মহামারীর এই দুঃসময়ে সময় কাটানোর মাধ্যম হিসেবে মোবাইল ফোন, টেলিভিশনের ব্যবহার বহুগুণে বেড়ে গেছে। শুধু বড়দের জন্য নয়, বরং শিশুদের জন্যও এই প্রযুক্তি নির্ভরতা এখন এক সমস্যায় রূপান্তরিত হয়ে গেছে প্রায়। যা শিশুদের সুষ্ঠু মানসিক বিকাশের পথে বাঁধা সৃষ্টি করছে।
কোভিড-১৯ থেকে সুরক্ষিত থাকতে শিশু থেকে বৃদ্ধ সব বয়সী মানুষেরা আজ গৃহবন্দী জীবন যাপনে বাধ্য হয়েছে। বড়রা যেমন স্বাভাবিক কাজ কর্ম ঘরে বসে করার প্রয়াস করছে তেমনি শিশুরাও তাদের পড়াশুনা, খেলাধুলা সব কিছু ঘরে থেকেই করছে। অনলাইন ক্লাশের মাধ্যমে শিক্ষকরা পাঠ্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন যেন শিশুরা শিক্ষা ক্ষেত্রে পিছিয়ে না পড়ে। তাছাড়া ঘরে থেকে সময় কাটানোর উদ্দেশ্যে শিশুরা মোবাইলে গেম খেলছে, কার্টুন দেখছে। যে সব পিতা মাতা আগে শিশুদের এই মোবাইল বা টেলিভিশন দেখে সময় কাটানো থেকে দূরে রাখতেন, তারাই আজ পরিস্থিতির চাপে শিশুদেরকে এসব নিয়ে কিছু বলতে পারছেন না। প্রযুক্তি তথা ইলেকট্রনিক ডিভাইসের ব্যবহার কোভিড-১৯ সময় কালকে আমাদের জন্য একটু হলেও সহজ করেছে। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই শিশুরা এর অতিরিক্ত ব্যবহারে বিভিন্ন শারীরিক ও মানসিক জটিলতার সম্মুখীন হচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রেই বিশেষজ্ঞরা পিতা মাতাদেরকে মহামারীর এই অস্বাভাবিক সময়ে শিশুদের এই স্ক্রিন টাইমকে একটু শিথিলতার সাথে দেখতে অনুরোধ করেছেন। কিন্তু অনেক পিতামাতাই এই ক্ষেত্রে বেশ অসুবিধায় পড়েছেন কারণ তারা এটা বুঝতে পারছেন না ঠিক কতোটুকু সময় তাদেরকে এই ছাড় প্রদান করা উচিৎ বা কিভাবেই বা তারা এই কাজটি যথাযথ ভাবে সম্পন্ন করবেন যেন তাদের সন্তানদের এগুলো থেকে কোন ক্ষতির সম্মুখীন না হতে হয়।
শিশুরা মহামারীর এই দুঃসময়ে সব থেকে বেশী সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে। তারা বাইরে গিয়ে খেলাধুলা করতে পারছেনা, বন্ধুদের সাথে দেখা করতে পারছেনা, এবং সারাক্ষণ তাদের ঘরে থেকে পিতা মাতাদের বিভিন্ন বিধি নিষেধ মেনেই সময় কাটাতে হচ্ছে। এমন পরিবেশ শিশুর মাঝে সৃষ্টি করছে চরম মানসিক অবসাদ এবং বিষণ্ণতা। এই অবসাদ থেকেই তারা বিভিন্ন ইলেকট্রনিক ডিভাইস যেমন, টিভি, মোবাইল, ভিডিও গেইমস ইত্যাদির প্রতি আকৃষ্ট হচ্ছে এবং এই ব্যবহার ধীরে ধীরে আসক্তিতে পরিণত হচ্ছে। পিতামাতাদের ঠিক এই ঝোঁক বা আসক্তির সমাধান করতে হবে। কখনোই এমন নয় যে আপনি আপনার শিশুকে টিভি দেখতে দেবেন না বা মোবাইল ধরতে দেবেন না। কিন্তু আপনাকে যেটি করতে হবে সেটি হল শিশুর যথেচ্ছ ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। তারা টিভিতে কি কি দেখবে এবং কতোটা সময় ধরে দেখবে সেটি আপনাকে নির্ধারণ করতে হবে। অতিরিক্ত সময় ধরে টেলিভিশন দেখা বা শিশুদের মানসিক বিকাশে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে এমন কিছু দেখা থেকে তাদের বিরত রাখতে হবে। আপনাকে মনে রাখতে হবে, শিশুরা অবুঝ। ভালো মন্দ না বুঝেই মনের খেয়াল খুশি মত তারা কাজ করে। আর এই মহামারীর মত অস্বাভাবিক সময়ে যখন তাদের মাঝে বিভিন্ন মানসিক চাপ এবং অবসাদ কাজ করছে তখন তাদের মন ভালো রাখতে তারা অনেক সীমাই অতিক্রম করতে পারে। তাদেরকে যদি আপনি আরও বিধি নিষেধের মাঝে বাঁধতে চেষ্টা করেন তাহলে সেটি তাদের মানসিক অবস্থার উপর আরও নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। তাই তাদের মানসিক চাহিদাকে গুরুত্ব দিতে হবে সব থেকে বেশী। তাদের চরম ভাবে অবরুদ্ধ না করে বরং মনোযোগ অন্য দিকে সরিয়ে নেওয়ার প্রয়াস করুন। নিয়ন্ত্রণ করুন, নিষিদ্ধ নয়।
আপনার শিশুর সামনে একটি পজিটিভ মডেল হয়ে ওঠার প্রচেষ্টা করুন। তাদেরকে আরও বেশী সময় দিন যেন তারা নিজেকে একাকী না ভাবে। একাকীত্ব এবং অবসাদ থেকেই মূলত শিশুদের মাঝে এই প্রযুক্তি নির্ভরতা বেড়ে যায়। তাই তাদের মনোযোগ এসব কিছু থেকে সরিয়ে অন্য দিকে নেবার প্রয়াস করুন। এতে অবশ্যই তাদের মাঝে ইলেকট্রনিক ডিভাইস ব্যবহারের ঝোঁক কমবে। তাছাড়া তারা যেন তাদের সুযোগের অপব্যবহার না করে সেদিকেও লক্ষ্য রাখুন। তারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কার সাথে যোগাযোগ রাখছে, কি কথা বলছে, বা টেলিভিশনে কি ধরণের অনুষ্ঠান দেখছে এসব বিষয়ে সচেতন থাকুন। এতে আপনার শিশু ভুল পথে পরিচালিত হবেনা এবং মহামারীর মত দুঃসময়েও তাদের মানসিক বিকাশ ও ত্বরান্বিত হবে।
ঠিক যেভাবে আপনি আপনার শিশুর শারীরিক স্বাস্থ্যের খেয়াল রাখছেন, সেভাবে তার মানসিক বিকাশের দিকেও মনযোগ দিন। আর তাদের সুষ্ঠু মানসিক বিকাশের লক্ষেই ইলেকট্রনিক ডিভাইসের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করা একান্ত প্রয়োজন।
স্বজনহারাদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য পেতে দেখুন: কথা বলো কথা বলি
করোনা বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য ও নির্দেশনা পেতে দেখুন: করোনা ইনফো
মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক মনের খবর এর ভিডিও দেখুন: সুস্থ থাকুন মনে প্রাণে