আমরা চিকিৎসকরা যখন, মেডিকেল কলেজ ভর্তি হই তখনই মনে প্রাণে গভীরভাবে ব্রত নিয়ে থাকি এই বলে যে “আমি গভীরভাবে অঙ্গীকার করিতেছি আমার জীবন আমি মানবতার সেবায় উৎসর্গ করিব” (Oath of Doctors Geneva Declaration) এবং ইতিহাসও তার জ্বলন্ত স্বাক্ষী। আমরা যদি ইতিহাসের দিকে ফিরে তাকাই তাহলে দেখব ভাষা আন্দোলনে বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদার দাবিতে সংগঠিত গনআন্দোলনের ইতিহাসের শিকড় অনেক গভীরে প্রোথিত “বাংলা ভাষা” কে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে যখন ক্ষোভে উত্তাল রাজপথ তখন ছাত্রসমাজ, শিক্ষক, বুদ্ধিজীবী, চিকিৎসক এবং বাংলা ভাষা ভাষী সকল শ্রেণির জনগণ নেমে এসেছিলেন রাজপথে তখন আওয়ামী লীগের সভাপতি “মওলানা ভাসানী”র সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বিভিন্ন রাজনৈতিক সাংস্কৃতিক দলের প্রতিনিধিদের সভায় গঠিত হয় “সর্বদলীয় কেন্দ্রীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ”।
তখন ঢাকা মেডিকেল কলেজের হোস্টেল যা ব্যারাক নামে পরিচিত ছিল (বর্তমানে শহীদ মিনার অবস্থিত) তা ছিল ভাষা আন্দোলনের প্রাণকেন্দ্র এবং ১৯৫২ সালের ২১ শে ফেব্রুয়ারী যখন হাজার হাজার ছাত্র ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সমবেত হন এবং ছাত্ররা পরবর্তীতে ১৪৪ দ্বারা ভঙ্গ করে নেমে আসেন রাজপথে তখন অনেক ছাত্ররা প্রাণ হারান এবং কারা বরণ করেন ঢাকা মেডিকেল কলেজের ছাত্র এম আই চৌধরী, আবু সিদ্দিক, আলী আজগর, জসিমুল হক ও ফরিদুল হক,তাদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন কর্নেল রোকেয়া আনিস (গাইনী ও অবস্) সি. এম. এইচ.।
২১শে ফেব্রুয়ারী, শহীদদের রক্তে রঞ্জিত রাজপথ, থমথমে সারা বাংলাদেশ, তখন ঢাকা মেডিকেল কলেজের ছাত্ররা সিদ্ধন্ত নিলেন যে, শহীদদের রক্তে রঞ্জিত স্থানে একটি মিনার স্থাপন করবেন। তখন হাসপাতালের নির্মাণ কাজের জন্য সংরক্ষিত ইট, বালি ও সিমেন্ট নিয়ে সূর্যাস্তের পর ছাত্ররা ১২ নং ব্যারাকের ৬নং রুমও হোস্টেলের পূর্ব পাশের গেইটের মধ্যবর্তী এক জায়গায় মিনারটি স্থাপন করেন।
আমাদের ভাষা আন্দোলনের পরিনতি ছিল সুদূর প্রসারী। বাংলাভাষার জন্য আন্দোলন এখানেই শেষ হয়নি। বাংলা ভাষা (মাতৃভাষা) বাঙ্গালীদের ভালোবাসা, গর্ব অহংকার অস্তিত্ব এই ভাষা কে পরবর্তীতে আন্তর্জাতিক ভাবে স্বীকৃত একটি ভাষায় পরিনত করা হয়েছে। “চিকিৎসা ভাষাবিজ্ঞান” বাংলা ভাষার আরেকটি নতুন উম্মেষদ্বার সেখানে ভাষা বৈকল্য রোগীদের নিয়ে শুরু হয়েছে গবেষনামূলক কার্যবিধি।
চিকিৎসকরাও বাংলাদেশি মানুষের আশা আকাঙ্খা অনুযায়ী সেবা প্রদানে কাজ করে যাচ্ছে। প্রয়োজনে বেছে নিয়েছে রাজপথ।
“মুক্তির মন্দিরও সোপানও তলে
কত প্রাণ হল বলিদান,
লেখা আছে অশ্রুজলে।”
লেখক: ডা. ফাহমিদা ফেরদৌস
মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ও চিকিৎসা ভাষাবিদ
সহকারি অধ্যাপক (মনোরোগ বিদ্যা বিভাগ)
জেড.এইচ সিকদার ওমেন্স মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল, ঢাকা।