বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) চাইল্ড অ্যাডোলেসেন্ট সাইকিয়াট্রি বিভাগের রেসিডেন্ট ডা. সাদিয়া আফরিন বলেছেন, ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে করোনা সংক্রমণ শুরু হলেও ২০২০ সালের মাঝামাঝি এসে এর প্রকোপে সারা পৃথিবী প্রায় থমকে যায়। পারিপার্শ্বিক জীবন, রাষ্ট্রীয় কার্যকলাপ, আন্তঃরাষ্ট্রীয় ক্রিয়া প্রতিক্রিয়া একেবারে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। এর প্রকোপ থেকে বাদ যায়নি বাংলাদেশ রাষ্ট্রের জনজীবনও।
তিনি বলেন, গ্রাম থেকে শুরু করে রাজধানীর সব মানুষ এক অনিশ্চয়তার সামনে বেসামাল থমকে যায়। করোনা আক্রান্ত পরিবারগুলো সবচেয়ে বেশি এই ধকলের মুখে পড়ে।
আজ (সোমবার) বেলা ১১টায় বিএসএমএমইউ অডিটোরিয়ামে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন তিনি।
তিনি বলেন, গবেষণা মতে, করোনায় হতাশা ও বিষন্নতা ছাড়াও মানুষের মধ্যে প্যানিক অ্যাটাক, শুচিবায়, আঘাত পরবর্তী মানসিক চাপ, নিদ্রাহীনতা, মাদকাসক্তিসহ নানা মানসিক সমস্যার প্রকোপ বেড়ে যায়। মানসিক রোগ নিয়ে কাজ করা পেশাজীবীরা অনুভব করেন যে মানসিক রোগের আরেক ঢেউ মানব জাতির ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে। এই ঢেউয়ে, করোনায় স্বজন হারানো পরিবারের মানুষগুলোকে কিছুটা সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতেই বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হয়।
সরকারি হিসাব মতে, বাংলাদেশে কোভিড-১৯ আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ২৭ হাজারের বেশি মানুষ। দেখা যায়, গ্রামের তুলনায় শহরের মানুষের মধ্যে কমিউনিটি সাপোর্ট, সামাজিক বন্ধন, বৈরি পরিবেশে থাকার অভিজ্ঞতা কম হওয়ায় তাদের মধ্যে মৃত্যুশোক সামলানোর ক্ষমতা ও অন্যান্য মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা অপেক্ষাকৃত দূর্বল। কিন্তু গ্রাম বা শহর উভয় পরিবেশের মানুষের মধ্যেই এসব সমস্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। তাই, সব মানুষের জন্যই প্রয়োজন উপযুক্ত সাইকোলজিক্যাল সাপোর্ট।
উল্লেখ্য, দেশে করোনায় স্বজনহারাদের জন্য বিনামূল্যে কাউন্সেলিং ও মানসিক স্বাস্থ্য সেবা কার্যক্রম শুরু হয়েছে। মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক প্রতিষ্ঠান “মনের খবর” এই কার্যক্রমের মাধ্যমে দেশের খ্যাতনামা এবং অভিজ্ঞ সাইকিয়াট্রিস্ট, সাইকিয়াট্রি রেসিডেন্টস এবং সাইকোলজিস্টরা করোনায় স্বজনহারা ব্যক্তিদের বিনামূল্যে কাউন্সেলিং ও মানসিক স্বাস্থ্য সেবা দেবেন।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ, বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সাইকিয়াট্রিস্টসের সভাপতি অধ্যাপক ডা. ওয়াজিউল আলম চৌধুরী, বিশিষ্ট লেখক ও মনোরোগবিদ অধ্যাপক ডা. মোহিত কামাল, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচালক (হাসপাতাল) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. মো. নজরুল ইসলাম খান, বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোরোগ বিদ্যা বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. নাহিদ মাহজাবিন মোরশেদ, প্রাক্তন চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. সালাহউদ্দিন কাউসার বিপ্লব প্রমুখ।