গত বছর লি শিয়ান (ছদ্মনাম) এক মাস মানসিক হাসপাতালে ছিলেন। দীর্ঘদিন ধরে তিনি বিষণ্নতায় ভুগছিলেন। ব্যাপারটি এমন ছিল যে, বিশ্ব নেতৃবৃন্দ পূর্বাঞ্চলীয় শহর হংজৌ যেখানে তিনি বসবাস করেন সেখানে G20 সামিট এর জন্য একত্রিত হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। মিস লি চিকিৎসার মাধ্যমে তার অসুস্থতা নিয়ন্ত্রন করেন কিন্তু কর্তৃপক্ষের রেকর্ডে আছে যে, তিনি ‘অস্থির’ হতে পারেন (তাদের প্রমাণঃ তিনি কয়েক বছর আগে তিন মাস মানসিক হাসপাতালে ছিলেন জন্মোত্তর বিষণ্নতার জন্য)। ভুক্তভোগীদের সমাজের মানুষরা বিপদজনক হিসেবে বিবেচনা করে।
মিস লি তুলনামূলকভাবে ভাগ্যবতী। চীনের বেশিরভাগ মানুষ যারা মানসিক সমস্যায় ভোগেন তারা কখনোই চিকিৎসা গ্রহণ করেন না। কেউ কেউ ভাবেন যারা মানসিক সমস্যায় ভোগেন তারা শয়তান আত্মা দ্বারা আবিষ্ট। অনেকেই ভাবেন মানসিক সমস্যা তাদের দূর্বলতার লক্ষণ এবং তাদের সামাজিক সংক্রামক হিসেবে বিবাচনা করে থাকেন। যাদের এ ধরণের সমস্যা থাকে তাদের বিয়েতে অনেক সমস্যা হয়। মাঝে মাঝে পরিবারবর্গ তার কাছের মানুষ মানসিক সমস্যার স্বীকার হলে ঘরের ভেতর লুকিয়ে রাখে লজ্জিত হবার ভয়ে। এমনকি মেডিকেল শিক্ষার্থীরা পর্যন্ত এই ভয়ে থাকেন যে তাদেরকে ও হয়ত এই সমস্যা সংক্রমণ করতে পারে।
যাই হোক মিস লি বছরে ২ বার ডাক্তার দেখিয়ে থাকেন। প্রত্যেক সপ্তাহে তিনি চাওমিং স্ট্রিট রিহ্যাবিলিটেশন সেন্টারে যেয়ে থাকেন, সেখানে তারাই গিয়ে থাকেন যারা মানসিক সমস্যায় ভুগে থাকেন। সেখানে তিনি মন খুলে তার অসুস্থতার কোঁথা বলেন তার অভিজ্ঞতা সবার সাথে ভাগ করে থাকেন এবং অনয় ভুক্তভোগীদের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে থাকেন।
তবে চায়না তে এই ধরণের সেন্টারের সংখ্যা খুবই নগণ্য। চায়না মানসিক স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের ক্ষেত্রে অনেক পিছিয়ে। মানসিক সিস্টেম যা ছিল তা বিলুপ্ত হয় ১৯৪৯ কমিউনিস্ট রা ক্ষমতায় আসার পর। মাও দের অধীনে যাদের মধ্যে বিষন্নতার লক্ষণ দেখা যেত তাদের সমাজতন্ত্রের ক্ষেত্রে বশ্বাসঘাতক হিসেবে গণনা করা হত যা সবাই আগ্রহের সাথে মেনে নিত।
১৯৯০ সাল অবধি খুবই কম সংখ্যক মানুষের বিষন্নতা ধরা পড়েছে। কিন্তু ততদিন পর্যন্ত রাষ্ট্র তার স্বাস্থ্য ব্যবস্থার সমর্থন হারাতে শুরু করেছে। হাসপাতাল গুলো নিজেদের সমর্থন করে যাচ্ছিল, আর মানসিক স্বাস্থ্যসেবা তেও তেমন অর্থ উপার্জন হচ্ছিল লা। মিস লি সহসাই তার জন্মোত্তর বিষন্নতার চিকিৎসা করাচ্ছিলেন। তার নতুন বাবা মা প্রায়ই কিছুই জানত না তার অবস্থা সম্পর্কে।
মনোভাব পরিবর্তন হতে শুরু হয়, চায়না মানসিক অসুস্থতা প্রকোপ থেকে জাগতে শুরু করে। ২০০৭ থেকে ২০১২ সালের মধ্য বহির্বিভাগের রোগীদের আগমন প্রত্যেক বছরে শতকরা ১০ ভাগ করে বাড়তে থাকে। অ্যান্টিডিপ্রেসেন্টস এর ব্যবহার বাড়তে থাকে। শিক্ষিত যুব সমাজ ইন্টারনেট ব্যবহার করছে এবং গোপনে তাদের মানসিক সমস্যার জন্য সাহায্য চাইছে।
সরকার বৃহত্তর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। ২০০৪ সালে সরকার পদক্ষেপ গ্রহণ করেন যাখানে মানসিক স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের জন্য চাওমিং সেন্টারের মত আরো প্রতিষ্ঠান খোলার উদ্যোগ গ্রহণ করেনযেখানে সবসময় ডাক্তার থাকবে। কিছু প্রদেশে এখন সিজোফ্রেনিয়া, বাইপোলার ডিসঅর্ডার এবং এ ধরণের মান্সিক সমস্যায় বিনামুল্যে চিকিৎসা দেয়া হয়। ২০১২ সালে দশক পর চায়না তার প্রথম মানসিক স্বাস্থ্যগত আইন পাশ করে। আইন টিতে নানা সুবিধার কথা বলা হয়েছে। মানসিক সমস্যার অধিকারী দের স্কুল, বিশ্ববিদ্যালয় এমনকি কর্মক্ষেত্রে সচেতনতা বৃদ্ধির কথা বলা হয়েছে। এখানে ভূক্তভগীদের তাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে আটকে রাখার ক্ষেত্রেও পরামর্শ দেয়া আছে। যখন আইনটি পাশ করা হয় তখন কমপক্ষে শতকরা ৮০ ভাগ মানুষ অনিচ্ছাজনিতভাবে মানসিক হাসপাতালে ভর্তি ছিল।
তথ্যসূত্র- দ্যা ইকোনোমিস্ট
(http://www.economist.com/news/china/21715701-sufferers-are-routinely-treated-danger-society-china-wakes-up-its-mental-health)
রুবাইয়াত মুরসালিন, আন্তর্জাতিক ডেস্ক
মনেরখবর.কম