বডি ডিসমরফিক ডিসঅর্ডার:
আঠাশ বছরের (২৮) রাজেশ একটি নামী কোম্পানির পেশাদার। সে বাবা-মায়ের এক ছেলে এবং তাঁর একটি বোন রয়েছে। তাঁদের বাবা-মা উভয়েই চাকরি করেন এবং সন্তানরা সবকিছুতেই সেরা হবে এমন আশাও রয়েছে তাঁদের মনে। ছাত্রাবস্থা ও কর্মজীবন— দুই ক্ষেত্রেই রাজেশ বরাবর প্রশংসা এবং সুনাম অর্জন করেছেন। একসঙ্গে অনেক কাজ দক্ষতার সঙ্গে সামলানোর জন্য রাজেশের বেশ নাম-ডাক রয়েছে এবং এই কারণে সে নিজেকে নিয়ে খুব গর্বিত। পড়াশোনায় ভালো হওয়ার জন্য রাজেশ কখনও খেলাধূলা করেনি এবং প্রায়শই তাকে তার বন্ধুরা শিক্ষকদের ধামাধরা ও ক্যাবলা ইত্যাদি বলে ব্যঙ্গ, বিদ্রূপ করত। সে ছিল খুব লম্বা ও রোগা।
নিজের চেহারা সম্পর্কে রাজেশ মাঝে-মাঝে বেশ অতিরিক্ত ওয়াকিবহাল এবং চিন্তান্বিত হয়ে পড়ত। এইভাবে তার মনে একপ্রকার বদ্ধমূল ধারণা জন্মেছিল যে, তার কপাল এবং কানের গঠনে ত্রুটি রয়েছে। আর এই কারণে সে দীর্ঘ সময় ধরে আয়নার সামনে ঠায় দাঁড়িয়ে থাকত। যখন রাজেশ অফিসে কাজ করত তখনও মাঝে-মাঝেই সে অফিসের বিশ্রামকক্ষে গিয়ে দেখত যে কপাল ও কানের ভুল গঠনের জন্য তার চুলের বিন্যাস ঠিকঠাক আছে কিনা।
রাজেশ তার এই সমস্যার জন্য বহুবার ডাক্তারের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে কিন্তু নিজের পরিবার বা চিকিৎসককে রাজেশ তার এহেন কার্যকলাপ সম্বন্ধে বিশ্বাস জোগাতে ব্যর্থ হয়েছে। যখন কেউই তার সঙ্গে একমত হয়নি তখন সে মনে মনে খুব দুঃখও পেয়েছে। মনের এহেন বদ্ধমূল ধারণার জন্য তার কাজকর্ম ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্তও হয়েছে। যাইহোক শেষ পর্যন্ত পরিবারের সদস্যদের সহযোগিতায় তাকে একজন সার্জেন বা শল্য চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাওয়া হয় এবং এই সার্জেনই রাজেশকে একজন মানসিক স্বাস্থ্য-সংক্রান্ত বিশেষজ্ঞের কাছে নিয়ে যাওয়ার জন্য সুপারিশ করেন।
এই কাল্পনিক ঘটনাটির মধ্যে দিয়ে এটাই তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে যে, আমাদের বাস্তব জীবনেও এহেন সমস্যা দেখা দিতেই পারে।
আমাদের অনেকের মনের মধ্যেই নিজের দেহের গঠনগত নানা ত্রুটি সম্বন্ধে বহু সমস্যা রয়েছে। কিছু মানুষ আছেন যাঁরা নিজেদের চেহারার গঠন নিয়ে খুবই খুশি থাকেন বা স্বস্তি বোধ করেন। কেউ লম্বা হওয়া পছন্দ করেন, কারও আবার ছোটখাটো চেহারা ভালো লাগে, অনেকে পেশিবহুল শরীর বানাতে চান, আবার কেউ কেউ মোটা চুল ভালোবাসেন। কিন্তু কিছু মানুষ নিজের শরীরের গঠন বা বাহ্যিক চেহারা সম্পর্কে মনের মধ্যে অহেতুক চিন্তা এবং এমন সব বদ্ধমূল ধারণার জন্ম দেন যে, যা শেষ পর্যন্ত মারাত্মক সমস্যার আকার নেয়। এমনকী, এই ধরনের সমস্যায় আক্রান্তরা স্কুল, কলেজ বা কাজের জায়গায় যাতায়াত করা বন্ধ করে দেয়।
ত্রুটিপূর্ণ দেহকাঠামোজনিত বিকার বা বডি ডিসমরফিক ডিসঅর্ডার (বিডিডি) একটি সেই ধরনের অসুখ, যেখানে একজন মানুষের মনে তার ত্রুটিযুক্ত শারীরিক কাঠামো বা চেহারার গড়ন নিয়ে নানা অলীক চিন্তাভাবনার উদয় হয়।
সাধারণভাবে বডি ডিসমরফিক ডিসঅর্ডার সমস্যায় আক্রান্ত ব্যক্তির মনে তার নাক, গায়ের রং, কান বা ঠোঁটের গড়ন প্রভৃতি নিয়ে খুঁতখুঁতানি থাকে। এই কারণে তারা আয়নায় বারবার নিজেদের দেখে বা পরিবারের সদস্য, বন্ধুদের কাছে নিজেদের ত্রুটিযুক্ত চেহারার গড়ন সম্পর্কে নানা প্রশ্ন করে। এইভাবে নিজেদের শরীরের গঠনগত অস্বাভাবিকতা সম্বন্ধে তারা মনে নানা বদ্ধমূল ধারণা জন্মায় এবং সমস্ত সামাজিক যোগাযোগ থেকে নিজেদের বিচ্ছিন্ন করে নেওয়ার প্রবণতা দেখা দেয়।
বডি ডিসমরফিক ডিসঅর্ডার এর কারণে কারও কারও মধ্যে মানসিক চাপ এতটাই বেড়ে যায় যে, সার্জারির মাধ্যমে তারা তাদের চেহারার কাঠামোগত ত্রুটি দূর করতে উঠে-পড়ে লাগে। যদিও এহেন পদ্ধতি অবলম্বন করা সত্ত্বেও তাদের মনের ভুল ধারণার কোনও পরিবর্তন চোখে পড়ে না। যেসব মানুষের মধ্যে এহেন ত্রুটি প্রকৃত রূপে থাকে বা যাদের ত্রুটি আপাতভাবে চোখে ধরা পড়ে না, তাদের উভয়ের মধ্যেই দেহের কোনও না কোনও অংশের গঠনগত ত্রুটি প্রায়শই অসন্তোষের জন্ম দেয়।
মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ে চিকিৎসকের সরাসরি পরামর্শ পেতে দেখুন: মনের খবর ব্লগ
করোনায় মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক টেলিসেবা পেতে দেখুন: সার্বক্ষণিক যোগাযোগ
করোনা বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য ও নির্দেশনা পেতে দেখুন: করোনা ইনফো
করোনায় সচেতনতা বিষয়ক মনের খবর এর ভিডিও বার্তা দেখুন: সুস্থ থাকুন সর্তক থাকুন