মন ও দেহ এ দুটি সত্ত্বা নিয়েই মানুষের অস্তিত্ব। দেহকে সুন্দরভাবে সাজাতে বা রাঙাতে মন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বৈচিত্র্য ভরা মানুষের মন, আর এই বৈচিত্র্য ফুটে উঠে তার ফ্যাশন চর্চার মধ্যে। মানুষের মন দ্বারা ফ্যাশন বিশেষভাবে নিয়ন্ত্রিত হয়। আবার মনও অনেকাংশে প্রভাবিত হয় সাংস্কৃতিক প্রভাবে। ফলে ভিন্ন ভিন্ন দেশের মানুষের মধ্যে ফ্যাশনের ক্ষেত্রে পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়। অর্থাৎ ফ্যাশন, মন ও সংস্কৃতির মধ্যে একটা পারস্পরিক সম্পর্ক বিদ্যমান।
ফ্যাশন কথাটির ব্যাপকতা অনেক। মানুষ শুধু প্রয়োজন মেটাতেই পোশাক পরিধান বা সাজগোজ করে না। এক্ষত্রে রয়েছে তার চিন্তা, অনুভূতি, ইচ্ছাসহ আরো অনেক বিষয়ের বিশেষ ভূমিকা। মানুষের শৈল্পিক সৌন্দর্য পিয়াসী মনের কারণেই ফ্যাশনে এসেছে সৃজনশীলতা এবং নান্দনিকতার ছোঁয়া। এর মাধ্যমে তার রুচির পরিচয় পাওয়া যায়। প্রকাশ পায় তার মনোভাবের বিষয়টিও।
একজন তরুণ বা তরুণী নিজেকে আকর্ষণীয় করে ফুটিয়ে তুলতে দেশি বিদেশি বিভিন্ন সেলিব্রেটিকে অনুকরণ করে। ভিন্ন সংস্কৃতির স্টাইলকে নিজের মধ্যে গ্রহণ করতে অনেকেই স্বাচ্ছন্দবোধ করেন। মন এটাকে আধুনিকতা বা ফ্যাশন সচেতন ব্যক্তি হিসেবে নিজেকে গ্রহণ করতে উৎসাহিত করে। অর্থাৎ তরুণ -তরুণীর মন মিডিয়া দ্বারা প্রভাবিত হতে পারে।
বিভিন্ন উৎসবে যেমন- ঈদ, বড়দিন, পূজায় মানুষের মন চঞ্চল হয়ে ওঠে নিজেকে অন্যভাবে উপস্থাপন করার জন্য, দৃষ্টিনন্দন করার জন্য। আর তাইতো কোটি কোটি মনের বিচিত্র তৃষ্ণা মেটাতে ফ্যাশন ডিজাইনার, মডেলসহ নেপথ্যের অনেকেই পরিশ্রম করছে। মডেল নানা ঢঙে নিজেদের উপস্থাপন করছে। ফলে একটি ফ্যাশন জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।
আসলে মানুষের মনের গভীরে কোনো একটি বিশেষ স্টাইল ঠাঁই করে নিতে পারলেই সেই ফ্যাশনের জয় জয়কার। মানুষের মন সদা পরিবর্তনশীল, তাই ফ্যাশনও পরিবর্তনশীল। একই ধরনের পোশাক, জুতা, ব্যাগের স্টাইল, চুলবাধা, চোখ রাঙানো মানুষ বেশিদিন করতে পারে না। মনের মধ্যে এক্ষেত্রে একটা একঘেয়েমি চলে আসে। এছাড়া যুগের পরিবর্তন এবং ঋতু পরিবর্তনেও মন পরিবর্তন হয় তাই তো ফ্যাশনে দেখা যায় নানা রঙের এবং নানা ঢঙের ভিন্নতা।
ফ্যাশন বিবর্তণের ধারায় এগিয়ে চলছে। এক্ষেত্রে রুচিশীল মার্জিত, যুগপোযোগী প্রভৃতি বিষয় চলে আসছে। পারিবারিক শিক্ষা, ধর্মীয় দৃষ্টিভঙ্গির দ্বারাও মানুষের মন যেমন প্রভাবিত হয় তেমনি ফ্যাশনও। ফলে বয়স বাড়ার সাথে সাথে অনেক মানুষ ধর্মীয় দৃষ্টিভঙ্গির বিষয়টি খেয়াল রেখে ফ্যাশন করে থাকে।
মনের সঙ্গে ফ্যাশনের একটা নিবিড় সম্পর্ক আছে বলেই সারা দুনিয়া জুড়ে ফ্যাশনকে ঘিরে এতো মেধা এবং সৃজনশীলতার বিকাশ ঘটছে। আর সেই চর্চায় বা বিকাশে বাংলাদেশও যেন পিছিয়ে না যায়। ধনী, গরীব, নির্বিশেষে সব মানুষ যেন তার মনের চাহিদা মতো ফ্যাশন করতে পেরে মনকে পরিতৃপ্ত করতে পারে এবং অবশ্যই যেন মনোজগতের ফ্যাশন সচেতনতার পরিচয় বহন করে দেশীয় শিল্প, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারে বিশ্ব দরবারে- এটাই কামনা করি ।
প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব। মনের খবরের সম্পাদকীয় নীতি বা মতের সঙ্গে লেখকের মতামতের অমিল থাকতেই পারে। তাই মনের খবরে প্রকাশিত কলামের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় নেবে না কর্তৃপক্ষ।