মানসিক চাপ ও আত্মহত্যার গল্প

0
333
ডিপ্রেশনঃ ভুল ধারনা এবং বাস্তব

অব্যক্ত ভাব মানুষের মনের উপর প্রচন্ড প্রভাব ফেলে যা কারও কাছে প্রকাশ করতে পারে না। এই মানসিক চাপ ধীরে ধীরে তাকে আত্মহত্যার মত কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য করে। একটি ছোট গল্প লিখতে গিয়ে হুমায়ুন স্যারের কথা মনে পরে গেল। শ্রদ্ধেয় হুমায়ুন স্যারের একটি নাটকে দেখেছিলাম, এক ব্যাক্তি আর এক ব্যাক্তির সাথে দেখা হলো। প্রথম ব্যাক্তি দ্বিতীয় ব্যাক্তিকে জিজ্ঞাসা করল, ভাই আপনার মন ভালো আছে ? দ্বিতীয় ব্যাক্তি উত্তরে বললো, ভাই মানুষের সাথে দেখা হলে প্রথমে বলে, ভাই আপনার শরীর ভালো অথচ আপনি বলছেন ভাই আপনার মন ভালো। তখন প্রথম ব্যাক্তি বলেছিলো মানুষের মনটাই আসল, মন যদি ভালো থাকে তখন শরীরের অসুস্ততা খুব একটা প্রভাব ফেলে না।
ছোট্ট একটা গল্প লিখার প্রয়াস করছি। গল্পের শুরু কিভাবে করতে হয় তা আমার জানা নেই। তবুও ইচ্ছা করছে একটু লিখার, তাই লিখার একটু চেষ্টা করা। সেতু নামের একটি মেয়ে, পরিবারে অনেক আদরের ছিল। মা, বাবা, ভাইবোনেরা সবাই তাকে অনেক আদর যত্ন দিয়ে বড় করেছে। সে খুব ভীতু প্রকৃতির ছিল। এই কারণে পরিবারের সবাই তাকে নিয়ে অনেক চিন্তা করতো। তার বাবা হঠাৎ একদিন হার্টএটাকে মারা যায়, তখন তার বয়স বাইশ। বাবার শোকে বছরখানিক পর মা ও মারা যায়। তারপর থেকেই তার মাথার উপর নেমে আসে বজ্রপাত। শুধু, একটা চিন্তাই মনের মধ্যে ঘুরপাক খায় যে, বাবা, মা, ভাইবোনের আদরে বেড়ে উঠা সেতুকে এখন তো শশুরবাড়িতে যেতে হবে। যে মায়ের সাথে বন্ধুর মতো সবকিছু শেয়ার করত, সেই মা কি পাবে ? যাই হোক, এই সব চিন্তার অবসান ঘটিয়ে তাকে একদিন শশুরবাড়িতে যেতে হলো। সেতু খুব শান্ত স্বভাবের ছিল। সে মনে মনে কলপনা করত, শশুরবাড়িতে গিয়ে মা, বাবা, ভাইবোনের মতো নতুন মা, বাবা, ভাইবোন পাবে আর এমন একজন সঙ্গী পাবে যে সারাজীবন তার পাশে বন্ধুর মতো সহযোগিতা করবে। কিন্তু ফল হয় ঠিক তার উল্টো। শশুরবাড়িতে এসে শাশুড়ির রুগ্নমূর্তি দেখে তার স্বাভাবিক জীবনটা পুরোপুরি অস্বাভাবিক হয়ে যায়। সে ভালো কিছু করতে গেলে তার ফলাফল হয় খারাপ। সবকিছুতে ভুল ধরা, অহেতুক দোষ খুঁজে বের করা, অহেতুক চিৎকার চেঁচামেচি, অহেতুক দুর্ব্যবহার এটা যেন তার নিত্তনৈমিত্তিক বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। আর সেতুও ভয়ে কাউকে কিছু বলতে পারে না। কাউকে কিছু বলতে গেলে বিপদ যদি আরো বাড়ে এই ভয়ে সে অস্থির থাকতো। মন খুলে কারো কাছে কিছু প্রকাশ করতে না পেরে সে ধীরে ধীরে মানসিক রোগী হয়ে যায়। যে মেয়ের মুখে সবসময় একটা মিস্টি হাসি লেগে থাকতো, যে মেয়ে কখনো উচ্চস্বরে কথা বলতে পারতো না।
একসময় সে অল্পতেই চিৎকার চেঁচামেচি করে, কখনো আবার অকারণে কান্নাকাটি করে, আবার কখনো কারো সাথে অভিমান করে ঘর থেকে বের হয়ে যাচ্ছে। এইভাবে তার বছর তিন পার হয়ে যায়। তাকে কেউ বুঝতে পারেনি। ধীরে ধীরে সে একজন মানসিক রোগী হয়ে পরে। কিন্তু ঘুনাক্ষরেও কেউই টের পায় নি। একদিন সে আত্মহত্যার মতো একটি ভয়ানক পথ বেছে নেয়।

Previous articleআচমকা ভয় পাওয়া থেকে কীভাবে মুক্তি পেতে পারি?
Next articleপ্রযুক্তির নেতিবাচক প্রভাবের শিকার শিশুরা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here