বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস ২০২৫ উপলক্ষে গত ১৩ অক্টোবর ন্যাশনাল ডক্টরস ফোরাম (এনডিএফ), বগুড়ার উদ্যোগে আয়োজন করা হয় একটি বৈজ্ঞানিক সেমিনার। এবারের সেমিনারের বিষয় ছিল “বিপর্যয় ও জরুরি অবস্থায় মনো-আধ্যাত্মিক স্বাস্থ্য (Psycho-Spiritual Health in Catastrophes and Psychotherapies)”।
সেমিনারে মুখ্য আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ও সাইকোথেরাপিস্ট ডা. মো. আজিজুল হাকিম বাপ্পা। তিনি মূল প্রেজেন্টেশনে বিপর্যয় ও জরুরি পরিস্থিতিতে আধ্যাত্মিক উপাদান, বিশ্বাসভিত্তিক কাউন্সেলিং এবং মানসিক সহায়তার প্রয়োগ নিয়ে প্রমাণভিত্তিক (Evidence-based) তথ্য উপস্থাপন করেন। আলোচনায় তিনি বলেন, “আধ্যাত্মিকতা মানসিক স্বাস্থ্যের মতোই গুরুত্বপূর্ণ একটি দিক। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সংজ্ঞা অনুযায়ী, স্বাস্থ্য কেবল শারীরিক নয়—বরং মানসিক, সামাজিক ও আধ্যাত্মিক দিক থেকেও পূর্ণতা অর্জন করতে হয়।”
তিনি আরও বলেন, শারীরিক ও মানসিক রোগের চিকিৎসায় আধ্যাত্মিক উপাদান, কাউন্সেলিং এবং ধর্মীয় বিশ্বাসের ইতিবাচক ভূমিকা রয়েছে। বিশেষত বিপর্যয় বা জরুরি অবস্থায় “Psychological First Aid (PFA)” প্রক্রিয়ায় এসব উপাদানের প্রয়োগে আশাব্যঞ্জক ফলাফল পাওয়া গেছে। দীর্ঘমেয়াদী মানসিক রোগের চিকিৎসায় তিনি জিকর (শিথিলায়ন ব্যায়াম হিসেবে), মোরাকাবা (মাইন্ডফুলনেস মেডিটেশন), ইসলামিক সিবিটি (IICBT) ও সুফিস্টিক সাইকোথেরাপি প্রয়োগের গুরুত্ব তুলে ধরেন।
সেমিনারে প্যানেল অব এক্সপার্ট হিসেবে উপস্থিত ছিলেন টিএমএসএস মেডিকেল কলেজ-এর মনোরোগবিদ্যা বিভাগের প্রধান ও সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. মামুন আল মুজাহিদ।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন এনডিএফ, বগুড়ার সভাপতি ও বিশিষ্ট শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. মো. লিয়াকত আলী। তিনি বলেন, “আধ্যাত্মিক স্বাস্থ্যই সকল সুখের মূল। চিকিৎসকসহ আমাদের সকলের উচিত মানসিক স্বাস্থ্যের পাশাপাশি আধ্যাত্মিক স্বাস্থ্যের প্রতিও যত্নশীল হওয়া।” তিনি মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর জীবনের উদাহরণ তুলে ধরে বলেন, “রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর ঘরে বস্তুগত সম্পদ না থাকলেও সেখানে সুখের কোনো ঘাটতি ছিল না, কারণ তিনি ছিলেন আধ্যাত্মিকভাবে পরিপূর্ণ।”
সেমিনারের সভাপতিত্ব করেন এনডিএফ, বগুড়ার সেক্রেটারি, শিশু সার্জন ও সহকারী অধ্যাপক ডা. মাহবুবুর রহমান সরকার। সঞ্চালনায় ছিলেন অর্থোপেডিক্স ও ট্রমা সার্জন ডা. মো. সেলিম রেজা। স্বাগত বক্তব্য রাখেন এনডিএফ, বগুড়ার সায়েন্টিফিক সেক্রেটারি ও বিশিষ্ট নিউরোসার্জন, সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. ফজলুল হক।
আলোচনার পর উপস্থিত চিকিৎসকরা মুখ্য আলোচক ও প্যানেল সদস্যদের নিকট বিভিন্ন প্রশ্ন উত্থাপন করেন, যার জবাবে বিশেষজ্ঞরা বিস্তারিতভাবে উত্তর প্রদান করেন। উল্লেখ্য, বিশ্বব্যাপী প্রতি বছর ১০ অক্টোবর তারিখে বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস পালিত হয়। এবছরের প্রতিপাদ্য বিষয় ছিল— “বিপর্যয় কিংবা জরুরি অবস্থায়, মানসিক স্বাস্থ্যসেবা যেন পাওয়া যায়।”
আরও দেখুন-