দীর্ঘদিন ধরে ঘরে-বাইরে কাজ, পরিবার, সন্তান ও সামাজিক চাপ সামলানোর পর স্ট্রেস বা মানসিক চাপ আসা স্বাভাবিক। করোনায় ঘরবন্দী থাকার ফলে অনেকের মধ্যেই মানসিক চাপ দেখা দিয়েছে। মানসিক চাপের প্রভাব ব্যাপক। এটি আমাদের ধারণারও বাইরে শারীরিক, মানসিক এবং সম্পর্কের স্বাস্থ্যের উপর প্রভাব ফেলে। এমনকি এটি প্রভাব ফেলতে পাররে আপনার যৌনজীবনেও।
স্ট্রেস যৌন মিলনের মাধ্যমে এড়ানোও সম্ভব। তবে তার আগে জেনে নেওয়া যাক মানসিক চাপ যৌন জীবনকে কীভাবে প্রভাবিত করে।
মানসিক চাপে ওজন বাড়ে যা কমায় আত্মবিশ্বাস
স্ট্রেসের সাথে জড়িত হরমোনগুলি আমাদের বিপাক প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করে। খুব বেশি আলস্য বোধ করলে তা নিজের অজান্তেই ওজন বাড়িয়ে তোলে যা আমাদের শারীরিক অবয়ব সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা পোষণ করতে শেখায়। নিজের শরীর সম্পর্কে নেতিবাচক মনোভাব, সঙ্গীর সামনে আত্মবিশ্বাস কমিয়ে দেয় যার প্রভাব পড়ে যৌন সম্পর্কে।
এর থেকে মুক্তি পাওয়া সহজ না। কারণ প্রক্রিয়াটি চক্রাকার। আত্মবিশ্বাসের অভাবে যৌনতায় ঘাটতি দেখা দেয়। তাই নিজেদের স্ট্রেস কমিয়ে ফেলতে হবে, যাতে সঙ্গীর সামনে আত্মবিশাস ও ব্যক্তিত্ব কমে না যায়।
স্ট্রেস আমাদের কাজকর্মে প্রভাব ফেলে
শৈশব থেকে কৈশোরকাল, গর্ভাবস্থা, মনোপজ এবং তার বাইরেও নানাভাবে হরমোন আমাদের শরীরকে অসংখ্য উপায়ে প্রভাবিত করে। স্ট্রেস দ্বারা উৎপাদিত হরমোনগুলির মধ্যে একটি কর্টসিল। কর্টসিল রক্তে চিনির মাত্রা ও মেটাবলিজম নিয়ন্ত্রণে রাখে। আমাদের শরীরে প্রয়োজন অনুযায়ী কর্টসিল উৎপাদন করে। কর্টসিল উৎপাদন কমে গেলে অতিরিক্ত ক্লান্ত, বমিভাব, ওজন কমে যাওয়া, পেশী দুর্বল হয়ে যাওয়া ও পেটে ব্যাথা দেখা দিতে পারে।
কিন্তু কর্টসিলের মাত্রাতিরিক্ত উৎপাদন হলে তা ওজন বাড়ায়। বীষেশোট মূখ ও পেটের চারপাশে চর্বি জমায়, ত্বক দুর্বল হয়ে যায় ও ব্রণ দেখা দেয়। মেয়েদের মুখে পরশম ও অনিয়মিত পিরিয়ড হয়।
আমাদের দেহে এই হরমোনের প্রয়োজন তবে স্বল্প সময়ের জন্য স্বল্প পরিমাণে। কর্টসিল অতিরিক্ত উৎপাদন যৌন হরমোনকে দমন করে। লিবিডো হরমোন কমিয়ে ফেলে ফলে যৌন সম্পর্কে প্রভাব ফেলে।
স্ট্রেস আমাদের সম্পর্ক এবং সঙ্গি সম্পর্কে প্রশ্ন তোলায়
আমরা যখন মানসিক চাপে থাকি তখন আমাদের আশেপাশের মানুষের অভিজ্ঞতা খুব সুখকর হয়না। কারণ দেখা যায় মানসিক চাপে থাকা আপনি সবার সঙ্গে চিৎকার করছেন, হতাশা প্রকাশ করছেন বা সামান্য কারণে ঝগড়া করছেন। এ সময়ে যখন আপনার সঙ্গি উল্টো আপনার সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করে তখন তা পরিস্থিতি আরো বাড়িয়ে দেয়। এভাবে সম্পর্কের অবনতি ঘটে। যৌন জীবন হয়ে পড়ে বিপর্যস্ত।
মাত্রাতিরিক্ত মদ্যপান
অনেকেই হতাশা বা খারাপ সময় পার করতে মদ্যপান শুরু করেন। মদ্যপান মাত্রাতিরিক্ত হয়ে গেলে তা যৌন জীবনে প্রভাব ফেলে। পুরুষদের ক্ষেত্রে লিঙ্গোত্থান সমস্যা দেখা যায় আর নারীদের ক্ষেত্রে মদ্যপান যৌনতার ইচ্ছা ও উপভোগ কমিয়ে দিতে পারে। এছাড়াও মদ্যপান আমাদের শরীরে পানির ঘাটতি তৈরী করে যা লুব্রিকেশন কমিয়ে দেয় এবং যৌন সম্পর্কের সময় ব্যাথা অনুভব করায়। ফলে চুড়ান্ত আনন্দের পরিবর্তে কষ্টকর অভিজ্ঞতা হয়ে দাঁড়ায়, যা সম্পর্কে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।
মানসিক চাপ মেয়েদের ঋতুচক্রে প্রভাব ফেলে
স্ট্রেসের ফলে মেয়েদের ঋতুচক্র ও সন্তান ধারণের ক্ষমতায়ও নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। স্ট্রেস আমাদের পিটুইটারি গ্রন্থিকে প্রভাবিত করে যা থাইরয়েড, এড্রিনাল গ্রন্থি এবং ডিম্বাশয় নিয়ন্ত্রণ করে। ডিম্বাশয় ঠিকভাবে কাজ না করলে মেয়েদের ঋতুচক্র বিরুপ প্রভাব পড়ে। পিরিয়ড অনিয়মিত হতে পারে এর ফলে। তাই কেউ গর্ভধারণ করতে চাইলে স্ট্রেসে নিয়ন্ত্রণের বিকল্প নাই।
সুত্রঃ ইন্টারনেট
স্বজনহারাদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য পেতে দেখুন: কথা বলো কথা বলি
করোনা বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য ও নির্দেশনা পেতে দেখুন: করোনা ইনফো
মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক মনের খবর এর ভিডিও দেখুন: সুস্থ থাকুন মনে প্রাণে