বিষণ্ণতা থেকে যৌনসমস্যা; যৌনসমস্যা থেকে বিষণ্ণতা

বিষণ্ণতা
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার করা সাম্প্রতিক রিপোর্ট অনুসারে বাংলাদেশে শতকরা ৪.১ ভাগ লোক বিষণ্ণতায় ভুগছে। সে হিসেবে বাংলাদেশে প্রতি পঁচিশ জনে একজন এই রোগে আক্রান্ত। এই বিষণ্ণতা প্রতিদিনের সাধারণ মন খারাপ নয়। এটা একটি রোগ। রোগ বলছি এই জন্য যে এই মানসিক অবস্থার সুনির্দিষ্ট কিছু বৈশিষ্ট্য আছে যা সাধারণ মন খারাপ থেকে ভিন্ন।

সাধারণ মন খারাপ হলো মনের ক্ষণস্থায়ী একটি অবস্থা যা আমরা অনেকেই মাঝে মধ্যে অনুভব করে থাকি এবং তা আবার নিজে থেকেই ঠিক হয়ে যায়। ব্যক্তির জীবনের ওপর এই ধরনের মন খারাপ খুব বেশি প্রভাব ফেলে না। কিন্তু বিষণ্ণতা রোগে ব্যক্তির কর্মক্ষমতা যেমন উল্লেখযোগ্য হারে কমে যায় তেমনি তার আনন্দ গ্রহণের ক্ষমতাও হ্রাস পায়। নারীদের মধ্যে এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা পুরুষের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ।

সাধারণত যে ধরনের বিষণ্ণতা রোগগুলো আমরা সচারাচর দেখতে পাই তা হলো :
-পারসিসটেন্ট ডিপ্রেসিভ ডিজঅর্ডার
-সাইকোটিক ডিপ্রেশন
-মেজর ডিপ্রেশন বাইপোলার ডিজঅর্ডার
-পোস্টপার্টাম ডিপ্রেশন সিজোনাল ডিপ্রেসিভ ডিজঅর্ডার
-ডিপ্রেশন কাপল উইথ অ্যাংজাইটি ডিজঅর্ডার

বিষণ্ণতা আমরা কখন বলব?
মন খারাপ বা বিষণ্ণ লাগা, আনন্দের বিষয়গুলোতে আনন্দ না পাওয়া, দুর্বল লাগা, হতাশ লাগা, মনোযোগ দিতে না পারা, ঘুমে সমস্যা হওয়া, ঘন ঘন মৃত্যুর চিন্তা আসা, আত্মহত্যার চিন্তা আসা, অপরাধ বোধে ভোগা ইত্যাদি লক্ষণগুলো দুই সপ্তাহ বা তার অধিক সময় ধরে কারো মধ্যে উপস্থিত থাকলে এবং পূর্বের তুলনায় তার কর্মক্ষমতা উল্লেখযোগ্য হারে কমে গেলে সে বিষণ্ণতা রোগে ভুগছে বলে ধরে নেওয়া হয়। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গিয়েছে যৌনরোগের সাথে বিষণ্ণতার সম্পর্ক উভয়মুখী। দীর্ঘদিন যৌনরোগে ভোগার কারণে যেমন অনেকে বিষণ্ণতায় আক্রান্ত হয়, তেমনি আবার বিষণ্ণতার কারণেও অনেক রোগী যৌনরোগে আক্রান্ত হয়।
যৌনরোগ বলতে সেসব রোগকেই বোঝায় যেসব রোগের প্রধান লক্ষণই হলো যৌনমিলনে সক্ষম না হওয়া। যেমন : পুরুষের ক্ষেত্রে ইরেক্টাইল ডিজফাংশন, প্রিম্যাচিউর ইজ্যাকুলেশন, হাইপো অ্যাক্টিভ সেক্সুয়াল ডিজায়ার ডিজঅর্ডার; নারীর ক্ষেত্রে সেক্সুয়াল ইন্টারেস্ট/এ্যারাউজাল ডিজঅর্ডার, জেনিটো-পেলভিক পেইন/পেনিট্রেশন ডিজঅর্ডার ইত্যাদি।

