করোনা ভাইরাস এর সংক্রমণে আতঙ্কিত সারা বিশ্ব। আমরা সকলে প্রায় ঘরবন্দী জীবন যাপন করছি। তারপরও জীবন তো থেমে থাকে না। এ অবস্থাতেই আমাদের যুদ্ধ করতে হবে ভাইরাস এর সাথে। গড়ে তুলতে হবে প্রতিরোধ ব্যবস্থা। পুষ্টিগত কিছু নিয়ম এক্ষেত্রে কার্যকরী ভূমিকা রাখবে। সে সম্পর্কে জানতে কথা হয় সি.ডি.আই.সি, বারডেম এর নিউট্রেশনিস্ট মোস্তারি হায়দার এর সাথে:
করোনা পরিস্থিতিতে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে কোন ধরণের খাদ্য-দ্রব্য গ্রহণ করা উচিৎ বলে আপনি মনে করেন?
মোস্তারি হায়দার: আমাদের শরিরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা বা ইমিউন সিস্টেম বাড়ানোর জন্যে পর্যাপ্ত পুষ্টি উপাদান আমাদের দৈনন্দিন খাবার থেকেই গ্রহণ করতে হবে। তবে বর্তমান পরিস্থিতিতে সহজলভ্য খাবার দিয়েই সমস্ত চাহিদা পূরণ করতে হবে। কার্বোহাইড্রেট, ফ্যাট, প্রোটিন সব ধরনের খাবারই থাকতে হবে খাদ্য তালিকায়। ভিটামিন এ, সি, কে সম্মৃদ্ধ খাবার আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় যা আমরা রঙিন শাক সবজি ও ফল থেকে পাই। ভিটামিন ও জিংক সম্মৃদ্ধ খাবার খেতে হবে। সবজির মধ্যে রয়েছে গাজর,টমেটো,ফুলকপি,বাঁধাকপি, ব্রোকলি,ক্যাপসিকাপ, বিট ইত্যাদি। ফলের মধ্যে রয়েছে: লেবু,কলালেবু, মাল্টা,জাম্বুরা,আমলকী,জলপাই,আনারস, আনার,বেরি ইত্যাদি।
প্রোটিন জাতীয় খাবারের উপরে জোর দিতে হবে। মাছ মাংসের সরবরাহ অপ্রতুল হলে তার পরিবর্তে ডিম, ডাল,বাদাম দিয়ে চাহিদা পূরণ করা যাবে। কার্বোহাইড্রেটের ক্ষেত্রে simple card (চিনি,মিষ্টি জাতীয় খাবার) এর পরিবর্তে complex card (লাল চাল, আটা, ওটস, কর্নফ্লেক্স) প্রাধান্য দিতে হবে। দুধ দই ও অন্যান্য দুগ্ধজাত খাবার থেকে প্রচুর পুষ্টি নেওয়া যেতে পারে। বিভিন্ন বিচি জাতীয় খাবার- শিম বিচি, মটরশুঁটি,কালোজিরা, তিল পুষ্টি সম্মৃদ্ধ খাদ্যের উৎস। মধু, আদা, রসুন anti inflammatory এবং antioxidant হিসেবে কাজ করে। এলাচি,দারচিনি,লবঙ্গ,গোল মরিচ সহযোগে তৈরি মাসালা চা, গ্রিন টি ভালো কাজ করে।
শরীর কে হাইড্রেট রাখতে পর্যাপ্ত পানি পান করতে হবে। পানি একটু গরম করে খাওয়া যেতে পারে। এছাড়া ডাবের পানি,লেবু পানি,ফলের জুস দিয়েও পানির চাহিদা মেটানো সম্ভব। খাবার কম তাপে সুসিদ্ধ করতে হবে যাতে পুষ্টি উপাদান বজায় থাকে।
কোন ধরণের খাদ্য-দব্য এসময়ে আমাদের পরিহার করা উচিৎ?
মোস্তারি হায়দার: ডুবো তেলে ভাজা খাবার,ফাস্টফুড, জাঙ্কফুড,কোল্ড ড্রিঙ্কস, সলিড ফুড, প্যাকেট জাত বিভিন্ন তৈরি খাবার পরিহার করতে হবে যতটা সম্ভব।
অনেক বাচ্চাদের খাবার নিয়ে অনীহা দেখা যায় বা বাচ্চারা সবসময় একই ধরণের খাবার খেতে চায় না। এক্ষেত্রে কি করণীয় বলে আপনি মনে করেন?
