কোভিড-১৯এর এই দুঃসময়ে গুলোকে বেশ জটিল মনে হতে পারে। তবে কিছু বিষয় খেয়াল রাখতে পারলে মনের অমিল এবং সম্পর্কের এই জটিলতা গুলোকে বেশ সহজে দূরে রাখা যাবে।
সারা বিশ্বই আজ করোনার আগ্রাসনের শিকার। পৃথিবীব্যাপী অসংখ্য মানুষ করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু বরণ করেছে এবং এখনো প্রতি দিন এর সংক্রমণের হার বেড়েই চলেছে। কার্যকরী কোন প্রতিষেধক না থাকায় করোনা থেকে সুরক্ষিত থাকতে দীর্ঘ দিন ধরে আমরা যতোটা সম্ভব ঘরে থাকার চেষ্টা করছি, সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে সংক্রমণ এড়ানোর চেষ্টা করছি। কিন্তু ঘরে থেকেও আমরা নিশ্চিন্ত থাকতে পারছিনা কারণ দীর্ঘ দিন এভাবে সব কিছু থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে থাকায় আমাদের মানসিক চাপ দিন দিন বেড়েই চলেছে। আর করোনা সংক্রমণের হার আগের মতোই অনিয়ন্ত্রিত থাকায় নিজের ও পরিবারের সবার সুরক্ষার চিন্তা দিন দিন আমাদের আরও আতঙ্কগ্রস্ত, হতাশ এবং বিষণ্ণ করে তুলেছে।
এরকম মানসিক অবস্থায় আমরা ধৈর্য হারিয়ে প্রায়শই অসহনশীল আচরণ করে ফেলছি। কাছের মানুষদের সাথে অনিচ্ছা সত্ত্বেও অন্যায় করে ফেলছি। আমাদের মধ্যে সৃষ্টি হওয়া নেতিবাচক মানসিকতা আমাদেরকে এসব করতে বাধ্য করছে যা কাছের মানুষদের সাথে সম্পর্কে বিড়ম্বনা সৃষ্টি করছে। কিন্তু আমরা মন থেকে হয়তো কেউ ই চাইনা যে তাদের সাথে আমাদের মনের এই দূরত্ব তৈরি হোক। তবুও মহামারীর এই দুঃসময়ে আমরা না পারছি স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যেতে, না পারছি সম্পর্ক গুলোকে এসব টানাপড়েন মুক্ত রাখতে। নিচে কিছু কৌশল বর্ণনা করা হল যা আমাদের সম্পর্ক গুলোকে করোনার নেতিবাচক প্রভাব থেকে রক্ষা করতে সহায়ক ভূমিকা পালন করতে পারে।
১) সহনশীল মনোভাব বৃদ্ধিঃ
আমাদের মনে রাখতে হবে এই দুঃসময়ে সবার মাঝেই মানসিক চাপ কাজ করছে। তাই কেউ যদি আমাদের মন মত কথা না বলে, বা আমাদের মতের গুরুত্ব না দেয় তাহলে আমাদের উচিৎ সহনশীল হওয়া। সবাই যদি সবার প্রতি সহনশীল হওয়ার প্রচেষ্টা করি তাহলে একে অপরের মনের কথা বোঝা সহজ হবে। সহজে নিজের বিপক্ষে যাওয়া পরিবেশেও মানিয়ে নেওয়া সহজ হবে। এতে সম্পর্কে অবনতি হবেনা।
২) মনোযোগ অন্য দিকে সরিয়ে নেওয়াঃ
অনেক সময় মনের মাঝে চেপে রাখা ক্ষোভ আমাদের মনকে বিষিয়ে তোলে। আমরা অনেক সময় কারও প্রতি আমাদের ভালো না লাগা, অভিযোগ, অসন্তোষ লুকিয়ে রাখি এবং এক সময় সেগুলো আমাদের ইতিবাচক চিন্তা ভাবনার উপরেও প্রভাব বিস্তার করতে থাকে। এমন না করে আমরা যদি অভিযোগ বা অসন্তোষের দিকে মনযোগী না হয়ে অন্য কোন বিষয় বা পরিস্থিতির উপর মনোযোগ দেই তাহলে আমাদের মাঝে নেতিবাচক শক্তির বিকাশ কম হবে। আমরা যত নেতিবাচক দিক গুলো নিয়ে চিন্তা করবো, আমাদের মাঝে ততোই অসন্তোষ বৃদ্ধি পাবে। তাই মনোযোগ অন্যত্র সরিয়ে নেওয়াই শ্রেয়।
৩) ছাড় দেওয়ার মানসিকতাঃ
সব সময় নিজের মতামতকে প্রাধান্য না দিয়ে কিছু কিছু সময় অন্যদেরকে প্রাধান্য দেওয়া যেতেই পারে। এতে করে তারা নিজেদেরকে গুরুত্বপূর্ণ ভাবতে সুযোগ পান এবং আমাদের প্রতি তাদের ইতিবাচক মানসিকতা তৈরি হয়। এই ইতিবাচক মানসিকতা যে কোন সম্পর্কের ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
৪) আবেগকে যুক্তির উপরে স্থান দেওয়াঃ
এটা সত্যি যে আমরা অনেকেই আবেগকে কম গুরুত্ব দিয়ে অধিকাংশ সময় যুক্তিকেই প্রাধান্য দেই। কিন্তু মহামারীর মত এই দুঃসময়ে আমাদের ভুলে গেলে চলবেনা মানসিকভাবে আমরা সবাইই বিপর্যস্ত। এই সময়ে আমাদেরকে একে অপরের মন এবং আবেগকে সব থেকে বেশী গুরুত্ব দেওয়া উচিৎ। যুক্তি দিয়ে বিচার করলে অনেক সময়ই হয়তো কাছের মানুষটার মনের কথা আপনি বুঝতে ব্যর্থ হবেন। আর এই সময়ে সম্পর্ককে আরও দৃঢ় রাখতে মন বোঝা সব থেকে বেশী গুরুত্বপূর্ণ।
সব সময় হয়তো সবার সাথে মতের মিল হওয়া সম্ভব নয়। কিন্তু মতের অমিল হলেই কারও প্রতি অসন্তোষ প্রকাশ করা, নেতিবাচক ধারণা সৃষ্টি হওয়া উচিৎ নয়। আর সম্পর্কের মাঝে হৃদ্যতা রক্ষায় মতের মিল নয়, বরং মনের মিল হওয়াটাই মূল বিষয়। তাই এই দুঃসময়ে, সম্পর্কগুলোকে বাঁচিয়ে রাখতে আমাদের একে অপরের মনকে সব থেকে বেশী গুরুত্ব প্রদান করা উচিৎ।
স্বজনহারাদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য পেতে দেখুন: কথা বলো কথা বলি
করোনা বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য ও নির্দেশনা পেতে দেখুন: করোনা ইনফো
মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক মনের খবর এর ভিডিও দেখুন: সুস্থ থাকুন মনে প্রাণে