মহামারীতে সৃষ্ট ভয় এবং উদ্বিগ্নতায় মানিয়ে নিতে করণীয়

মহামারীতে সৃষ্ট ভয় এবং উদ্বিগ্নতায় মানিয়ে নিতে করণীয়

মহামারীকালীন এই দুঃসময়ে আমরা সবাইই শারীরিক জটিলতার পাশাপাশি ভয় এবং উদ্বিগ্নতার মত মানসিক সমস্যাগুলির সম্মুখীন হচ্ছি। কিন্তু আমরা কিছু কৌশল অবলম্বন করতে পারি যেগুলি আমাদের এই সমস্যাগুলির সাথে মানিয়ে নিয়ে সামনে এগিয়ে যেতে সাহায্য করবে।

বিগত বছরে মহামারী যেভাবে একটি ভয়ার্ত এবং উদ্বিগ্নতায় পরিপূর্ণ পরিবেশ নিয়ে হানা দিয়েছে, তাতে বিগত সব সময়ের তুলনায় এই সময়ে মানসিক স্বাস্থ্যের যত্ন একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে উঠেছে। মহামারীতে সংক্রমণের ভয় এবং অসুস্থ পরিবেশ নিয়ে এই উদ্বিগ্নতা ব্যাপক মাত্রায় ছড়িয়ে পড়ার ফলে আমরা দেখছি মানসিক চাপ, মনঃকষ্ট, দুশ্চিন্তা, একাকীত্ব এবং বিষণ্ণতায় আক্রান্তের হার যেন রেকর্ড সৃষ্টি করেছে। আসুন এমন কিছু উপায় সম্পর্কে আমরা জেনে নেই যেগুলো আমাদের মানসিক এই সমস্যাগুলি কাটিয়ে কোভিড-১৯ সংকট মোকাবেলায় সহায়ক হবে। আর এই মে মাস যেহেতু ১৯৪৯ সাল থেকে মানসিক স্বাস্থ্য সচেতনতা মাস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে, তাই এই সময় মানসিক স্বাস্ত্য সচেতনতা বৃদ্ধির সব থেকে উপযুক্ত সময়।

১) চিন্তা ভাবনায় পরিবর্তন
আমাদের দৈনন্দিন জীবন এবং কোভিড-১৯ এর ফলে আমরা যেসব অনাকাঙ্ক্ষিত অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হয়েছি সেগুলো নিয়ে অযথা আতঙ্কগ্রস্ত না হয়ে বরং ঠাণ্ডা মাথায় ভাবুন। প্রতি দিন নতুন নতুন অসুস্থ মানুষের সংখ্যা বৃদ্ধি, মৃত্যুর খবর, হাহাকার আমাদের মনকে চরমভাবে বিষণ্ণ করে তুলছে। সব কিছু দূরে ঠেলে নিজেকে শান্ত রাখা সত্যিই কঠিন। কিন্তু এসব নিয়ে সব সময় আমরা যদি নেতিবাচক চিন্তা ভাবনা করি, তাহলে কি আমাদের মাঝে সচেতনতা বাড়বে? আমরা কি করোনা মোকাবেলার কোন শক্তি সঞ্চয় করতে পারবো? অবশ্যই না। তাই দুশ্চিন্তা এবং দুর্ভাবনা ত্যাগ করে আমাদের উচিৎ শুভ চিন্তা করা। আর চিন্তা ভাবনায় এই পরিবর্তনই মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখার মূল মন্ত্র হয়ে উঠবে।

২) নিজের অভিজ্ঞতাকে অন্যদের সাথে তুলনা করতে যাবেন না
একজন মানুষ মহামারীতে আক্রান্ত হয়ে চরম পরিণতির সম্মুখীন হয়েছে বলে সেটিকে নিজের বলে কল্পনা করে নেবেন না। মনের মাঝে বাঁচার এবং সুস্থ থাকার প্রেরণা নিয়ে সামনের দিন গুলি আমাদের করোনা মোকাবেলায় কাজে লাগাতে হবে। আমাদের এই সম্পূর্ণ সুস্থ থাকার প্রক্রিয়াটি একটি স্বাস্থ্যকর ও ইতিবাচক উপায়ে পরিচালনা করার প্রয়াস করতে হবে। আর তাহলেই নিজের মতো করে ভালো থাকা সম্ভব হবে।

৩) নিজের শরীরের যত্ন নেওয়া
মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখতে শরীরকে সুস্থ রাখা সব থেকে বেশী জরুরী। স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি আমাদের শরীরকে যেমন সুস্থ রাখবে তেমনি মনকেও নেতিবাচক চিন্তামুক্ত রাখার শক্তি যোগাবে। আত্মবিশ্বাস বাড়াবে ।

৪) যে কোন ধরণের সমস্যায় সাহায্য চাইতে দ্বিধাগ্রস্ত না হওয়া
যে কোন ধরণের সাহায্য, তা সে কোন বন্ধু বা পরিবারের কাছেই হোক কিংবা একজন বিশেষজ্ঞের নিকট থেকে, সেটি সঠিক সময়ে নেওয়া মানসিক শক্তির সব থেকে বড় ইতিবাচক দিক। এটি কোন লজ্জা বা সম্মানহানীর বিষয় নয়। বরং সুস্থ থাকার জন্য শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সেটি জরুরী।

মহামারী শরীর বা মনের উপর যতটাই ঝুঁকি সৃষ্টির নিয়ামক হয়ে উঠুক না কেন, সামনে এগিয়ে যেতে শরীরকে ভালো রাখার পাশাপাশি মানসিক চাপ মুক্ত থাকা, উদ্বিগ্নতা ও ভয় মুক্ত থাকা, আত্মবিশ্বাস ও ধৈর্য ধারণ- এগুলোই হোক আমাদের চলার পথের পাথেয়।

স্বজনহারাদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য পেতে দেখুন: কথা বলো কথা বলি
করোনা বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য ও নির্দেশনা পেতে দেখুন: করোনা ইনফো
মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক মনের খবর এর ভিডিও দেখুন: সুস্থ থাকুন মনে প্রাণে

 

Previous articleমহামারীকালে মানসিক ও শারীরিক সুস্বাস্থ্য বজায় রাখতে ডিজিটাল জীবন ব্যবস্থার যত গুণাগুণ
Next articleআমার সন্তানের অনুশাসনের সর্বোত্তম উপায় কোনটি?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here