মানসিক চাপ যেসব রোগের কারণ

0
366
মানসিক চাপ যেসব রোগের কারণ

মানসিক চাপ বা স্ট্রেস আমাদের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। যখনই আমরা নতুন কোনো প্রতিকূল পরিস্থিতি বা  চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হই, তখনই মানসিক চাপ আমাদের সঙ্গী হয়। প্রতিকূল পরিস্থিতির সাথে মানিয়ে নিতে না পারা এই চাপ তখন আমাদেও শারীরিক ও মানসিক কার্যক্রমেও ব্যাঘাত ঘটায়।

খুব বিখ্যাত একটি রিসার্চ- যা কিনা  ‘হোমস অ্যান্ড রাহী স্ট্রেস ইনভেনটরী’ নামে পরিচিত, তাতে জীবনের সবচেয়ে বেশি মানসিক চাপ সৃষ্টিকারী পরিস্থিতির তেতাল্লিশটির তালিকা তৈরি করা হয়েছিল। তার মধ্যে প্রথম দিকে রয়েছে সঙ্গীর মৃত্যু, বিবাহ বিচ্ছেদ- তালাক বা সেপারেশন, কারাদন্ড, পরিবারের নিকট কারো মৃত্যু, অসুস্থতা, বিয়ে, চাকুরীচ্যুতি, পুর্নবিবাহ, চাকরী থেকে অবসর গ্রহণ ইত্যাদি।

এই মানসিক চাপের উৎস যাই হোক না কেন, জীবন ও স্বাস্থ্যের উপরে রয়েছে এর স্থায়ী এবং সুদূরপ্রসারী প্রভাব এবং অবশ্যই তা নেতিবাচক প্রভাব। মানসিক চাপের প্রভাবের কারণে যে রোগগুলি হতে পাওে তাদেরকে আমরা তিনটি ভাগে ভাগ করে বোঝাতে পারি-

১.      মানসিক রোগ

২.      শারীরিক রোগ

৩.      অন্যান্য

মানসিক রোগ: মানসিক চাপের ক্ষতিকর প্রভাবে মানুষের মধ্যে উদ্বেগ, বিষণ্ণতা, খিটখিটে মেজাজ বা অতিরিক্ত রাগ লক্ষণ আকারে দেখা দিতে পারে। ক্ষণস্থায়ী মানসিক চাপে এই পরিবর্তনগুলিও অস্থায়ী হয়। কিন্তু  যখন মানসিক চাপেরব্যাপ্তি র্দীঘমেয়াদী হয় হয় তখন সমস্যাগুলিও শুধুমাত্র মাত্র সাময়িক লক্ষণে সীমাবদ্ধ থাকে না বরং তা রীতিমত তাত্ত্বিক রোগে রুপলাভ করে যেমন উদ্বেগজনিত রোগ বা Anxiety Disorder, বিষণ্ণতা বা  Depressive Disorder, হিস্টেরিয়া এবং আঘাত পরবর্তী চাপজনিত রোগ (Post Traumatic Stress Disorder) এমনকি মাত্রাতিরিক্ত মানসিক চাপ থেকে আত্মহত্যার উদাহরণ আমরা অহরহই পেয়ে থাকি। নিদেনপক্ষে নিজে নিজের ক্ষতি করার যে প্রবণতা আজকাল আমরা প্রায়শই দেখতে পাই তা কিন্তু অতিরিক্ত মানসিক চাপেরই ফলাফল।

আবার তীব্র মানসিক চাপ খুব স্বল্প সময়ের মধ্যেও মানুষকে মানসিক রোগাক্রান্ত করে ফেলতে পারে, যেমনটি হয় আকস্মিক মানসিক চাপ বা Acute Stress Reaction-এ।

তো, মানসিক চাপজনিত রোগ, হোক সে স্বল্পমেয়াদী বা দীর্ঘমেয়াদী রোগ-মানুষের জীবনকে তা সত্যিকার অর্থেই দুর্বিষহ করে তোলে। মানুষের কর্মদক্ষতা হ্রাস পায় এবং বাড়িয়ে তোলে নিজ ও পরিবারের ভোগান্তি। সমাধান একটিই-তা হল অনতিবিলম্বে চিকিৎসা।

