জীবিত প্রাণীর মৃত্যু অবধারিত। কেউই মৃত্যুকে এড়াতে পারে না, কিন্তু আমরা একটু চেষ্টা করলে মৃত্যু নিয়ে আমাদের মধ্যে থাকা ভয় ভীতি এবং উদ্বিগ্নতা এড়াতে পারি। গবেষণায় দেখা গেছে, যাদের মাঝে অনেক বেশি মৃত্যু ভীতি থাকে তারা প্রায় সর্বদাই তাদের নিজেদের মৃত্যু বা প্রিয়জনের মৃত্যু নিয়ে শঙ্কিত এবং ভীত সন্ত্রস্ত থাকে।
দৈনন্দিন জীবনে প্রায় সবসময়ই তারা এসব ভেবে চরম মানসিক উদ্বিগ্নতার মাঝে থাকে। মনস্তত্ত্ববিদগণ বলেন, কেউ যদি এমন মৃত্যু ভীতির জন্য ভুক্তভোগী হয় তাহলে তার মধ্যে মৃত্যু নিয়ে সঠিক ধারণা সৃষ্টি এবং মানসিক এই পীড়া থেকে মুক্তির জন্য ঝুঁকি গ্রহণ করে জীবনকে উপভোগ করার মতো ইতিবাচক মানসিকতা সৃষ্টি করতে হবে। আর এটি করতে পারলেই মৃত্যু ভীতি মুক্ত হয়ে সে জীবনকে পূর্ণরূপে উপভোগ করতে পারবে।
মৃত্যু ভীতি এড়াতে প্রথমত যেটি করণীয় সেটি হল এটি স্বীকার করা যে, মৃত্যু একটি চির সত্য এবং অপরিবর্তনীয় ঘটনা। কেউই মৃত্যুকে নিয়ন্ত্রণ বা এড়িয়ে যেতে পারেনা। পৃথিবীতে জীবন ধারণকৃত সব প্রাণীকেই একদিন মৃত্যু বরণ করতে হবে। হ্যাঁ, চিকিৎসা বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তির মাধ্যমে মুমূর্ষু রোগীকে সুস্থ করে তোলা সম্ভব। কিন্তু এর মানে এটি নয় যে এগুলির মাধ্যমে মৃত্যু এড়ানো সম্ভব। তাই মৃত্যু নিয়ে যে কোন ধরণের ভীতি, উদ্বিগ্নতা কিংবা হতাশা প্রকৃতপক্ষে মৃত্যুর উপর কোন রকম প্রভাব বিস্তার করতে পারেনা। আর সে কারণেই এ ধরণের মানসিক উদ্বেগ সত্যিই পরিহার করা উচিৎ।
আমরা সবাই আমাদের নিজেদের বা খুব কাছের মানুষদের মৃত্যু আটকে দিতে চাই। যেমন- ধরুন, আপনি যদি জানতে পারেন যে আপনার পরিচিত কেউ সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছে। আপনি অবশ্যই তার কী ভুলের কারণে এমন দুর্ঘটনা ঘটল সেটি খুঁজে বের করতে চাইবেন এবং নিজে কিংবা কাছের কাউকে সেই ভুল করা থেকে বিরত রাখার প্রয়াস করবেন।
আমরা এমনটা কেন করি?
আমরা এমন করি কারণ আমরা ঐ দুঃসংবাদটি শুনে নিজের বা কাছের মানুষদের মৃত্যুর কথা কল্পনা করি এবং আতঙ্ক অনুভব করি। এভাবে দৈনন্দিন বিভিন্ন ঘটনায় আমরা মৃত্যুকে জড়িয়ে ফেলি এবং ভীত সন্ত্রস্ত হই। একজন মৃত্যু ভীতিতে আক্রান্ত ব্যক্তি ইচ্ছা করলেও এ ধরণের চিন্তা ভাবনা এড়িয়ে যেতে পারেনা।
মনস্তত্ত্ববিদগণ বলেন, এ ধরণের সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে দরকার পরিকল্পিত ও সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ।
একটি সুন্দর, সুখী ও আনন্দময় জীবন যাপন করতে হলে মৃত্যু ভীতি নিরসন একটি অপরিহার্য কাজ। ভীতি এড়াতে হলে মূলত একজন ব্যক্তিকে তার মধ্যে থাকা ভয়ের মুখোমুখি দাঁড়াতে হবে। তাকে ঝুঁকি গ্রহণে উৎসাহিত করতে হবে যে, জীবনে মৃত্যু শেষ কথা হলেও আমাদের জীবন যাপনের উপর মৃত্যুর কোন নিয়ন্ত্রণ নেই।
আমরা আনন্দে থাকব নাকি দুঃখে, সেটি কখনোই মৃত্যু নির্ধারণ করবেনা, নির্ধারণ করবো আমরা। আমরা যদি জীবনের সুন্দর সময়গুলোকে মৃত্যুর কথা ভেবে নষ্ট করে ফেলি তাহলে সেটি হবে আমাদেরই মূর্খতা এবং ব্যর্থতা।
জীবন যেমন সত্য, মৃত্যুও তেমন চির সত্য। তাই মৃত্যুকে ভয় পেলে চলবে না। আমরা হয়তো জানিনা ভবিষ্যতে কী হবে কিন্তু আমরা বর্তমানে কী হচ্ছে সেটি অনুধাবন করতে পারছি। তাই ভবিষ্যতে কী হবে বা হতে চলেছে বা হতে পারে সেটি নিয়ে ভয় না পেয়ে বরং বর্তমানকে আনন্দের সাথে উপভোগ করতে হবে। মৃত্যুকে জীবনের মতো সহজভাবে গ্রহণ করলেই আমরা মৃত্যু ভীতি এড়িয়ে যেতে পারবো এবং জীবনকে পূর্ণরূপে উপভোগ করতে পারবো।
সাইকোলজিটুডে থেকে অনুবাদ করেছেনঃ প্রত্যাশা বিশ্বাস প্রজ্ঞা
স্বজনহারাদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য পেতে দেখুন: কথা বলো কথা বলি
করোনা বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য ও নির্দেশনা পেতে দেখুন: করোনা ইনফো
মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক মনের খবর এর ভিডিও দেখুন: সুস্থ থাকুন মনে প্রাণে