ভালো খাবার খাওয়া বা বেড়াতে যাওয়ার মত যৌনতাও মানুষের মানসিক স্বাস্থ্যকে ভালো রাখে। তবে হ্যাঁ, শুধু মানসিক নয়, শারিরিক সুস্থতায়ও এর অবদান আছে। যৌনতা ইমিউন সিস্টেমের জন্য সহায়ক, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে, ক্যালোরি ক্ষয় করে ইত্যাদি।
মনোবিজ্ঞানীরা মন ও যৌনতার সম্পর্ক নিয়ে গবেষণা করেছেন বিভিন্ন সময়। মনোবিজ্ঞানী রায়ান এন্ডারসন তেমনই একটি গবেষণায় তুলে এনেছেন যৌনতার ৭ টি স্বাস্থ্য উপকারিতার কথা। সেগুলোই আপনাদের সামনে তুলে ধরছি আমরা।
যৌনতা স্ট্রেস কমায়
স্ট্রেস একটি মানসিক সমস্যা। মানুষ ভেদে এর মাত্রার পার্থক্য হয়। স্ট্রেস অনেক ধরণের শারীরিক সমস্যা তৈরি করে। যেমন- ঘুমের সমস্যা, পেশী ব্যাথা, মাথা ব্যাথা ইত্যাদি। এমনকি স্ট্রেস মানুষের ইমিউন সিস্টেমকে ক্ষতিগ্রস্থ করে এবং ক্রনিক ডিপ্রেশনেরও কারণ হয়।
গবেষণায় দেখা গেছে, সঙ্গীর সাথে শারীরিক এবং মানসিক ঘনিষ্ঠতা স্ট্রেস কমায়। শারীরিক ঘনিষ্ঠতা মানুষের মস্তিষ্কের ডোপামিনসহ অন্যান্য সকল রাসায়নিককে সচল করে।
সেলফ স্টিমকে সচল রাখে
বলা হয়, যৌনতা ক্ষুধার মত। অন্য অনেক প্রাচীন কথার মত, এই কথাটিও সত্য। বিষয়টি এরকম নয় যে যত পাওয়া যায় তত ভালো। এর অবশ্যই একটি মাত্রা আছে। তবে একদমই যৌন সম্পৃক্তহীনতা ক্ষতিকর প্রমাণিত হতে পারে। এটি নিজের যোগ্যতা, ক্ষমতা সম্পর্কে সর্বোপরি নিজের উপর সন্দেহ তৈরি করতে পারে।
গবেষণায় দেখা গেছে, আত্মবিশ্বাস এবং নিজের সম্পর্কে উচ্চধারণা অনেকাংশে নির্ভর করে যৌন জীবন কতাটা সুখী তার উপর। সামাজিক ভাবেও নিয়মিত যৌনক্রিয়াকে স্বাভাবিক এবং প্রয়োজনীয় মনে করা হয়। সেক্স থেরাপিস্ট এবং বিয়ে সংক্রান্ত কাউন্সিলরদের মতে, সেই সব জুটি অনেক বেশী সুখী এবং আত্মবিশ্বাসী হয় যারা নিয়মিত শারীরিক সম্পর্কের চর্চা করেন।
অন্তরঙ্গতা বাড়ায়
সম্পর্কগুলো কখনোই খুব সহজ নয়। দৈনন্দীন কাজের চাপ, সামাজিক পরিস্থিতি, আশপাশের মানুষ সব মিলিয়ে আমরা অনেকরকম স্ট্রেসের মধ্য দিয়ে যাই। এর মধ্যে দেখা যায়, সাংসারিক টুকিটাকি নিয়ে নিত্য অনেক ঝামেলা হয়। মানিয়ে নিতে নিতে ক্লান্ত মন সঙ্গীর সাথে হারিয়ে ফেলে সমস্ত অন্তরঙ্গতা। শুনতে অদ্ভুত লাগলেও শারীরিক সম্পর্ক অন্তরঙ্গতা বাড়ায়। যৌনতার ক্রিয়া শরীরের বিভিন্ন হরমোনকে সচল করে এবং ভালোবাসা, বিশ্বাস, ঘনিষ্ঠতা বাড়ায়।
সেক্স আপনাকে সম্পূর্ণ করে
