যাদের মধ্যে আত্মহত্যার ঝুঁকি রয়েছে: ডা. ফাতেমা জোহরা জ্যোতি

ডা. ফাতেমা তুজ জোহরা জ্যোতি

বেশ কিছুদিন ধরে আত্মহত্যার প্রবনতা অনেক বেড়ে গেছে। ছোট্ট মেয়েটা টিভির রিমোট নিয়ে ঝগড়া করতে গিয়ে আত্মহত্যা করে ফেলে, ছেলেটা হয়তো পি এস৪ কিনে দিচ্ছেনা বলে জীবন শেষ করে দেয়।

যারা এই ঘটনা গুলো শুনেন, তারা অবাক হয়ে বলেন “এইটুকু ব্যাপারে আত্মহত্যা করে বসলো? ” আসলেই কি ব্যাপারটা এইটুকু?

আপনাকে ভাবতে হবে সেই মানুষটার ভিতরে ঢুকে, তার কষ্টটাকে তার মত করে দেখে। আপনাকে বুঝতে হবে সে আসলে কি ভাবছিলো। আমরা প্রায়ই ভুলে যাই, সহমর্মিতা ও সমমর্মিতা দুটি আলাদা আলাদা শব্দ। এই শব্দ দুটি আমাদের বুঝতে হলে সমান ভাবে তার অনুভূতি টুকু অনুভব করতে হবে।

যারা আত্মহত্যার চেষ্টা করে বেঁচে যায় তাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, জিনিসটা তাকে দেয়া হয়নি এই কষ্ট থেকে তার আবেগের গুরুত্ব দেয়া হয়নি, মূলত তাকেই গুরুত্ব দেয়া হয়নি এটিই এই মানুষটির আত্মহত্যার পদক্ষেপের একটি বড়ো কারণ।

একটি মানুষ সত্যিই আত্মহত্যা করবে কিনে, নাকি সে হুমকি দিচ্ছে এটি বোঝা খুব মুশকিল। তবে বিজ্ঞানীরা গবেষণা করে আত্মহত্যার প্রবণতা আছে কিনা সেটি বের করার কিছু রিস্ক ফ্যাক্টর বের করেছেন।

আত্মহত্যার প্রবণতার দশটি ফ্যাক্টর আলোচনা করা হলো। এগুলোর যেকোনো একটি থাকলে আপনাকে বুঝতে হবে সে মানুষটির মাঝে আত্মহত্যার ঝুঁকি রয়েছে।

ধারণা (IDEATION): কেউ যদি আপনাকে বলে যে সে নিজেকে নিজে হত্যা করতে চায়। সেটি সে হাসির বা ঠাট্টার ছলে বললেও আপনাকে তার ব্যাপারে সতর্ক হওয়া প্রয়োজন।

নেশা দ্রব্য গ্রহণ করা (SUBSTANCE ABUSE): কেউ যদি নেশা জাতীয় দ্রব্য সেবন করে থাকে এবং সে নেশার পরিমান ইদানীং বাড়িয়ে দিয়েছে। তাহলে বুঝবেন তার মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা রয়েছে।

বেঁচে থাকার কারণ খুজে না পাওয়া (PURPOSELESSNESS): যদি কেউ আপনাকে বলে তার বেঁচে থাকার কোনো কারণ নেই। সে কোন কাজের না। এটি আত্মহত্যার একটি বড়ো লক্ষণ।

দুশ্চিন্তা (ANXIETY): যদি কেউ প্রচুর পরিমানে দুশ্চিন্তা করতে থাকে। এটি তাকে হতাশার দিকে ঠেলে দেয়। প্রচন্ড মানসিক অশান্তি থেকে মুক্তি পেতে সে মানুষটি আত্মহত্যা করে ফেলতে পারে।

বন্দী অনুভব করা (TRAPPED): কেউ যদি ভাবতে শুরু করে যে সে এমন একটি কষ্টের সাগরে পরে আছে, যেখান থেকে সে বের হতে পারছে না। অথবা এমন একটি ফাঁদ যেখান থেকে উদ্ধার পাওয়ার কোনো রাস্তা তার জানা নেই। এই মানুষগুলো এই কাল্পনিক ফাঁদ থেকে মুক্তি লাভের আশায় আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়।

আশাহীনতা (HOPELESSNESS): কেউ যদি জীবনে আশার আলো দেখতে পাচ্ছেনা অথবা ভবিষ্যতে ভালো কিছু হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই, এমনটা অনুভব করে তাহলে সেই ব্যাক্তির ব্যাপারে সতর্ক হওয়া প্রয়োজন।

সব কিছু থেকে যোগাযোগ বন্ধ করা (WITHDRAWAL): হঠাৎই যদি কেউ সবকিছু থেকে নিজেকে আলাদা করে ফেলে। আগের মতো এখন আর বন্ধু বান্ধবের সাথে যোগাযোগ করে না। তাহলে অবশ্যই তার আত্মহত্যার প্রবনতা আছে বলে মনে করতে হবে।

প্রচণ্ডভাবে রেগে যাওয়া (ANGER): যদি কেউ আগের থেকে অনেক বেশি রেগে যায়। হঠাৎই তার মাঝে এই পরিবর্তন লক্ষনীয় হয়। তার অনেক কারণের পাশাপাশি আত্মহত্যার কথাও আমাদের ভাবতে হবে।

ঝুঁকিপূর্ণ আচরণ করা (RECKLESSNESS): কারো মাঝে যদি হঠাৎই ঝুঁকিপূর্ণ আচরণের প্রবনতা বেড়ে যায়। ফলাফল কি হবে তা না চিন্তা করেই সে ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করে বসে। তাহলে অবশ্যই তার ব্যাপারে সতর্কতা অবলম্বন করা উচিৎ।

মনের অবস্থার পরিবর্তন (MOOD CHANGE): কারো মাঝে যদি আপনি দেখেন তার মন এই ভালো তো এই খারাপ। কোনোটাই স্থায়ী না। তাহলে তার মাঝে আত্মহত্যার প্রবনতা আছে বলে মনে করতে হবে।

উপরের লক্ষণগুলো যদি কারো মাঝে দেখতে পান অবশ্যই একজন মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞদের সাথে যোগাযোগ করুন।

ডা. ফাতেমা তুজ জোহরা জ্যোতি

স্বজনহারাদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য পেতে দেখুন: কথা বলো কথা বলি
করোনা বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য ও নির্দেশনা পেতে দেখুন: করোনা ইনফো
মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক মনের খবর এর ভিডিও দেখুন: সুস্থ থাকুন মনে

Previous articleটি-২০ তে রান সংগ্রহে সৌম্যকে ছাড়িয়ে গেল তাসকিন
Next articleমাস্টারবেশন যৌনাঙ্গে রক্ত সরবরাহ স্বাভাবিক রাখে
সহকারী সার্জন, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন কভিড ১৯ ডেডিকেটেড হাসপাতাল। রেসিডেন্ট, ফেইজ বি, চাইল্ড এন্ড এডলুসেন্ট সাইকিয়াট্রি, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here