বাবা-মায়ের ধর্মীয় বিশ্বাস শিশুর আত্মহত্যায় প্রভাবিত

0
28

বয়ঃসন্ধিকালীন ছেলে-মেয়ে ধর্মের ব্যাপারে যাই ভাবুক না কেন, বিশেষ করে মেয়েরা যাদের বাবা-মা ধার্মিক তাদের ক্ষেত্রে আত্মহত্যায় মৃত্যুর হার কম বলে এক গবেষণায় উঠে এসেছে।
কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা জানান, ধর্মীয় পরিবেশে বড় হওয়া কিশোর-কিশোরীদের আত্মহত্যার হার কম হওয়ার সঙ্গে অন্যান্য সাধারণ ঝুঁকিপূর্ণ ব্যবহার সম্পর্কিত নয়। যেমন, বাবা মা ডিপ্রেশনের মধ্য দিয়ে যেত কিনা কিংবা তাদের মধ্যে আত্মহত্যা প্রবণতা ছিল কিনা ইত্যাদি অন্তর্ভুক্ত।
এই গবেষণাটি এটা প্রমাণ করে না যে, ধর্মীয় পরিবেশে বেড়ে উঠা আত্মহত্যা প্রতিরোধ করে। এটা শুধু এই দুটোর মধ্যে এক ধরণের সম্পর্কের কথা বলে।
আমেরিকান এসোসিয়েশন অফ সুইসাইডোলজির ক্লিনিকাল বিভাগের চেয়ারম্যান মেলিন্ডা মুর বলেন, আমরা জানি যে আধ্যাত্মিক বিশ্বাস এবং এর চর্চা মানুষের মধ্যে বৃহৎ আকারের সম্প্রীতি অনুভব করতে, আশা এবং জীবনের অর্থ প্রদান করতে সাহায্য করে।
এছাড়াও আধ্যাত্মিক সম্প্রদায়গুলো সংকটে থাকা ব্যক্তিদের আশা এবং উদ্দেশ্য প্রদাণ করে থাকে বলে তিনি জানান। যদিও খ্রিস্টীয় চার্চের যাজকরা পেশাদার মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক অভিজ্ঞ ব্যক্তি না। কিন্তু তারা ব্যক্তিদের যথাযথ যত্ন নেয়ার ব্যাপারে বলতে পারেন।
মুর আরো বলেন, যাদের এই গবেষণায় কোনো ভূমিকা ছিলো না তারা বলছেন ধর্ম আত্মহত্যাকে নিষিদ্ধ করেছে। কিন্তু এই সকল ধর্মীয় সম্প্রদায় গুলোর উচিত তাদের যত্নের আওতায় ঝুঁকিপূর্ণ ব্যক্তিদের সাহায্য নিয়ে আসা। যে কোনো সম্প্রদায় যারা কিনা, দয়াশীল এবং যত্নশীল, এই ব্যাপারে প্রতিরক্ষামূলক ভূমিকা পালন করবে পারে।
এমন না যে ধর্মীয় ব্যক্তিদের আত্মহত্যার চিন্তা মাথায় আসে না। কিংবা তারা আত্মহত্যার চেষ্টাও করে। বরং একটি ধর্মীয় সম্প্রদায় ঐ সকল ব্যক্তিদের একাত্মতা এবং সাহায্যের এক ধরনের মূল্যবান অনুভূতি দেয়, যারা কিনা নিজেদের ক্ষতি করার কথা ভাবছে।
মুর বলেন, আমরা জানি কি কি বিষয় একজন ব্যক্তিকে আত্মহত্যাপ্রবণ করে তুলে। সেগুলোর মধ্যে আপনার সমাজের সঙ্গে সংযোগ অনুভবের অক্ষমতা, মনে হওয়া যে আপনি একজন বোঝা এবং আপনার জীবনের কোনো মূল্য নেই এসব কারণই উল্লেখযোগ্য।
১২ শতাংশের মত আমেরিকান কিশোর-কিশোরীরা বলে, তারা আত্মহত্যার চিন্তা করে। সেখানের ১৫ থেকে ১৯ বছরের কিশোর কিশোরীদের মৃত্যুর পিছনের সবচেয়ে বড় কারণ এই আত্মহত্যা।
এই গবেষণাটির জন্য প্রিয়া উইকিমারাত্নে এবং তার সহকর্মী গন নিউ ইয়র্ক স্টেট সাইকিয়াট্রিক ইন্সটিটিউট এবং কলাম্বিয়া ইউনির্ভাসিটিতে তিন প্রজন্মের তথ্য পরীক্ষা করেন। যেখানে ২১৪ জন শিশু এবং ১১২ টি পরিবারের ৩০ বছরের তথ্য অন্তর্ভুক্ত আছে।
এদের মধ্যে অশিকাংশই খ্রিষ্ঠান সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত এবং বেশ কয়েকজন গির্জার আশে পাশে বসবাস করতো। প্রায় সবাই শ্বেতাঙ্গ ছিল।
কিশোর-কিশোরী যারা ধর্মকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করতো, গবেষকরা পেয়েছে যে তাদের মধ্যে কিশোরীদের ক্ষেত্রে আত্মহত্যার ঝুঁকি কম। কিন্তু কিশোরদের ক্ষেত্রে তা দেখা যায়নি। যারা গির্জায় যায় তাদের ক্ষেত্রে গবেষকরা একই সম্পর্ক দেখেছেন।
যখন বাবা-মা এবং শিশুদেরকে একই সঙ্গে দেখা হয়, তখন গবেষকরা দেখেন, যে সকল বাবা-মা ধর্মকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করে তাদের সন্তানদের আত্মহত্যার ঝুঁকি কম।
কলম্বিয়া ইউনিভার্সিটির বায়োস্ট্যাটিস্টিক এবং সাইকিয়াট্রির সহযোগী অধ্যাপক উইকিমারাত্নে বলেন, ‘আমাদের গবেষণা ইঙ্গিত দেয় যে, আত্মহত্যা প্রবণ আচরণের উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ শিশু এবং কিশোরদের সাহায্য করার জন্য বিকল্প এবং অতিরিক্ত পন্থা রয়েছে’।
তিনি আরো বলেন, যখন কোনো শিশুকে মানসিক মূল্যায়নের জন্য নিয়ে আসা হয়, তখন তার বাবা মাকে তাদের আধ্যাত্মিক ইতিহাস সম্পর্কে প্রশ্ন করা, শিশুটির নিজস্ব ধর্মীয় বিশ্বাস ও চর্চাকে মূল্যায়ন করা হয়। বিশেষ করে মেয়েদের ক্ষেত্রে, এই কৌশলগুলোর অন্তর্গত।
 
তথ্যসূত্র: হেল্থ ডে।
অনুবাদটি করেছেন মাঈশা তাহসিন অর্থী।

Previous articleসামাজিক জীবনে নিকোটিনের প্রভাব
Next articleশিশুদের দেখেও মাদকাসক্ত মায়েদের মস্তিষ্ক থাকে প্রতিক্রিয়াহীন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here