গত ৩৯ বছর ধরে আমি পরামর্শদাতা হিসেবে কাজ করছি, যার সুবাধে আমি অনেক পরিবারের সাথে মিশতে পেরেছি এটি আমার জন্য সম্মানের ব্যাপার। আমার এসব পরিবারের সাথে মিশতে বারবার সুযোগ হয়েছে পরিবার থেরাপি এর কারণে। এই পরিবার গুলোতে নানা রকম সদস্য রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে বাবা-মা, সৎ বাবা-মা, দাদা-দাদী, নানা-নানী যারা বাবা মায়ের বাবা হিসেবে থাকে এমন কি দাদা-দাদী অথবা নানা-নানীর বাবা-মা যারা পরিবারের প্রধান হিসেবে ভূমিকা পালন করে থাকেন।
বাবা-মায়েরা সাহায্যের জন্য আসেন যে তাদের বাবা-মার ভূমিকা পালন করা সমস্য্যা হয়ে দাঁড়াচ্ছে। বাবা মায়ের কাজ সারাদিনের চাকুরির মত আর এই চাকুরীর পাশাপাশি যদি অর্থ উপার্জন করার মত আরেকটি চাকুরী থাকে অথবা এমন একজন সন্তানের বাবা মা হওয়ার দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে যার চাহিদা অনেক বেশি, তাহলে বাবা মায়ের জীবন বিশৃঙ্খলাপূর্ণ এবং ক্লান্তিকর হয়ে উঠে। যেখানে একমাত্র লক্ষ্য হয়ে দাঁড়ায় দিনটি কিভাবে কখন শেষ হবে। পরিবার থেরাপির একটি লক্ষ্য হল এই যে একটি দিন টিকে থাকা এই চিন্তাধারাটিকে কিভাবে উন্নত করা যায়। বাবা-মা হয়ে উঠাকে আরেকটু উন্নত করার কিছু পদ্ধতি এখানে দেয়া হল-
– প্রতিদিন রাতে ঘুমানোর নির্দিষ্ট সময়
– শুধু কন্ঠস্বরে বাবা মায়ের মত হলে হবে না, চলাফেরাও বাবা মায়ের মত হতে হবে।
– না মানে শুধুই না
প্রতিদিন রাতে ঘুমানোর নির্দিষ্ট সময়
প্রত্যেকদিন একটি নির্দিষ্ট সময়ে ঘুমানোর পরিকল্পনা একটি নিয়মিত রুটিনে পরিণত হয়। যা সন্তানদের শান্ত করে এবং তাদের ঘুমাতে যেতে বাধ্য করে। রুটিন তারা মানতে অনেকটা বাধ্য থাকে। তাদের ঘুমানোর প্রস্তুতি শুরু করার জন্য ১০ মিনিট দেয়া সব বিতর্কের অবসান ঘটায় কেননা তখন তারা আর বলার সুযোগ পায় না যে আমার সব কাজ শেষ করার জন্য একটু সময় দরকার। কেননা তাদের ইতিমধ্যে সেই সময়টুকু দেয়া হয়েছে। এই রুটিনে আরো কিছু জিনিস যোগ করা যায় যেমন একটি স্বাস্থ্যকর নাস্তা, দাঁত ব্রাশ করা, বয়সের উপর ভিত্তি করে একটি বই পড়তে দেয়া অথবা বাবা মায়ের সাথে কিছুক্ষণ কথা বলা। ঐ সময় বাসা থাকবে একদম শান্ত, উচ্চস্বরে টিভি চলবে না অথবা গান বাজবে না। এমন একটি রুটীন তৈরি করা হলে আমাদের শরীরও বিশ্রাম নেয়ার সময় ও সুযোগ পায়।
শুধু কন্ঠস্বরে বাবা মায়ের মত হলে হবে না, চলাফেরা ও বাবা মায়ের মত হতে হবে
আমার পরামর্শ হবে বাবা মায়েদের জন্য তারা যেন শুধুমাত্র কন্ঠস্বর দিয়ে বাবা-মা হওয়ার চেষ্টা না করেন। যেমন মুখে ১০ বার গোসল করতে যাও বলতে বলতে একসময় কথাটি চিৎকারের পর্যায়ে চলে যাবে আর পরিস্থিতি একদম বিশৃঙ্খল হয়ে যাবে। আমি খুব সাধারণ একটি পদ্ধতি শিখেছি কিছুদিন আগে যা কাজে লাগতে পারে- আচরণে বুঝান, চিৎকারে না। অর্থাৎ আপনি আপনার সন্তানকে একবার বলুন অথবা দুবার বলুন আপনি তাকে দিয়ে কি করাতে চান এরপর যদি তারা কাজটি না করে তাহলে আস্তে তাদের সামনে যান খুব শান্তভাবে বলুন কাজটি করতে, তারা যে কাজটি নিয়ে ব্যস্ত তা নিয়ে নেন, যেমন ফোন নিয়ে ব্যস্ত থাকলে ফোনটি নিয়ে বলুন ‘তুমি ফোনটি পেয়ে যাবে আমি যা বললাম তা করার পর’।
না মানে শুধুই না
‘না মানে শুধুই না’ বাবা মায়ের জন্য সন্তান পরিচালনার একটি ভাল পদ্ধতি। আমি সব বাবা মায়েদের বলেছি সন্তানের কোনো অনুরোধের উত্তর যদি প্রথমে ‘না’ থাকে শেষ পর্যন্ত যেন সেটা ‘না’ থাকে। কিছুক্ষণ ঘ্যান ঘ্যান অথবা কান্না করার পর যদি ‘না’ ‘হ্যাঁ’ হয়ে যায় তাহলে সন্তান ভাববে কান্না অথবা ঘ্যান ঘ্যান করলে ‘না’ ‘হ্যাঁ’ হয়ে যাবে। যদি আমরা একবার তাদের কথায় সায় দেই তারা বুঝবে কি করলে তাদের অন্যায় আবদার পূরণ হতে পারে। তারা যাই করুক না কেন বাবা মা কে তাদের সিদ্ধান্তে অটল থাকতে হবে। কিছু বছর আগে আমার কাছে একজন মা এসেছিলেন। তার আর তার স্বামী তর্ক করছিল, স্ত্রী না বলছিল বার বার তখন তাদের সন্তান এসে বলল ‘দেখো বাবা মা না বলেছে এই না মানে শুধুই না’। ছেলেটির মা খুব খুশি হয়েছিল। সাথে আমিও খুব খুশি হয়েছিলাম।
আমাদের সন্তানরা নিরাপদ অনুভব করে যখন পরিবারের নিয়ন্ত্রণ আমাদের হাতে থাকে। মাঝে মাঝে তারা নিয়ন্ত্রণ নিতে চায়। তখন আমাদের উচিৎ তাদের সরিয়ে দিয়ে নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখা এবং তাদের নিরাপদ অনুভব করানো। পরিবার থেরাপি আমাদের এই নিয়ন্ত্রণ রাখতে সাহায্য করবে।
তথ্যসূত্র-
(http://thecourier.com/local-news/2017/04/16/weekend-mental-health-moment-166/)
রুবাইয়াত মুরসালিন, আন্তর্জাতিক ডেস্ক
মনেরখবর.কম