মানসিক চাপের কারণে শুধু হতাশা, বিষণ্ণতা ও অবসাদই তৈরি হয় না, সেই সাথে ওজনও বেড়ে যায়।
ভগ্ন মন শরীরে ভর করে আর এর প্রভাবে শরীরে বাসা বাঁধতে শুরু করে নানান রোগবালাই। তাই শারীরিক স্থূলতা বা অতিরিক্ত ওজনের জন্য মানসিক চাপকে দায়ী করেছেন অনেক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক।
অতিমারির সময়টাতে শারীরিক, মানসিক ও অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা মানুষকে ক্লান্ত করে তুলছে। লকডাউন-শাটডাউনে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছেন অনেক মানুষ। কর্মক্ষেত্র থেকে শুরু করে পারিবারিক সমস্যা, ব্যক্তিগত সম্পর্ক যেকোনো কিছু থেকেই মানসিক চাপ দেখা দিতে পারে। এই মানসিক চাপের প্রভাব এতোটাই বেশি যে, নিয়মিত ব্যায়াম বা ডায়েট করলেও ওজন কমে না।
মন বিষণ্ণ থাকলে এড্রেনালিনসহ দেহে বিভিন্ন হরমোন নিঃসরণে রক্তে শর্করা বেড়ে যায়। দৈনন্দিন জীবনে ক্লান্তি ভর করে অনিদ্রাসহ নানা কারণে অবসন্নতা চলে আসে। এতে করে খাওয়ার প্রবণতা বাড়ে, নানা ধরনের অস্বাস্থ্যকর অভ্যাস ঘিরে ধরে। যার ফল স্বরূপ শরীর আরো ক্লান্ত হতে শুরু করে, বাড়ে অলসতা।
দীর্ঘস্থায়ী মানসিক চাপে রক্তে শর্করার মাত্রা ঠিক থাকে না বলেই ক্ষুধা লাগে আর তখন খেলেই তৃপ্তি বোধ হয় এবং আরাম লাগে। এতে শরীরে শুধু মেদ বাড়ে না বরং ডায়াবেটিস রোগও হতে পারে। তাই ওজন নিয়ন্ত্রণে মানসিক চাপ কমানোর কোনো বিকল্প নেই। এজন্য হতে হবে উদ্যোগী ও অধ্যবসায়ী, থাকতে হবে ইচ্ছা ও নিজেকে বদলানোর প্রাণন্ত চেষ্টা।
প্রথমেই ব্যক্তিগত, পারিবারিক ও কর্মক্ষেত্রের মানসিক চাপের কারণগুলো চিহ্নিত করে নিন। তারপর চাপমুক্ত হওয়ার উপায়গুলো বের করুন। হতাশাকে মনে স্থান দেবেন না। সব সময় ভাবুন, আপনি ভালো আছেন অনেকের তুলনায়। অনেকে আপনার থেকে অনেক বেশি সমস্যার মধ্যে আছেন। আপনি হয়তো আপনার সামাজিক-অর্থনৈতিক অবস্থান নিয়ে অসন্তুষ্ট। কিন্তু এই আপনার অবস্থানে আসার জন্যই অনেকে স্বপ্ন দেখছেন। তাই নিজেকে হতাশায় ডুবিয়ে রাখবেন না।
কর্মক্ষেত্রে উন্নতির প্রত্যাশায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা কাজ করবেন না। এতে মস্তিষ্কে অবসাদ তৈরি হয়। অতিরিক্ত কাজের চাপে শারীরিক ক্লান্তি জমতে থাকে। যার ফলে মাথা ব্যথা, মানসিক অবসাদের মতো অসুস্থতা দেখা দিতে পারে। এসব কারণেও স্থূলতা বাড়তে পারে।
মন ও শরীর পরস্পর গভীর ভাবে সংযুক্ত। নিয়মিত শরীরচর্চা করুন। শরীর ভালো তো মন ভালো। প্রতিদিন সকালে নিয়ম করে আধা ঘণ্টা হাঁটার অভ্যাস করুন। সকালে হাঁটলে রক্তের লোহিত কণিকাগুলো থেকে চর্বি ঝরে যায়, হাঁটার সময় রক্তের ইনসুলিন ও গ্লুকোজ ক্ষয় হয়।
ফলে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রিত থাকে। অতিরিক্ত ক্যালরি পুড়ে গেলে শুধু যে ওজন কমবে তাই নয়, মন ভালো রাখতেও সহযোগিতা করবে। এছাড়া যোগব্যায়ামও করতে পারেন। কারণ, যোগব্যায়াম মানসিক প্রশান্তি নিশ্চিত করে এবং ওজন নিয়ন্ত্রণ রাখতে সহায়তা করে।
সুস্থ খাদ্যাভ্যাস দীর্ঘ জীবনের নেপথ্যের মূল কারণ। পরিমিত পুষ্টিকর খাবার শুধু ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতেই নয়, মন ভালো রাখতেও একই রকম গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিবেলায় রান্না হওয়ার পর তাজা ও গরম খাবার খাবেন।
পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করুন। গরম বিবেচনা করে অন্য সময়ের থেকে ৩০০ মিলি বেশি পানি পান করবেন। তবে যখন তখন ঠাণ্ডা পানি পানে বিরত থাকুন। মৌসুমী ফল খাবেন, অবশ্যই পরিমাণ মতো।
স্বজনহারাদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য পেতে দেখুন: কথা বলো কথা বলি
করোনা বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য ও নির্দেশনা পেতে দেখুন: করোনা ইনফো
মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক মনের খবর এর ভিডিও দেখুন: সুস্থ থাকুন মনে