মোস্তারি হায়দার: বাচ্চাদের খাবার এমন হতে হবে যাতে একঘেয়েমি না আসে। সাধারণ খাবারে একটু পরিবর্তন এনে তৈরি ও পরিবেশন করলে শিশুরা আগ্রহ নিয়ে খাবে। ফলের সালাদ, কাস্টার্ড, স্মুদি,সবজি স্যুপ,কাটলেট,সবজি পাস্তা, ওটস পায়েস খিচুড়ি করা যেতে পারে।
যারা বয়স্ক তাদের খাবার তালিকা কেমন হওয়া উচিৎ বলে আপনি মনে করেন?
মোস্তারি হায়দার: আমরা জানি বয়ষ্ক ব্যাক্তিদের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকে এবং তাদের বিভিন্ন ধরনের শারীরিক অসুবিধা থাকে। সুতরাং প্রথমত তাদেরকে নিজস্ব স্বাস্থ্য সমস্যা নিয়ন্ত্রণে থাকে সেই অনুযায়ী খাবার গ্রহণ/বর্জন করতে হবে।অনেকের খাবারে অরুচি থাকে।সেক্ষেত্রে অল্প পরিমাণ খাবার থেকে যাতে বেশি পুষ্টি পেতে পারে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। বিভিন্ন পুষ্টি উপাদান সহযোগে তৈরি খাবার যেমন: খিচুড়ি,পুডিং,ফালুদা,কাস্টার্ড, হালিম বয়স্কদের জন্য উপযুক্ত খাবার। তবে খাবার সহজে হজম উপযোগী করে তৈরি করতে হবে।
ঘরে থাকার এই সময়ে সু্স্থ থাকার জন্য এবং শরীরে যাতে অতিরিক্ত মেদ না জমে সেজন্য আমাদের কি কি ব্যায়াম/ এক্সারসাইজ করা উচিৎ বলে মনে করেন?
মোস্তারি হায়দার: আমাদের সুস্থ জীবনযাত্রার একটি অংশ হচ্ছে, আমরা যে পরিমান খাবার খাবো সে খাবারকে পুরোপুরি কাজে লাগাতে হবে। এসময় যেহেতু আমরা বাসা থেকে বের হতে পারছি না, তাই বাসায় অল্প পরিসরে যে ব্যায়াম/ এক্সারসাইজ করা যায়, সেগুলো করতে হবে। যেমন: জগিং, স্কিপিং, ফ্রি হ্যান্ড এক্সারসাইজ, ইয়োগা, এরোবিক্স, ইত্যাদি। অনেক ধরণের ব্যায়াম/ এক্সারসাইজ আছে যেগুলো বাসায় বসেই করা যায়। যাদের বাসায় ট্রেডমিল বা এধরণের ব্যায়াম করার যন্ত্র-পাতি আছে তারা সেগুলো ব্যবহার করতে পারে। বয়স এবং সুবিধা অনুযায়ী সবারই ব্যায়াম/ এক্সারসাইজ করা উচিৎ। কারণ ব্যায়াম/ এক্সারসাইজ সবার জন্যই গূরুত্বপূর্ণ।
যাদের বিভিন্ন ধরণের রোগ আছে, বিশেষ করে বয়স্কদের, যেমন: ডায়াবেটিস, হার্টের সমস্যা, উচ্চ রক্তচাপ ইত্যাদি আছে, ব্যায়াম/ এক্সারসাইজ তাদের জীবনের একটি অংশ। তাঁরা যদি ব্যায়াম/ এক্সারসাইজ না করেন তবে তাদের শারীরিক অসুস্থতাগুলো নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে। বাচ্চারাও যেহেতু এসময় বাসায় থাকছে তাই তাদেরও স্বাভাবিক সময়ে যে কাজ গুলো করা হতো সেগুলো করা হচ্ছে না। ফলে ওজন বেড়ে যেতে পারে এবং ওজন বেড়ে গেলে যে সমস্যাগুলো হয় সেগুলো হতে পারে। তাই তাদের খেলার মাধ্যমে পড়া-শোনা করানো যেতে পারে। বা ঘরে থেকেই বাচ্চাদের উপযোগী খেলার ব্যবস্থা করা যেতে পারে।