মনোরোগের ওষুধে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার চেয়ে উপকারিতা কি বেশি?

করোনায় যুক্তরাষ্ট্রে বেড়েছে মানসিক রোগের ওষুধ বিক্রি
করোনায় যুক্তরাষ্ট্রে বেড়েছে মানসিক রোগের ওষুধ বিক্রি

মনোরোগের ওষুধের সুবিধা-অসুবিধা বা ভালো-খারাপ নিয়ে অনেক কথাবার্তা শোনা যায়। এই জাতীয় ওষুধের কার্যকারিতা সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান না থাকার কারণে কিছু মানুষ নিজের মনে এই বিষয়ে শুধু আন্দাজ বা ধারণা গড়ে তোলে। আবার যারা মানসিক রোগের ওষুধ খান তাদের মধ্যেও ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নিয়ে অনেক চিন্তা দেখা দেয়। সম্প্রতি এই জাতীয় ওষুধ সম্পর্কে কিছু প্রশ্ন নিয়ে ভারতের মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করা একটি প্রতিষ্ঠান সেদেশের সাক্রা হাসপাতালের মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. সাবিনা রাও-এর কাছে উত্তর জানতে চান। প্রতিষ্ঠানটির ওয়েবসাইটে প্রকাশিত সেই সাক্ষাৎকারটি মনের খবর পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হল:

মনোরোগের ওষুধ সম্পর্কে একজন মানুষের মনের সাধারণ চিন্তাগুলো ঠিক কী?
মানুষ সাধারণত মানসিক রোগের অসুখের ওষুধ খেতে চায় না। চিকিৎসক হিসেবে আমার বহু বছরের অভিজ্ঞতায় আমি এর কারণ হিসেবে যা যা শুনেছি সেগুলো হল- ”এই ওষুধ খেলে আমার মস্তিষ্কের কার্যাবলী বদলে যাবে। অথবা ”আমি ওই ওষুধগুলোর উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ব”। আবার কিছু মানুষ ভাবে যে শুধু তাদের  জীবন এই ধরনের ওষুধের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে পড়বে এমন নয়, মনোরোগ বিশেষজ্ঞের কাছে যাওয়া বা এই রোগের ওষুধ খাওয়া তাদের কাছে দুর্বলতার লক্ষণ। মানসিক রোগের চিকিৎসা করানো বা ওষুধ খাওয়ার মানে হল নিজেকে ‘অসুস্থ’ বা ‘উন্মাদ’ প্রমাণ করা।
মনোরোগের ওষুধ প্রায়শই দীর্ঘ সময় ধরে খেতে হয় বলে কি মানুষের মনে কোনও ধারণা গড়ে উঠেছে?
স্বল্প মেয়াদের ওষুধ বলতে আমি তো শুধু অ্যান্টিবায়োটিক এবং ব্যথা কমানোর ওষুধের কথা মনে করতে পারছি। এছাড়া অন্য সমস্ত ধরণের ওষুধই সাধারণত দীর্ঘমেয়াদি হয়। আর এক্ষেত্রে অন্যান্য ওষুধের সঙ্গে মনোরোগের ওষুধেরও কোনও পার্থক্য নেই। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার করা সমীক্ষা অনুযায়ী গুরুতর মানসিক অবসাদের হার আমাদের দেশে ৩৬ শতাংশেরও বেশি। অন্য একটি সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, এদেশে স্কিৎজোফ্রেনিয়ার বাৎসরিক হার প্রতি হাজার জন মানুষের মধ্যে তিন থেকে চারজন। স্কিৎজোফ্রেনিয়ার মতো কিছু বিরল রোগের ক্ষেত্রে অনেকদিন ধরে ওষুধ খেতে হয়। আবার সাধারণ অসুস্থতা যেমন- মানসিক অবসাদ বা উদ্বেগের ক্ষেত্রে বেশিদিন ধরে ওষুধ খেতে না হতে পারে।
মানসিক অবসাদ বা উদ্বেগের মতো অসুখে যারা প্রতিদিন নিয়ম করে ওষুধ খায় এবং ডাক্তারের পরামর্শ মতো থেরাপি বা কাউন্সেলিং করায় তাদের ক্ষেত্রে চিকিৎসার স্থায়িত্বকাল ছ’মাস বা বড় জোর একবছর হতে পারে। এরপর যদি দেখা যায় যাদের আর কোনও সমস্যা নেই তাহলে তাদের আর ওষুধ খাওয়ারও প্রয়োজন পড়ে না। যদি কেউ একবার মানসিক অবসাদে আক্রান্ত হয় তাহলে তার মধ্যে অবসাদ আরেকবার দেখা দেওয়ার সম্ভাবনা ৫০ শতাংশ থাকে। কিন্তু আবার দেখা না দেওয়ার সম্ভাবনাও ৫০ শতাংশ থাকে। এটা তখনই সম্ভব যদি একজন রুগি ছ’মাস থেকে একবছর ধরে একটানা ওষুধ খায় এবং অবসাদ নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য কিছু কৌশল শিখে নিতে পারে। যদি দ্বিতীয়বার কেউ মানসিক অবসাদে আক্রান্ত হয় তাহলে অবসাদ কাটানোর বিভিন্ন কৌশল ব্যবহার করলে এই রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব হয়। এক্ষেত্রে তার ওষুধ খাওয়ার দরকার না-ও হতে পারে।
ঠিক কী অবস্থায় পৌঁছলে একজন মনোরোগ বিশেষজ্ঞ রুগিকে ওষুধ খাওয়ার পরামর্শ দিতে পারেন?
