বয়ঃসন্ধিকাল হল শৈশব থেকে যৌবনে পদার্পণ করার মধ্যবর্তী সময়। এ সময় কিশোর-কিশোরীদের বিভিন্ন রকম শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তন ঘটে। আকস্মিক হরমোনের পরিবর্তনের কারণে মানসিক আবেগের তীব্রতার উত্থান পতন ঘটে থাকে, আর এই পরিবর্তনের পর্যায়কে কৈশোর বলে আখ্যায়িত করা হয়।
বয়ঃসন্ধিকালের পূর্বে নিস্ক্রিয় থাকা হাইপোথ্যালামাস এ সময় হঠাৎ করে সক্রিয় হয়ে ওঠে। সাধারণত ডোপামিন, গ্লুটামেট ও সেরেটোনিন নামক নিউরোট্রান্সমিটার হরমোন এ আবেগীয় পরিবর্তনে প্রধান ভূমিকা রাখে এবং পিটুইটারি গ্রন্থি থেকে নিঃসৃত টেস্টোস্টেরন ও ইস্ট্রোজেন হরমোন এবং গ্রোথ হরমোন কৈশোরকালীন শারীরিক বিকাশ ও যৌন আচরণকে সক্রিয়করণে কাজ করে।
তবে কিশোরদের চেয়েও কিশোরীদের বয়ঃসন্ধিকালে বেশি পরিবর্তন আসে। এ বিষয়ে কথাসাহিত্যিক ও মনোশিক্ষাবিদ ডা. মোহিত কামাল বলেন, ‘ছেলেদের তুলনায় মেয়েদের পরিবর্তন খুব দ্রুত ঘটে। তারা অচেনা শৃঙ্খলে আবদ্ধ হতে থাকে। তবে বয়ঃসন্ধিকালের এই সময়ে কিশোর-কিশোরীদের মানসিক সমর্থন অত্যন্ত জরুরি; যা তাদের ভবিষ্যৎ জীবন গড়তে সাহায্য করবে।’
আমাদের দেশে এখনো বয়ঃসন্ধিকালে সন্তানের মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে বাবা-মা খুব বেশি সচেতন থাকে না। কিন্তু এই বিষয়টা পরিবর্তনের দরকার। মনোশিক্ষাবিদ ডা. মোহিত কামাল আরও যোগ করেন, ‘কৈশোরকাল হচ্ছে আবেগের কাল। আবেগতাড়িত হয়ে এ সময় ছেলেমেয়েরা নানা রকম ভুল করে। এই বয়সের আবেগ একধরনের আত্মপ্রেম। ফলে বিভিন্ন বিষয়ে তারা পরিবারের সিদ্ধান্ত মেনে নিতে পারে না। এ ক্ষেত্রে তাদের সঙ্গে পরিবারের দূরত্ব বাড়ে। তখন বেশির ভাগ মা-বাবা সন্তানকে মানসিক সমর্থন দেওয়ার বদলে বকাঝকা, রাগারাগি করেন। যার ফল হিসেবে সন্তান আরও ভুল পথে হাঁটতে পারে। আমাদের দেশে বয়ঃসন্ধিকালে ছেলেমেয়েদের মানসিক সমর্থন দেওয়ার বিষয়টি এখনো কম। বয়ঃসন্ধিকাল নিয়ে সচেতনতা সব পরিবারের মধ্যেই ছড়িয়ে দেওয়া উচিত।’
যদিও মা-বাবারা তাদের চাওয়া-পাওয়াগুলো সন্তানদের বয়ঃসন্ধিকাল থেকে চাপিয়ে দিয়ে থাকেন। যেটা উচিত নয়। ডা. মোহিত কামাল আরও বলেন, ‘মা-বাবারা সব সময় নিজের সন্তানকে বিদ্যালয়ের শ্রেষ্ঠ শিক্ষার্থী বানাতে মরিয়া থাকেন। কিন্তু সন্তানের যোগ্যতা বা সামর্থ্যের বিষয়টি মাথায় রাখেন না। যা সন্তানের উপর এক প্রকার চাপ। এছাড়াও এই সময়ে কঠোর নজরদারিতে সন্তানদের রাখলে, এই বিষয় সন্তানরা সহজে মেনে নিতে পারেন না। ফলে তারা ভালো কিছু করার উৎসাহ হারিয়ে ফেলে এবং পরিবারকে আপন করে নিতে পারে না। নিজেদের বড় ভাবতে শুরু করে, পরিবারকে শত্রু মনে করে। বিভিন্ন নেশার সঙ্গে তখনই পরিচিত হতে থাকে। যা তার ভবিষ্যতকে খারাপের দিকে নিয়ে যায়।’
বয়ঃসন্ধিকালে সন্তানদের সঙ্গে কীরুপ আচরণ করা উচিত, সে বিষয়েও সমাধান দিয়েছেন এই প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক এবং মনোশিক্ষাবিদ। তিনি আরও যোগ করেন, ‘বয়ঃসন্ধিকালে সন্তানদের মানসিক সমর্থন দেওয়া মা-বাবার দায়িত্ব। মা-বাবাকে সন্তানদের মনের গতিপ্রকৃতি বুঝতে হবে। পরিবারের উচিত সন্তানদের সঙ্গে এই সময়ে আরও বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলা। সন্তানের বিষয়ে তাদের আরও সচেতন এবং সতর্ক পদক্ষেপ নিতে হবে।’
স্বজনহারাদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য পেতে দেখুন: কথা বলো কথা বলি
করোনা বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য ও নির্দেশনা পেতে দেখুন: করোনা ইনফো
মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক মনের খবর এর ভিডিও দেখুন: সুস্থ থাকুন মনে প্রাণে