মানসিক স্বাস্থ্য উন্নয়নে ফিজিওথেরাপি

0
56

ফিজিওথেরাপি হচ্ছে ব্যাথা, আর্থ্রাইটিস ও প্যারালাইসিস সহ বিভিন্ন রোগের আধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতি। আর এ সব কিছুর সঙ্গেই জড়িত আছে মানসিক স্বাস্থ্যের বিষয়টি। যেখানে মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নয়ন ঘটলেই আরো বেশি কার্যকর হবে ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা বলে জানান ফিজিওথেরাপিস্টরা।
‘বিষষন্নতা, উদ্বেগ ও মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নয়নে ফিজিওথেরাপি’ প্রতিপাদ্য নিয়ে শনিবার (৮ সেপ্টেম্বর) পালিত হলো বিশ্ব ফিজিওথেরাপি দিবস-২০১৮। বিশ্ব ফিজিওথেরাপি নিয়ন্ত্রক সংস্থা ‘ওয়ার্ল্ড কনফেডারেশন ফর ফিজিক্যাল থেরাপি’ (ডাব্লিউসিপিটি) এর নেতৃত্বে বিশ্বের ১১৮ টি দেশের সঙ্গে দিনটি যথাযথ মর্যাদায় পালন করলো বাংলাদেশ। ‘বাংলাদেশ ফিজিওথেরাপি এসোসিয়েশন’ (বিপিএ) এ উপলক্ষ্যে দেশের বিভিন্ন জায়গায় র‌্যালি, ফ্রি হেল্থ ক্যাম্প, গোল টেবিল বৈঠকের আয়োজন করেছিলো।
ফিজিওথেরাপিস্টদের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিলো বিষন্নতা, উদ্বেগ ও মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নয়নে ফিজিওথেরাপি কিভাবে কাজ করে?
এ বিষয়ে ফিজিওথেরাপিস্ট মুমিনুল্লাহ শেখ বলেন, বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ গবেষণায় দেখা গিয়েছে যারা পঙ্গু ব্যাথার রোগী তাদের মধ্যে ২০ শতাংশ, যারা স্টোকের রোগী আছে তাদের মধ্যে ৩০ শতাংশ এবং কোমর ব্যাথার রোগীর মধ্যে ৩২ শতাংশ রোগী মানসিক ডিপ্রশেনে ভোগে। এসব রোগীরা ঠিকমতো কাজ করতে পারে না, আগের অবস্থানে ফিরে যাবার চেষ্ট করেও তারা ব্যর্থ হয়, পারিবরিক আয় কমে যাওয়াসহ নানা ধরনের চিন্তা তাদের মনের মধ্যে ভর করে। এসব চিন্তা করতে করতে একটা সময় তারা মানসিক ভাবে ভেঙ্গ পড়ে এবং অসুস্থ্য হয়ে পড়ে।
স্টোকের রোগীরা একটা সময় পরে একাকীত্ব অনুভব করে। তখন তারা বিষন্ন হয়ে পড়ে এবং মানসিক ভাবে অসুস্থ্য হয়ে যায়। পরবর্তীতে তারা যখন ফিজিওথেরাপিস্টের কাছে যায়, তাদের সঙ্গে গল্প করে, থেরাপি নেয়। তখন তারা ভালো অনুভব করে। এছাড়া কিছু বিষয় আছে ম্যাকানিজম সমস্যা। যেটা ওষুধে ভালো হয় না। তখন তাকে বিভিন্ন এক্সাসাইজ করতে দেওয়া হচ্ছে। এ থেকে তাদের বিষন্নতা কমতে থাকে এবং মানসিক ভাবে সুস্থ্য হতে থাকে। মূলত ফিজিওথেরাপির এ বিষয় গুলোই মানসিক সুস্থ্যতার সঙ্গে সম্পৃক্ত।
একই প্রসঙ্গে ফিজিওথেরাপিস্ট জাহিদ হোসাইন বলেন, বিভিন্ন রোগের সঙ্গে মানসিক সুস্থ্যতার বিষয়টি জড়িত। আমাদের কাছে যখন কোন রোগী থেরাপি নিতে আসে, তখন আগে তার মানসিক অবস্থাটা বোঝার চেষ্টা করি। আমরা যখন রোগীদের থেরাপি দেই, তখন তার সঙ্গে সঙ্গে তাদের কিছু ফিজিক্যাল এক্সাসাইজও করতে দেই। তারা যখন থেরাপির পাশাপাশি এক্সাসাইজ গুলো করে, তখন তারা অনেক ভালো বোধ করে। এবং মানসিকভাবেও সুস্থ্য হতে থাকে। অসুস্থ্যতায় মানসিক সুস্থ্যতা অনেকট বড় একটা বিষয়।
‘বিষষন্নতা, উদ্বেগ ও মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নয়নে ফিজিওথেরাপি’ এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে শনিবার সকালে বাংলাদেশ ফিজিওথেরাপি এসোসিয়েশন জাতীয় শহীদ মিনার থেকে প্রেসক্লাব পর্যন্ত র‌্যালির আয়োজন করে। র‌্যালিতে ফিজিওথেরাপিস্ট, ফিজিওথেরাপি শিক্ষার্থী ও ফিজিওথেরাপি পেশার সঙ্গে সম্পৃক্ত পেশাজীবিরা অংশগ্রহন করে।
ফিজিওথেরাপি হচ্ছে ব্যাথা, আর্থ্রাইটিস ও প্যারালাইসিস সহ বিভিন্ন রোগের আধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতি। দীর্ঘদিন ব্যাথার ওষধ সেবন করলে রোগীর কিডনী ও পাকস্থিলীতে জটিল রোগ দেখা দেয়। কিন্তু,  পার্শপ্রতিক্রিয়া মুক্ত ফিজিওথেরাপি চিকিৎসার মাধ্যমে কোন প্রকার ওষধ সেবন না করে রোগী সম্পূর্ণ সুস্থ্য, ব্যাথামুক্ত ও সচল থাকতে পারে। তাই, দেশে বর্তমানে ফিজিওথেরাপি চিকিৎসার জনপ্রিয়তা দিন দিন বাড়ছে।

Previous articleমধ্যবয়সে একাকীত্ব: ঝুঁকি কেবল বৃদ্ধ বয়সেই সীমাবদ্ধ নয়
Next articleঅনিদ্রার আদৌ কোন চিকিৎসা আছে?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here