কিছু রুগি এসে ডাক্তারের কাছে বলে যে তার মানসিক সমস্যা দেখা দিচ্ছে এবং ওষুধের দ্বারা সে চিকিৎসা করাতে চায়। তারপর তারা অন্ধের মতো ডাক্তারের কাছে আসে এবং বলে, ”আপনাকে দেখানোর কথা আমি শুনেছি, কিন্তু এর কারণ আমি জানি না, তবে আমি কখনোই ওষুধ খাব না।” মানুষ এটা বোঝে না যে শুধু মনোরোগ বিশেষজ্ঞের কাছে আসলেই অসুখ সারবে না। এমনকী ডাক্তার যদি কাউন্সেলিং-এর জন্য সুপারিশ করেন তাহলে এক বা দু’বার করালেই সমস্যা দূর হবে না। রুগিকে ডাক্তারের কাছে নিয়মিত বেশ কিছুদিন ধরে আসতে হবে এবং তাঁর চিকিৎসাধীন থাকতে হবে। উদাহরণস্বরূপ, কগনিটিভ বিহেভিয়র থেরাপির কথাই ধরা যাক। এই থেরাপির সময়কাল কমপক্ষে ১৬ সপ্তাহ, অর্থাৎ ৪মাস। এবং কেউ যদি এই নির্দিষ্ট সময় ধরে চিকিৎসা করাতে না পারে তাহলে অন্তত এর অর্ধেক সময় থেরাপি করালে সে তার অসুখ নিয়ন্ত্রণে রাখার কিছু কৌশল রপ্ত করতে পারবে।
রুগি একজন ডাক্তারকে কী বলছে তার উপর ভিত্তি করে ডাক্তার সিদ্ধান্ত নেন। যদি কেউ ডাক্তারের কাছে গিয়ে বলে তার মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা জাগছে, সে আর সমস্যা সহ্য করতে পারছে না, তার মধ্যে হতাশা, কর্মবিমুখতা এবং অবসাদের  জন্ম হচ্ছে, তখন ডাক্তার সেই মানুষটিকে ওষুধ খাওয়ার পরামর্শ দেন। কারণ ডাক্তার বুঝতে পারেন যে লোকটির অসুস্থতা খুব অল্প পরিমাণ নয়। কিন্তু যদি কেউ বলে যে কিছু সমস্যার জন্য তার কাজ করতে অসুবিধা হচ্ছে এবং তার মধ্যে দিশাহারা বোধ হচ্ছে, কিন্তু আত্মহত্যার প্রবণতা জাগছে না, তখন ডাক্তার তার শুধু কাউন্সেলিং-এরই ব্যবস্থা করবেন। যখন কেউ মনোরোগ বিশেষজ্ঞের কাছে যাবেন তখন তাঁর উচিত মনকে খোলা রেখে যাওয়া। মানসিক রোগের ওষুধ খেলে কারোর মধ্যে ওষুধের প্রতি আসক্তি জন্মায় না। বরং এই জাতীয় ওষুধ যথেষ্ঠ নিরাপদ যা গর্ভাবস্থার বেশিরভাগ সময় অবধি নিরাপদে দেওয়া যায়।
ইদানীং তো প্রত্যেকেই চায় তাড়াতাড়ি রোগের সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে?