পুরুষের বিষণ্ণতার ধরন নারীর থেকে কিছুটা আলাদা। মন খারাপ বা বিষণ্ণ লাগা অনেক সময় পুরুষদের ক্ষেত্রে মন মেজাজ খারাপ আকারে দেখা যায়। আনন্দ না লাগার কারণে আনন্দপূর্ণ কাজে তাদের অংশগ্রহণ কমে যায়। এসব যে বিষণ্ণতার জন্য হচ্ছে সেটা সে বুঝতে না পেরে জটিল কোনো যৌন রোগে ভুগছেন বলে মনে করেন। তার সাথে যোগ হয় শারীরিক দূর্বলতা যা বিষণ্ণতা রোগের অন্যতম একটি লক্ষণ। কখনো কখনো যৌন অনীহা বা হাইপো এ্যাক্টিভ সেক্সুয়াল ডিজায়ার ডিজঅর্ডার বিষণ্ণতার লক্ষণ হিসেবে আসে। বিষণ্ণতায়ও যৌন অনীহা বা লিবিডো কমে যায়। সেক্ষেত্রে বিষণ্ণতা রোগের চিকিৎসা নেয়া প্রয়োজন। দেখা যায় বিষণ্ণতা রোগ ভালো হয়ে গেলে এসব সমস্যা আপনা থেকেই ভালো হয়ে যায়। নারীর ক্ষেত্রে বিষণ্ণতার মাত্রা ভিন্ন হয়। মন খারাপ বা বিষণ্ণতা বোধের পাশাপাশি যৌন অনীহা দেখা যায়। নারীদের বিষণ্ণতা রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিও পুরুষের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ।

বিষণ্ণতা রোগ দেখা দেয় তার সঙ্গে জড়িত যৌন সমস্যাগুলো এন্ডোজেনাস বা জৈবিক কারণে যে নিয়ে এতক্ষণ কথা বললাম এক্সোজেনাস বা বাহ্যিক কারণেও বিষণ্ণতা দেখা দিতে পারে। সেক্ষেত্রে বিষণ্ণতার কারণ রোগীর কাছে অনেকটাই স্পষ্ট থাকে।

রোগী বুঝতে পারেন তার জীবনের ঠিক কোন সমস্যার জন্য তিনি বিষণ্ণতায় ভুগছেন। যেসব বাহ্যিক কারণে বিষণ্ণতা দেখা দিতে পারে তার মধ্যে স্বামী-স্ত্রীর দাম্পত্য সমস্যা অন্যতম। স্বামী-স্ত্রীর দাম্পত্য সমস্যা থেকে যৌন অনীহা বা ইরেক্টাইল ডিজফাংশন অথবা প্রিম্যাচিউর ইজ্যাকুলেশন দেখা দিলে তখন কিন্তু তাকে যৌনরোগ বলা হয় না। কারণ যৌনরোগ নির্নয়ের ক্ষেত্রে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে সম্পর্ক ভালো থাকা অন্যতম শর্ত।

কাজেই পাঠকের জন্য পরামর্শ হলো যৌন সমস্যা, যৌনরোগ, বিষণ্ণতা দেখা দিলে মনোরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন। কারণ বিষয়গুলো একটার সঙ্গে আরেকটি জড়িত। শুধুমাত্র যৌন উত্তেজক ঔষধ আপনার সমস্যার সমাধান নয়। এতে আপনার সমস্যা না কমে বরং বেড়ে যেতে পারে।

মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ে চিকিৎসকের সরাসরি পরামর্শ পেতে দেখুন: মনের খবর ব্লগ
করোনায় মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক টেলিসেবা পেতে দেখুন: সার্বক্ষণিক যোগাযোগ
করোনা বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য ও নির্দেশনা পেতে দেখুন: করোনা ইনফো
করোনায় সচেতনতা বিষয়ক মনের খবর এর ভিডিও বার্তা দেখুন: সুস্থ থাকুন সর্তক থাকুন

Previous articleশিশুর মানসিক বিকাশে খেলাধুলা
Next articleমেন্টাল হেলথ ফিল্ম প্রাইজ: আপনার ভোট প্রদানের শেষ দিন ২৫ সেপ্টেম্বর
ডা. এস এম আতিকুর রহমান
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, মনোরোগবিদ্যা বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here