উপযোগী পরিমাণে চ্যালেঞ্জিং পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হচ্ছে না। এই অভাব তাদের চিন্তা করার ক্ষমতা এবং উদ্যোগহীনতার দিকে পরিচালিত করে।
অলসতার গ্রভাব এবং ভবিষ্যৎ ক্ষতি:
১. শারীরিক স্বাস্থ্য সমস্যা: অলসতা শিশুর শরীরের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। দীর্ঘ সময় বসে থাকার ফলে তাদের শারীরিক স্বাস্থ্য যেমন ওজন বৃদ্ধি, ব্যথা, এবং অন্যান্য সমস্যা দেখা দিতে পারে।
২. মানসিক ও আধ্যাত্মিক ক্ষতি: অলস শিশুদের মধ্যে মানসিক উদ্বেগ, হতাশা এবং আত্মবিশ্বাসের অভাব দেখা দেয়। তাদের মধ্যে উদ্যোম এবং আত্মবিশ্বাসের অভাব তৈরি হয়, যা ভবিষ্যতে তাদের সাফল্যের পথে বাধা সৃষ্টি করতে পারে।
৩. সামাজিক দক্ষতার অভাব: অলস শিশুরা সাধারণত অন্যান্য শিশুদের সাথে খেলাধুলা বা যোগাযোগে অংশ নেয় না। এই কারণে তারা সামাজিক দক্ষতা অর্জন করতে পারে না, যা পরবর্তীতে তাদের সম্পর্ক এবং সহযোগিতায় সমস্যা সৃষ্টি করে।
৪. অর্থনৈতিক এবং পেশাগত প্রভাব: অলস শিশুদের মধ্যে ভবিষ্যতে কর্মসংস্থান বা শিক্ষা ক্ষেত্রে আগ্রহের অভাব দেখা যেতে পারে। এর ফলে তারা পেশাগতভাবে সফল হতে পারেন না এবং অর্থনৈতিকভাবে এক প্রকার অক্ষম হয়ে পড়ে।
সমাধান:
১. শারীরিক এবং মানসিক কার্যকলাপ: শিশুদের প্রতি নিয়মিত শারীরিক ব্যায়াম, খেলাধুলা এবং সৃজনশীল কাজের প্রতি উৎসাহিত করা দরকার।
২. তাদের সময় ব্যবস্থাপনা শেখানো: শিশুদের তাদের সময়ের সদ্ব্যবহার শেখানো এবং তাদের পড়াশোনা ও শখের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
৩. টেকনোলজি ব্যবহারের নিয়ন্ত্রণ: টেকনোলজির সঠিক ব্যবহার এবং অযথা স্ক্রীন টাইম কমানো শিশুর মনোযোগ ও কার্যক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়ক হতে পারে।
উপসংহার:
শিশুদের অলসতা শুধুমাত্র একটি ছোট সমস্যা নয়, এটি ভবিষ্যতে বড় ধরনের ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। ভাই, তাদের সঠিক সময়ে সঠিক দিশা দেখানো, উদ্বুদ্ধ করা এবং নানা ধরনের সৃজনশীল কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। একজন অভিভাবক এবং শিক্ষক হিসেবে আমাদের দায়িত্ব হল শিশুদের সঠিক পথে পরিচালিত করা, যাতে তারা ভবিষ্যতে একটি সফল, স্বাস্থ্যকর এবং আনন্দময় জীবন কাটাতে পারে।
আরও পড়ুন-