যদি রুগি সমস্যা লক্ষ করার কিছু সময়ের মধ্যেই আমার কাছে আসেন তাহলে আমরা চেষ্টা করি তাঁর প্রত্যাশা অনুযায়ী তাঁকে “রোগ মুক্ত” করতে। কিন্তু এই ঘটনা এদেশে বড় একটা ঘটে না। রুগি মনোরোগ বিশেষজ্ঞের কাছে আসে সমস্যা শুরু হওার অনেকটা সময় পেরিয়ে যাওয়ার পরে, যখন তা বেড়ে মাঝারি থেকে গুরুতর সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। যদি কারোর মধ্যে এক মাস ধরে ঘুমের সমস্যা চলতে থাকে তাহলে কোনও ডাক্তারই তা এক বা দু’দিনের মধ্যে সারিয়ে দিতে পারবে না। অন্যান্য যে কোনও রোগের চিকিৎসার মতো মনোরোগের চিকিৎসা করতেও যথেষ্ঠ সময় লাগে।
মানুষকে বুঝতে হবে যে সাধারণ মানসিক রোগের চিকিৎসার একটি অংশ হল পারিপার্শ্বিক চাপ সৃষ্টি করা জিনিষগুলোর প্রতি মনোভাব আর প্রতিক্রিয়ার পরিবর্তন ঘটানো। চিকিৎসায় সাড়া দিতে কারোর এক বছরেরও বেশি সময় লাগতে পারে এবং এই চেষ্টায় রুগির সক্রিয় অংশগ্রহণও দরকার।
চিকিৎসায় ওষুধ এবং কাউন্সেলিং-এর ব্যবহারের সাধারণ অনুপাত কী হতে পারে?
যার মধ্যে সমস্যার পরিমাণ কম থাকে তার পক্ষে কাউন্সেলিং যথেষ্ঠ। কিন্তু ভারতের মতো দেশে রুগি যখন ডাক্তারের কাছে আসে তখন তার সমস্যা মাঝারি থেকে গুরুতর থাকে। এই পরিস্থিতিতে রুগিকে একজন ডাক্তার ওষুধ খাওয়ার পরামর্শই দিতে পারে। তবে রুগি যদি ওষুধ না খাওয়ার জন্য জোরাজুরি করে তাহলে তাদের ক্ষেত্রে নিয়মিত থেরাপির ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। আর এই চিকিৎসা একদিনে করা যায় না। একদিন চিকিৎসা করিয়ে রুগি যদি তার সেই আগের বিপর্যয়ের মধ্যেই ফিরে যায় তাহলে সুফল পাওয়া সম্ভব নয়। তাই সাপ্তাহিক থেরাপি দিয়ে শুরু করে আস্তে আস্তে তা কমাতে হবে।
গুরুতর মানসিক সমস্যার ক্ষেত্রে চিকিৎসার ধরণ কী হবে?
বাইপোলার সমস্যা, স্কিৎজোফ্রেনিয়া বা খুব গভীর অবসাদ, তার সঙ্গে যদি থাকে হ্যালুশিনেশন তাহলে রুগি ওষুধ খেতে কখনোই অস্বীকার করতে পারে না। এগুলো এতটাই গুরুতর মানসিক অসুস্থতা যে এর ফলে মানুষের দৈনন্দিন কাজকর্ম, তার বিবাহিত জীবন এবং জীবনের আরও নানা গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে যেতে পারে। এখনও পর্যন্ত বিজ্ঞান ওষুধ ব্যবহার না করে শুধু থেরাপির সাহায্যে চিকিৎসাপদ্ধতি আবিষ্কার করতে পারেনি। এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রে রুগিকে স্থিতিশীল না করে থেরাপি শুরু করা যায় না।
মনোরোগের ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সম্বন্ধে আপনি কী বলবেন? একে ঘিরে মানুষের মনে অনেক ভয় থাকে।
যেগুলো সাধারণ মানসিক অসুখ, সেগুলোর ক্ষেত্রে ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সামান্যই হয়। অধিকাংশ রুগিই জানায় যে এমন ওষুধ খেয়ে তাদের বমি বমি পায়, মাথা ব্যথা হয়, মুখের ভিতরটা শুকিয়ে যায় বা ক্লান্ত লাগে। এগুলোকে ওষুধের সামান্য পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে ধরা হয়। কিন্তু এই জাতীয় ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার ঝুঁকি থেকে উপকারিতাই বেশি। ট্রাইসাইক্লিক অবসাদ-বিরোধী ওষুধ যা আগে ব্যবহার করা হত, তার তুলনায় এখন যে সব ওষুধ সাধারণ মানসিক রোগের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয় তার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া খুব সামান্যই হয়। আর কারোর ক্ষেত্রে যদি এই ওষুধের কুপ্রভাব দেখাও দেয়, তাহলে সেই ঘটনাও খুব সচরাচর ঘটতে দেখা যায় না।
অনেকসময়েই এমন অভিযোগ শোনা যায় যে গুরুতর মানসিক রোগের ওষুধ খেয়ে রুগির চেতনা বা বোধ একেবারে হারিয়ে যাচ্ছে। সেক্ষেত্রে কীভাবে সেই রুগিকে শান্তি দেওয়া যাবে?
