খুব কাছের কারও মৃত্যু এবং সেটি যদি অকাল মৃত্যু হয়, তাহলে সেটি মেনে নেওয়া সত্যিই খুব কঠিন। কিন্তু যেহেতু মৃত্যু একটি অপরিবর্তনীয় স্বাভাবিক প্রাকৃতিক নিয়ম, তাই একে যে কোন প্রকারে হোক মেনে নিতেই হয়।
খুব কাছের কারও মৃত্যুতে নিজেকে একাকী মনে হওয়া কিংবা বিষণ্ণতা ও মানসিক পীড়ায় ভোগা স্বাভাবিক একটি ঘটনা। খুব কঠিন হৃদয়ের মানুষও এমন অবস্থায় মানসিক ভাবে ভেঙ্গে পড়ে। এ সময় পরিবারের অন্যান্য ব্যক্তি ও বন্ধুদের সহযোগিতা মানসিক ভাবে পীড়িত ব্যক্তির হৃদয়কে কিছুটা হলেও শান্ত করতে পারে।
তবে এমন অনেকেই আছে যাদের মানসিক অবস্থা এতোটাই খারাপ হয়ে যায় যে তারা ভ্রমের শিকার হয়। তাদের মানসিকভাবে সুস্থ করে তোলা আরও কঠিন হয়ে পড়ে। তাই শোকে পীড়িত এসব মানুষের বিশেষ সহযোগিতার প্রয়োজন হয়, যা তাদের শোক সামলে নেবার মানসিক শক্তি প্রদান করে।
পরিবার বা কাছের কারও মৃত্যু, যেমন- স্বামী, স্ত্রী, ভাই, বোন, সন্তান কিংবা বন্ধুর অকাল মৃত্যু মানুষকে চরম মানসিক আঘাত প্রদান করে। গবেষণায় দেখা গেছে, এ ধরণের মানসিক আঘাত পাওয়া ব্যক্তিদের মাঝে মানসিক পীড়া ১৬ সপ্তাহ থেকে ৩০ বছর পর্যন্তও স্থায়ী হতে পারে।
এসব মানুষের মধ্যে অধিকাংশেরই অকাল প্রয়াণকৃত ব্যক্তি ধীরে ধীরে, যেমন ক্যানসার আক্রান্ত হয়ে বা অন্য কোন দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে চোখের সামনেই অসহায়ের মতো মারা গেছে অথবা খুবই আকস্মিকভাবে মারা গেছে। তারা তাদের প্রিয় মানুষের এমন মৃত্যু কোনভাবেই মেনে নিতে পারেনা।
ফলে তাদের মাঝে দেখা দেয় নানা ধরণের মানসিক সমস্যা। যা চরম পর্যায়ে তাদের বোধ বুদ্ধি শুণ্য করে দিতে পারে এবং চরম বিষণ্ণতার সৃষ্টি করতে পারে। অনেকের মাঝেই এমন ধারণা তৈরি হয় যে মৃত্যুর পরেও তারা তাদের সাথেই আছেন বা এমন ভ্রম তৈরি হয় যে তারা তাদের দেখতে পাচ্ছেন।
এমন মানসিক সমস্যা সম্পন্ন শোকাকুল ব্যক্তির অবশ্যই মানসিক একটি সাপোর্ট প্রয়োজন যা তাকে বাস্তবতা বুঝতে এবং মেনে নিতে সহায়তা করবে।
সাধারণত এমন মানসিক সমস্যায় ভোগা ব্যক্তিদের সব থেকে বেশী প্রয়োজন পরিবার ও বন্ধুদের সহায়তা। তাদের ধীরে ধীরে আবার স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে তাদেরকে স্বাভাবিক দৈনন্দিন জীবনের সাথে পরিচয় করানো দরকার।
ভ্রমণ, সখের কোন কাজ করা, শারীরিক অন্য যে কোন কাজে তাকে ব্যস্ত রাখা বা ধর্মীয় অনুশাসনের আলোকে তার মানসিক অবস্থার পরিবর্তনের প্রয়াস করা প্রয়োজন।
প্রয়াত ব্যক্তির অভাব বুঝতে না দিয়ে তাকে সর্বত ভাবে মানসিক সাপোর্ট প্রদানের প্রয়াস করা পরিবার এবং বন্ধু বান্ধবদের একটি অবশ্য পালনীয় কর্তব্য।
তাছাড়া অনেকের ক্ষেত্রেই স্বাভাবিক পরিচর্যা এবং সহমর্মিতা মানসিক অবস্থা উন্নয়নে সহায়ক ভূমিকা পালন নাও করতে পারে। তাদের জন্য অবশ্যই কোন মনরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে এবং প্রয়োজনে কাউন্সেলিং এর ব্যবস্থা করতে হবে।
এ ধরণের সমস্যা সমাধান না হলে অনেকেই মানসিক পীড়া সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যার মতো চরম সিদ্ধান্তও গ্রহণ করে। যা একেবারেই কাম্য নয়।
প্রিয় জনের অকাল মৃত্যু মনকে বিচলিত করে এবং মনোবল ভেঙ্গে দেয়। মনের মাঝে সৃষ্টি করে চরম অসহায়ত্ব। কিন্তু মৃত্যুকে মেনে নিতেই হয়। মেনে নিয়েই জীবনে সামনে এগিয়ে যেতে হয়।
এই কঠিন বাস্তবতা যারা মেনে নিতে পারেন না তাদের মাঝেই বিভিন্ন মানসিক সমস্যা সৃষ্টি হয়। আর তাদের জন্যই বিশেষ মানসিক পরিচর্যা ও সহায়তার প্রয়োজন হয়, যেন তারা আবার স্বাভাবিক জীবন যাপনে অভ্যস্ত হতে পারে।
অনুবাদ করেছেন: প্রত্যাশা বিশ্বাস প্রজ্ঞা
স্বজনহারাদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য পেতে দেখুন: কথা বলো কথা বলি
করোনা বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য ও নির্দেশনা পেতে দেখুন: করোনা ইনফো
মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক মনের খবর এর ভিডিও দেখুন: সুস্থ থাকুন মনে