ডা. মো. জোবায়ের মিয়া
সহকারী অধ্যাপক (সাইকিয়াট্রি), শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ, ঢাকা।
জীবনে একবারও মাথা ব্যথা হয়নি এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া কঠিন। মাথা ব্যথা মোটা দাগে দুই ভাগে ভাগ করা যায়। সাইকিয়াট্রিস্টদের কাছে বেশী রোগী আসে টেনশন টাইপ মাথাব্যথা নিয়ে। আরেক ধরনের মাথা ব্যথা আছে যার নাম মাইগ্রেন। এই ধরনের রোগীদেরও নানান ধরনের মানসিক সমস্যা একই সাথে থাকে।
যে সকল মানসিক রোগের উপসর্গ হিসেবে মাথাব্যথা প্রায়শই দেখা যায় তার মধ্যে বিষন্নতা, উদ্বেগাধিক্য বা টেনশন রোগ যেমন, সেপারেশন এংজাইটি ডিজঅর্ডার, প্যানিক ডিজঅর্ডার, স্যোশাল এংজাইটি ডিজঅর্ডার এবং জেনারেলাইজড এংজাইটি ডিজঅর্ডার, স্ট্রেস রিলেটেড ডিজঅর্ডার, স্লিপ ডিজঅর্ডার অন্যতম। এছাড়াও মাদকাসক্তি, অতিরিক্ত চা-কফি পান করা, সিগারেট বা নিকোটিন আসক্তি, দীর্ঘ সময় মোবাইল, কম্পিউটার, টিভি দেখার কারনেও মাথাব্যথা হতে পারে।
উপরে উল্লেখিত মানসিক রোগগুলি আবার মাইগ্রেন এবং টেনশন টাইপ মাথাব্যথার তীব্রতা বাড়িয়ে দেয়।শিশুদের কিছু রোগ যেমন অতি চঞ্চলতা (ADHD), অবাধ্য আচরণ (Conduct Disorder), শিখতে সমস্যা (Learning Disability), রাতে প্রশাব করা (Nocturnal Enuresis), টিক ডিজঅর্ডার ইত্যাদি রোগেও মাথাব্যথার উপসর্গ হিসেবে পাওয়া যায়।
প্রায় সকল মানুষই জীবনের কোনো না কোনো সময়ে এই ধরনের মাথাব্যথায় ভোগেন। যে কোনো বয়সেই মাথাব্যথা হতে পারে, তবে টিনেজ বয়সী ছেলে-মেয়ে এবং প্রাপ্ত বয়স্কদের মাঝে বেশী দেখা যায়। পুরুষদের তুলনায় নারীদের মাঝে এই মাথাব্যথা বেশী হয়ে থাকে।
যদি কোনো প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষের মাঝে এই মাথাব্যথা টানা তিন মাস (ন্যূনতম) এবং প্রতি মাসে ১৫ বারের বেশী দেখা দেয়, তবে সেটাকে ক্রনিক টেনশন টাইপ মাথাব্যথা বলে। টেনশন টাইপ মাথামাথা ব্যথার লক্ষণগুলো হলো মাথার দুপাশেই একটি স্থায়ী ব্যথা অনুভূত হতে পারে। এছাড়াও ঘাড়ের মাংস পেশীতে টান টান লাগতে পারে এবং চোখের পেছনে একটা চাপ ভাব হতে পারে। তবে সাধারণত এই মাথাব্যথাটি প্রতিদিনের কাজে ব্যাঘাত ঘটানোর মতো তীব্র হয়না। এই ব্যথা ৩০ মিনিট থেকে কয়েক ঘন্টা পর্যন্ত থাকতে পারে। তবে মাঝেমধ্যে ব্যথাটি কিছুদিন স্থায়ী হতে পারে।
যাদের মাইগ্রেন আছে তাদের বিষন্নতা হওয়ার সম্ভাবনা ৪০ শতাংশ বেশি। চিকিৎসা কেবল ওষুধ নয়, অনেক ক্ষেত্রে সাইকোথেরাপির প্রয়োজন হয়।
মাইগ্রেনের চিকিৎসায় প্রতিরোধক এন্টিডিপ্রেসেন্ট এবং এন্টি মাইগ্রেন ওষুধের পাশাপাশি দৈনন্দিন কিছু নিয়মকানুন মেনে চললে সমস্যাটি অনেকাংশে কমিয়ে রাখা যায়। প্রতিদিন নিদিষ্ট সময়ে ও পরিমিত পরিমাণে ঘুমাতে হবে, কম বা অতিরিক্ত আলোতে কাজ করা যাবেনা, তীব্র রোদ বা ঠান্ডা পরিহার করতে হবে, কোলাহলপূর্ণ ও উচ্চ শব্দ সম্পন্ন পরিবেশে বেশীক্ষণ থাকা যাবেনা, একাধারে অধিক সময় মোবাইল, কম্পিউটারের মনিটর ও টিভির সামনে থাকা যাবেনা। মাইগ্রেনের ব্যথা শুরু হলে প্রচুর পরিমানে পানি পান করতে হবে। বমি হলে বিশ্রামসহ মাথায় ঠান্ডা কাপড় জড়িয়ে রাখতে হবে। অতিরিক্ত টেনশন পরিহার করতে হবে। অধিক রাত জাগ্য যাবেনা। খিঁচুনি হলে, অজ্ঞান হওয়ার মতো মনে হলে, চোখে দেখতে সমস্যা হলে কিংবা হাত-পা অবশ হয়ে আসলে অতিদ্রুত নিকটস্থ হাসপাতালে যোগাযোগ করতে হবে।