এই বিষয়টা খুব ভালো করে বোঝা দরকার। ধরা যাক যে কারোর বাইপোলার সমস্যা রয়েছে। তার মধ্যে যদি ম্যানিয়া বা বাতিক খুব বেশি থাকে তাহলে তার সবসময়ে মনে হবে যে ওষুধ খেয়ে সে ক্রমশ জড়ভরতের মতো হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু ম্যানিয়া অনেক ক্ষেত্রে এমন চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছে যায় যেখানে জীবনের ঝুঁকি বেড়ে যায়। কিন্তু এ-ও দেখা যায় যে ওই লোকটিই হয়তো মানসিক অবসাদের জন্য ওষুধ খেতে চাইছে। কারণ সে হতাশা দূর করতে ইচ্ছুক। একজন মানুষের বিরল কিন্তু গুরুতর অসুস্থতার ক্ষেত্রে তার পরিবারের ভূমিকাও কম নয়। পরিবারের সদস্যরা একজন রুগিকে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করতে পারে। হতে পারে যে ওষুধ খেয়ে কেউ ঝিমিয়ে পড়তে বা ক্লান্ত বোধ করতেই পারে অথবা তার দৈহিক ওজন বাড়তেই পারে। কিন্তু এই কারণে যদি সে চিকিৎসা করানো বন্ধ করে দেয় তাহলে কিন্তু পরিস্থিতি সত্যিই তার হাতের বাইরে চলে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। স্কিৎজোফ্রেনিয়ার মতো রোগের চিকিৎসায় ওষুধ না খেলে অবস্থার আরও অবনতি ঘটতে পারে। তবু এই অসুখের বা যে কোনও গুরুতর অসুস্থতার ক্ষেত্রে একটা নির্দিষ্ট সময় পরে রুগি কাউন্সেলিং-এর মতো কৌশলের সাহায্যে সমস্যা নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করতে পারে। সেক্ষেত্রে ওষুধ খাওয়ার পরিমাণ কম করা যায়।
তাই কি বলা হয় যে একজন মানসিক বিশেষজ্ঞের চিকিৎসাধীন থাকা এবং তাঁর দ্বারা রুগির অসুখের লক্ষণগুলির উপর নজরদারির মাধ্যমে অর্ধেক কাজ হয়ে যায়?
এর মধ্য দিয়ে অর্ধেকের বেশি কাজ হয়ে যায়। সাধারণ মানসিক রোগের ক্ষেত্রে একটা সময়ের পর ওষুধ খাওয়া বন্ধ করলেও চলে। অন্যদিকে অন্যান্য রোগের ক্ষেত্রে ওষুধের মাত্রার পরিমাণ স্থিতিশীল রাখা যায় বা কমও করা যায়।
বিকল্প থেরাপির বিষয়ে আপনার কী মত?