শারীরিক রোগ: মানসিক রোগের উপাখ্যানের সাথে সাথে চলে আসে শারীরিক রোগের তালিকা। কে না জানে মন ও শরীরর একই সুতোয় গাঁথা। তবে কবির দেওয়া এই উপমার বৈজ্ঞানিক  ভিত্তিও খুবই মজবুত। মানসিক চাপ শরীরকেও সমানভাবে ক্ষতিগ্রস্থ করে বিশেষত দীর্ঘমেয়াদী মানসিক চাপ। একটি একটি সিস্টেম ধরে যদি বলি তবে তবে প্রথমেই আসে হৃদযন্ত্রের কথা। অত্যাধিক মানসিক চাপ থেকেই তৈরী হয় উচ্চ রক্তচাপ ও হার্ট এ্যাটাকের মত ভয়াবহ জীবনঘাতী রোগের। ফুসফুস ও শ্বাসযন্ত্রেও প্রদাহও হতে পারে, যার স্থায়ী রুপ অ্যাজমার মত র্দীঘমেয়াদী রোগ। মানসিক চাপের সরাসরি প্রভাবে  Hypertension বা ঘনঘন দ্রুত শ্বাসজনিত রোগের প্রকোপ হতেপারে। আন্ত্রিক রোগের মধ্যে খুব বেশি যেটি হয় তা হল: স্ট্রেস আলসার যা পাকস্থলী বা ক্ষুদ্রান্ত যেকোনোটিকেই আক্রান্ত করতে পারে এছাড়া মানসিক চাপ থেকে IBS বা ও Irritable Bowel Syndrome এর মত দীর্ঘমেয়াদী  রোগের বহি:প্রকাশ ঘটে। চর্মরোগ যেমন একজিমা, এলার্জিও মানসিক চাপের সাথে জড়িত। ঘন ঘন প্রস্রাবের বেগ এমনকি সেক্সের অনাগ্রহ বা দুর্বলতাও মানসিক চাপ থেকে সৃষ্টি হতে পারে। আপনারা হয়ত অনেকেই Tension Headache শব্দটির সাথে পরিচিত আছেন। শুধু মাথাব্যাথা নয় মানসিক চাপ কিন্তু কোমর ব্যাথা বা বুকে ব্যাথার প্রকোপও বাড়িয়ে দিতে পারে। এছাড়া মানসিক চাপজনিত অবসাদ তো আছেই। সর্বোপরি, মানসিক চাপ র্দীঘমেয়াদী হলে তা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে কমিয়ে দেয়। ফলে যেকোন সংক্রামক রোগেরও সম্ভাবনা কয়েক গুণ বেড়ে যায়। এর একটি প্রকৃষ্ট উদাহরণ হল মুখের ভিতর স্ট্রেস আলসার। মানসিক চাপকালীন সময়ে অনেকেই আমরা এই মুখের ভেতর ঘা বা স্ট্রেসজনিত অ্যাপথাস আলসারে ভুগি।

অন্যান্য: এই শিরোনামে প্রথমেই আসে মানসিক চাপের কারণে বিভিন্ন দুর্ঘটনায় পতিত হওয়া। তা হত পাওে সড়ক দুর্ঘটনা বা অন্যান্য কোনো দুর্ঘটনাজনিত কারণে শারীরিক ক্ষতি। এছাড়া মানসিক চাপকালীন সময়ে মানুষ কিন্তু বিভিন্ন অসাধু কার্যক্রমে জড়িয়ে পড়ে।  যা ছাটোখাটো চুরি বা দুর্নীতি কার্যক্রম থেকে শুরু করে বড় কোনো অপরাধ কার্যক্রমও হতে পারে। এই প্রসঙ্গে ধূমপান বা মাদকাসক্তির কথা না বললেই নয়। এ’দুটি শুধু যে কুঅভ্যাস তৈরী করে তা নয়, সাথে সাথে শারীরিক ও মানসিক দু’ধরনের ক্ষতিই কওে যায় সমান হারে।

রোগ সে যাই হোক; শারীরিক বা মানসিক, উৎস যদি হয় মানসিক চাপ, তাহলে রোগের চিকিৎসায় একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে যায় মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ। এই নিয়ন্ত্রণকে করায়ত্ত¡ করতে পারলেই আমরা অনায়াসে অনেকগুলি রোগের প্রকোপ থেকে নিজেদের রক্ষা করতে পারি। মানসিক চপের প্রভাব সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারনা থাকলেই কেবল আমরা এই চাপ নিয়ন্ত্রণে সচেতন হব। আর হ্যাঁ, মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ কিভাবে করবো? সে প্রসঙ্গ এনে না হয় আরেকদিন আলাপ করা যাবে। সে পর্যন্ত আসুন আমরা মানসিক চাপের কুপ্রভাব সম্পর্কে অবগত হই, সচেতন হই এবং এই চাপমুক্ত থাকতে সচেষ্ট হই।

সূত্র: লেখাটি মনের খবর মাসিক ম্যাগাজিনে প্রকাশিত।

মনের খবর মাসিক ম্যাগাজিন ক্রয়ের বিশেষ অফার

স্বজনহারাদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য পেতে দেখুন: কথা বলো কথা বলি
করোনা বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য ও নির্দেশনা পেতে দেখুন: করোনা ইনফো
মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক মনের খবর এর ভিডিও দেখুন: সুস্থ থাকুন মনে

 

Previous articleশাস্তিতে আচরণ বদলায় না
Next articleএকই স্বপ্ন বারবার দেখেন!
মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here