মানসিক স্বাস্থ্যকে ভালো রাখতে যেসব মৌলিক উপাদান দরকার হয় সেক্স তার একটি নয়। কিন্তু ভালোবাসা একটি মৌলিক প্রয়োজন। সঙ্গীর প্রতি এই মৌলিক প্রয়োজনকে সম্পূর্ণ করে শারীরিক সম্পর্ক।
আব্রাহাম মাশলো এর মতে, মানুষের চাহিদার ৪টি মৌলিক ক্যাটাগরি আছে। খাওয়া, ঘুম আর পানি মানুষের জীবনের শারীরিক চাহিদা। আর মানসিক দিক থেকে প্রয়োজন নিরাপত্তা, ভালোবাসা, মূল্যায়ণ এবং ব্যক্তিস্বাধীনতা।
অবশ্যই এই চাহিদাগুলো পূরণ হলেই মানুষ ভালো থাকতে পারবে। কিন্তু সম্পর্কের ভিন্নতা, অন্তরঙ্গতা ভিন্ন কিছু চাহিদা তৈরি করে। শারীরিক সম্পর্ক তার একটি। এটি মানুষকে সম্পূর্ণতার অনুভূতি দেয়।
স্মার্টনেস
শারীরিক সম্পর্ক আপনাকে স্মার্ট করে। সেক্স মানুষের মস্তিষ্কের রসায়ণকে অদ্ভুত এবং বিস্ময়করভাবে পরিবর্তন করে। এর ফলে মস্তিষ্কের ক্ষমতাও বাড়ে। আপনি জেনে অবাক হবেন যে, গবেষণায় দেখা গেছে, সুস্থ যৌন জীবন মানুষের জ্ঞানীয় ক্ষমতা বাড়ায়।
বুলেটিনে প্রকাশিত একটি স্টাডিতে বলা হয়, এমনকি শারীরিক সম্পর্কে না গিয়েও শুধু এ বিষয়ে চিন্তা করলেও মানুষের বিশ্লেষণাত্বক চিন্তা করার দক্ষতা বাড়ে। অর্গাজমকালীন একজন নারীর মস্তিষ্কের ৩০ টি অঞ্চল প্রজ্জ্বলিত হয়। মস্তিষ্কে রক্ত প্রবাহ বেড়ে যায়। সুডকু, ক্রসওয়ার্ড ইত্যাদি ম্যামরি গেম খেলার ক্ষমতা বেড়ে যায়।
কমবয়সী দেখায়, অনুভবও করায়
আমাদের সামাজিক পরিবেশে মানুষের বয়স বেড়ে যাওয়াকে নেতিবাচিক দৃষ্টিতে দেখা হয়। ২৫ বছর বয়স পার হলেই একজন মানুষ ভাবতে বাধ্য হয় যে সে বুড়িয়ে যাচ্ছে। একটি ব্রিটিশ স্টাডিতে দেখা গেছে, নিয়মিত যৌন জীবনের চর্চা নারী-পুরুষ উভয়কেই ৫-১০ বছর অব্দি কম বয়সী দেখাতে সাহায্য করে।
শুনতে অদ্ভুত হলেও এর পেছনে বৈজ্ঞানিক কারণ আছে। ইন্টারকোর্স মানুষের শরীরের গ্রোথ হরমোন নিঃসরণ করে। এর প্রতিক্রিয়ায় ত্বক কোমল এবং মসৃণ হয়। নিয়মিত শারীরিক সম্পর্কের চর্চা মানুষকে দীর্ঘায়ূও করে।
শরীরচর্চা
মানসিক এবং শারীরিক স্বাস্থ্যের কল্যাণে শরীরচর্চার হাজারো ভালো দিক আছে। শারীরিক সম্পর্ক স্থাপনকালে একজন পুরুষ গড়ে ১০০ ক্যালোরি এবং একজন নারী গড়ে ৭০ ক্যালোরি ক্ষয় করে। আধঘন্টার ক্রিয়ায় ২০৭ ক্যালোরি পর্যন্ত ক্ষয় হতে পারে। এটি শরীরের পাশাপাশি মনকেও হালকা অনুভূতি দেয়। মন ভালো করে, স্ট্রেস দূর করে, সর্বোপরি জীবনকে সচল এবং স্বাভাবিক রাখে।