অন্যরকম চিকিৎসা করানোর থেকে কোনও ডাক্তারই কিন্তু একজন রুগিকে আটকাতে পারেন না। কিন্তু এ বিষয়ে অবশ্যই মনে রাখতে হবে যে বিকল্প ওষুধ আসল ওষুধের কার্যকারিতায় হস্তক্ষেপ করতে পারে। মানে তার গুণাগুণ কমিয়ে দিতে পারে। অধিকাংশ সময়েই এই বিকল্প ওষুধের ব্যবহার সম্পর্কে আমাদের যথেষ্ঠ জ্ঞান থাকে না। কারণ এ বিষয়ে পর্যাপ্ত পড়াশোনার অভাব রয়েছে আমাদের মধ্যে। এবং একজন মনোরোগ বিশেষজ্ঞও বিকল্প ওষুধের মাধ্যমে চিকিৎসা করার ক্ষেত্রে তত দক্ষ হন না। যোগ ব্যায়াম এবং ধ্যান শরীরকে সুস্থ রাখতে অবশ্যই সাহায্য করে। কিন্তু এর সঙ্গে যদি কেউ অন্য কোনও বড়ি বা গুড়োর সেবন করে তাহলে  অ্যালোপ্যাথিক ওষুধের সাথে কী বিক্রিয়া হবে সে সম্পর্কে আমার ধারণা নেই।
মনোরোগ বিশেষজ্ঞরা নাকি সময়ের অভাবে প্রায়শই রুগিকে ওষুধ খাওয়ার পরামর্শ দিতে থাকেন- এমন অভিযোগ সম্পর্কে আপনার প্রতিক্রিয়া কী?
এই চিন্তাভাবনার জন্য আমি সাধারণ মানুষকে দায়ী করি না। কিন্তু এই অভিযোগের ক্ষেত্রে আমাদের দেশের প্রকৃত অবস্থাটা বুঝতে হবে। আসলে আমাদের দেশে রুগির সংখ্যার তুলনায় মনোরোগ বিশেষজ্ঞ, মনস্তত্ত্ববিদ বা মনোরোগ সংক্রান্ত সামাজিক কর্মীর সংখ্যা নিতান্তই কম। একজন অসুস্থ মানুষ যখন ডাক্তার দেখাতে যাচ্ছে তখন ওই ডাক্তারের চেম্বারে আরও একশোজন রুগির লাইন পড়ে গিয়েছে। দেখা গেল যে যখন ক্লিনিকে ওই অসুস্থ মানুষটির ডাক এল তখন তার রোগের লক্ষণগুলো মাঝারি থেকে বেশ গুরুতর হয়ে উঠেছে। তাই তখন ডাক্তারকে ওষুধ দিয়েই রুগিকে মানসিকভাবে স্থিতিশীল করতে হয়। আসলে রুগির একজন মনোবিদের সঙ্গে বেশি সময় কাটানো দরকার, কিন্তু তা মনোবিদের সংখ্যা কম থাকার কারণে সম্ভব হয় না। তাই এই পরিস্থিতিতে অধিকাংশ ডাক্তারই ভাবেন যে কমপক্ষে একজন রুগির সমস্যার আংশিক ভাগটুকুও যদি তিনি সমাধান করতে পারেন তাহলেও যথেষ্ঠ।
আমার মতে, যদি পাঁচ মিনিটের জন্যও ডাক্তারের সঙ্গে দেখা করে কথা বলা যায় তাতেই একজন রুগি কিছুটা উপকৃত হতে পারেন। থেরাপিকে অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত। নিজের ব্যস্তার মধ্যে থেকে কিছুটা সময় বের করে নিয়ে তার কাউন্সেলিং করানো জরুরি।
ডাক্তারকে রুগি কী জিজ্ঞাসা করবে সে সম্পর্কে আগে থেকে লিখে নিয়ে আসলে তা খুবই কার্যকরী ফল দেয়। এটা হাড়ের ডাক্তার বা ত্বক বিশেষজ্ঞ-সহ অন্যান্য সব ডাক্তারদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। ডাক্তারদের চেম্বারের বাইরে সব সময় লম্বা লাইন থাকে, এবং আমরা চাই এই পরিস্থিতি জেন পাল্টায়। আমরা ডাক্তাররাও রুগিদের সঙ্গে কিছুটা সময় কাটাতে পছন্দ করি।
মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ে চিকিৎসকের সরাসরি পরামর্শ পেতে দেখুন: মনের খবর ব্লগ
করোনায় মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক টেলিসেবা পেতে দেখুন: সার্বক্ষণিক যোগাযোগ
করোনা বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য ও নির্দেশনা পেতে দেখুন: করোনা ইনফো
করোনায় সচেতনতা বিষয়ক মনের খবর এর ভিডিও বার্তা দেখুন: সুস্থ থাকুন সর্তক থাকুন

Previous articleকোভিড ১৯: দেশে সর্বাধিক আক্রান্ত ও মৃত্যু একদিনে
Next articleউপসর্গহীন রোগী থেকেও করোনা ছড়ায়: আগের বক্তব্য থেকে সরে আসলো ডব্লিউএইচও

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here