আত্মহত্যার উপর করা প্রতিবেদন হুট করে আত্মহত্যার পরিমাণ বাড়িয়ে দিতে পারে। বিশেষ করে যদি সেই প্রতিবেদন গুলোতে আত্মহত্যার বিষয়ে বিস্তারিত এবং রোমাঞ্চকর বর্ণনা থাকে।
‘ছদ্মবেশী আত্মহত্যা’ নামক এক গবেষণায় দেখা গেছে যখন একজন বিপন্ন ব্যক্তি, আত্মহত্যা করেছে এমন কোনো ব্যক্তির সঙ্গে নিজেকে চিহ্নিত করে। পরবর্তীতে নিজের সমস্যার সমাধান হিসেবে আত্মহত্যার পথকে বেছে নেয়।
জুন মাসে আমেরিকান ফ্যাশন ডিজাইনার কেট স্পেইড ও আমেরিকান শেফ অ্যান্থনি বোর্ডাইনের মৃত্যু আন্তর্জাতিক মিডিয়া গুলোতে সাড়া ফেলে। অশিকাংশ প্রতিবেদনেই তাদের আত্মহত্যার বিস্তারিত বর্ণনা ছিল। যদিও বিভিন্ন মেডিকেল দল ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থ্যা এই ব্যাপারে সতর্কতা অবলম্বনের কথা বলেছিল।
টরন্টোর সানিব্রুক হেলথ সায়েন্স সেন্টারের প্রধান গবেষক ও সাইকিয়াট্রিস্ট ডক্টর মার্ক সিনিয়র বলেন, ‘আমরা অনেক বছর ধরেই জানি যে আত্মহত্যার মিডিয়া প্রতিবেদন এর হার বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখে’।
ডক্টর মার্ক সিনিয়রের দল গবেষণায় পেয়েছে যে, টরোন্টোতে আত্মহত্যা বৃদ্ধি পেয়েছিল একটা আত্মহত্যার প্রতিবেদন প্রকাশের পর পর – সেই গল্পটিতে কিভাবে আত্মহত্যার বর্ণনা ছিল তার উপর নির্ভর করে। যেসব গল্পগুলো আত্মহত্যার একটি বিশেষ পদ্ধতির কথা বলে, সেগুলো এই হার বৃদ্ধিকে অধিক ভূমিকা রাখে।
আত্মহত্যার প্রতিবেদনের ব্যাপারে একটি নির্দেশিকা তৈরি করা হয়। যেখানে আত্মহত্যার পদ্ধতি এইসব প্রতিবেদনে বর্ণনা করতে নিষেধ করা হয়। এছাড়াও আত্মহত্যার কারণটিকে সাংবাদিকদের এড়িয়ে চলতে হবে। প্রথম পাতায় প্রকাশ এবং রোমাঞ্ছকর হেডলাইনও বাদ দেয়া উচিত।
সিনিয়র বলেন, ‘আত্মহত্যাকে একটি সর্বজনীন স্বাস্থ্য বিষয় হিসেবে গণ্য করা উচিত’। তাই যখন একজন বিখ্যাত ব্যক্তি আত্মহত্যা করে, তখন তা বিনোদন পাতায় ঠাই পাওয়া উচিত নয়। এই নির্দেশিকাতে মিডিয়ার প্রতিবেদন গুলো কিভাবে একটি ইতিবাচক প্রভাব রাখতে পারে তার ব্যাপারেও তথ্য রয়েছে।
তিনি আরো বলেন, প্রতিবেদন গুলোতে আত্মহত্যা প্রতিরোধ বিষয়ক অভিজ্ঞ ব্যক্তির সাক্ষাতকার, যেসকল ব্যক্তির সাহায্যর দরকার তাদের জন্য কি কি সংস্থান আছে তার কথা এবং মানসিক স্বাস্থ্যের অবস্থা আত্মহত্যার জন্য কিভাবে দায়ী, সেই ব্যাপারে আলাপ থাকতে পারে।
গবেষনার জন্য সিনিয়র ২০১১-২০১৪ সালের মধ্যে প্রিন্ট এবং অনলাইনের মূখ্য প্রকাশনা গুলোতে প্রকাশিত প্রায় ৬৪০০ টি সংবাদ বিশ্লেষণ করেন।
ঐ সময়ের মধ্যে ৯৪৭ টি মৃত্যুর কারণ ছিল আত্মহত্যা। দেখা যায়, প্রায় অর্ধেকের বেশি আত্মহত্যার খবরে সেলিব্রেটি আত্মহত্যার হার দ্রুত বৃদ্ধি পেয়েছে। অন্যদিকে ৩৭ শতাংশ সংবাদে তা কমেছে।
সিনিয়র জানান, সব বিখ্যাত ব্যক্তির আত্মহত্যার খবর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে না। তিনি নির্দেশ করেন ১৯৯৪ সালে মিউজিশিয়ান কার্ট কোবেইনের আত্মহত্যার খবরে দিকে। কোবেইনের আত্মহত্যার খবর একধরনের চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছিল কিন্তু তা আত্মহত্যার হার বৃদ্ধিতে কোনো ভূমিকা রাখে নি। তবে ঐ সময় আত্মহত্যার হটলাইনে সাহায্য চাওয়ার পরিমাণ বেড়ে গিয়েছিল।
নতুন গবেষণায় পাওয়া গেছে খুব কম আত্মহত্যার প্রতিবেদনেই নিরদেশিকার পরামর্শ অনুযায়ী সেই উপাদানগুলো ছিল। এবং মাত্র ২ শতাংশ প্রতিবেদনে স্থানীয় আত্মহত্যা প্রতিরোধ সংস্থার ব্যাপারে কোনো খবর ছিল।
এই গবেষণার সম্পাদক কোলম্যান বলেন, ‘আমার মনে হয় এটা জানা খুব গুরুত্বপূর্ণ যে সাংবাদিকরা কেন এই নির্দেশিকা অনুসরণ করছেন না। হয় তারা জানে না যে এরকম একটি নির্দেশিকা আছে অথবা তারা তা জেনেও ইচ্ছা করে উপেক্ষা করে’।
তথ্যসূত্র: হেল্থ ডে।
অনুবাদটি করেছেন মাঈশা তাহসিন অর্থী।