অবচেতন মনের দ্বন্দ্বের পরিপ্রেক্ষিতে রোগীর অজান্তে বিভিন্ন ধরনের শারীরিক উপসর্গ তৈরি হতে পারে। আর এসব শারীরিক উপসর্গযুক্ত মানসিক রোগের চিকিৎসার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় অন্তরায় হচ্ছে রোগী রোগের কারণটাকে মেনে নিতে পারেন না কিংবা অস্বীকার করেন। যেহেতু বিভিন্ন মানসিক দ্বন্দ্ব বা চাপের প্রভাবে এসব রোগের সৃষ্টি হয়, কাজেই এ ধরনের রোগের চিকিৎসার কয়েকটি ধাপ রয়েছে।
এর মধ্যে সবচেয়ে প্রথমেই যেটা করতে হবে তা হলো রোগীকে চাপ সৃষ্টি করে এরকম পরিবেশ থেকে সরিয়ে আনতে হবে। পরবর্তীতে তার রোগের ইতিহাস জেনে এবং সব শারীরিক পরীক্ষা-নীরিক্ষার পর তাকে আশ্বস্ত করতে হবে যে তার এ অসুস্থতা শারীরিক কোনো ত্রুটি বা কোনো অংশের অকার্যকারিতার জন্য হয়নি। পুরোটাই হয়েছে মানসিক দ্বন্দ্ব বা চাপের কারণে।
সাধারণত এ রোগে ওষুধের তেমন কোনো ভূমিকা নেই। ওষুধের মাধ্যমে সাময়িকভাবে কিছু উপসর্গ প্রশমিত হলেও রোগের কারণ নির্মূল করার জন্য রোগীর দীর্ঘমেয়াদী মানসিক চিকিৎসার প্রয়োজন। এর মধ্যে আবেগ প্রশমন (Emotional Ventilation), সমাধান ব্যঞ্জক সাইকোথেরাপি (Problem Solving Psychotherapy) প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য।
বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে যে, প্রায় ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ ক্ষেত্রেই কোনো না কোনো বিশেষ মানসিক চাপের মুখোমুখি হওয়ার সাথে রোগের উপসর্গ শুরু হওয়ার সম্পর্ক আছে। আর যেসব রোগী এ চাপটাকে স্বীকার করে চিকিৎসার আওতায় আসে তাদের দ্রুত আরোগ্য লাভের সম্ভাবনা বেশি। কিন্তু মানসিক চাপকে অস্বীকার করে বা মনের গহীনে চেপে রেখে প্রকাশ করতে না দিলে শারীরিক উপসর্গের প্রশমন হওয়া কঠিন। আমাদের সামাজিক প্রেক্ষাপটে যেসব পরিস্থিতি মানসিক চাপ সৃষ্টি করে তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে –
১. পারিবারিক সম্পর্কের ঘাটতি
২. দাম্পত্য জীবনের টানাপড়েন
৩. বিবাহ বিচ্ছেদ
৪. প্রেমে ব্যর্থতা বা জটিলতা
৫. উত্যক্তের শিকার
৬. পড়াশুনার চাপ তথা অকৃতকার্য হওয়া
৭. অতিরিক্ত কাজের চাপ
৮. চাকরিগত সমস্যা
৯. যেকোনো নতুন পরিবেশে নিজেকে খাপ খাওয়াতে না পারা
১০. স্বামীর বিদেশে থাকা
১১. শারীরিক নির্যাতন
১২. সন্তানের অবাধ্যতা
১৩. বিয়ের ইচ্ছে
১৪. ইচ্ছের বিরুদ্ধে বিয়ে
১৫. নিকাত্মীয় কারো মৃত্যু কিংবা গুরুতর অসুস্থতা
১৬. যেকোনো দীর্ঘ ও জটিল শারীরিক অসুস্থতা
১৭. বিদেশে যাওয়ার চাহিদা
১৮. অর্থনৈতিক সমস্যা প্রভৃতি
বেশিরভাগ ক্ষেত্রে নারীদের মধ্যে এ ধরনের রোগ দেখা যায়। আমাদের সমাজে বাবার বাড়ি, স্বামীর বাড়ি কিংবা শ্বশুর বাড়িতে অতিরিক্ত অনুশাসনের মধ্যে তাদের থাকতে হয়। যার ফলে আবেগ প্রকাশের কোনো সুযোগই তারা পায় না। দীর্ঘদিন তাদের আবেগ চাপা থাকতে থাকতে এক সময় তারা তাদের মনের কষ্টের কথা ভুলে যায় এবং তা কোনোভাবেই প্রকাশ করতে পারে না। যে সমস্যার জন্য রোগের সৃষ্টি হয় তা বের না করা পর্যন্ত আরোগ্য সম্ভব না। তাই রোগীকে প্রথমে তার সমস্যা বের করার জন্য সাহায্য করতে হবে। পরবর্তীতে সে কিভাবে সমস্যার সমাধান তথা সিদ্ধান্ত নিতে পারে এবং সমস্যাকে মেনে নিয়ে এগিয়ে যেতে পারে সে ব্যাপারে তাকে নির্দেশনা দেওয়া প্রয়োজন।
কাজেই এ ধরনের মানসিক রোগের চিকিৎসা সেবাদান তথা রোগীর মঙ্গল কামনায় অবশ্যই এসব অজানা মানসিক চাপের কারণ উদঘাটন করতে হবে। এর জন্যে রোগী এবং রোগীর পরিজনদের সাহায্য ও সহনশীলতার বিকল্প আর কিছুই নেই।
প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব। মনের খবরের সম্পাদকীয় নীতি বা মতের সঙ্গে লেখকের মতামতের অমিল থাকতেই পারে। তাই মনের খবরে প্রকাশিত কলামের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় নেবে না কর্তৃপক্ষ।