প্রবীণদের আক্রমণাত্মক আচরণে পরিবারের করণীয়

ডা. ফাতেমা জোহরা

প্রবীণ ব্যক্তি বলতে সাধারণত ষাটোর্ধ্ব ব্যক্তিদের বোঝানো হয়। বাংলাদেশে বর্তমানে প্রবীণ জনসংখ্যা প্রায় দেড় কোটি। জীবনের সচল সময় পেরিয়ে যখন কোনো মানুষ প্রবীণত্বে পা দেন তখন অনেক কিছুই তিনি হারিয়ে ফেলেন।

প্রবীণ ব্যক্তিরা শারীরিক শক্তি, সুস্থতা, অর্থনৈতিক স্বাধীনতা, চলাচলের স্বাধীনতার পাশাপাশি অনেকে হারিয়ে ফেলেন বন্ধু এমনকি দীর্ঘদিনের সঙ্গীকে। অনিদ্রা, অবহেলা, দীর্ঘকালীন শারীরিক ও মানসিক রোগ ইত্যাদিও আবির্ভূত হয় প্রবীণ বয়সের অনুষঙ্গ হিসেবে।

আর অবশ্যম্ভাবীভাবে জীবনের এই পরিবর্তন প্রবীণ ব্যক্তিদের মনের ওপর প্রভাব ফেলে। কেউ কেউ মানসিক সেই পরিবর্তনের সঙ্গে, পারিপার্শ্বিকতার সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারেন, কেউ কেউ পারেন না।

বয়স এবং অসুস্থতা মানুষের আচরণকে বদলে দিতে পারে। প্রবীণত্বে পৌঁছে জীবনের বদলগুলোতে অনেকে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত বোধ করেন। কেউ কেউ আক্রমণাত্মক আচরণ করেন। অনেকে আবার অন্য রোগের প্রভাবে আক্রমণাত্মক আচরণ করেন।

পরিবারের সদস্যদের এ সময়ে হতে হয় বিশেষভাবে সহানুভূতিশীল এবং সহনশীল। প্রবীণের মানসিক এবং শারীরিক বিপর্যয়গুলোকে মনে রেখে ভাবতে হবে, এ পরিবর্তন তার স্বেচ্ছাকৃত নয়। জীবনের অনিবার্য পরিণতি এটা।

যদি পরিবারের প্রবীণ সদস্য আক্রমণাত্মক আচরণ করেন সে পরিস্থিতিতে পরিবারের সদস্যরা যেসব ভূমিকা পালন করতে পারেন:

প্রবীণ ব্যক্তিদের ক্রোধের মূল কারণটি শনাক্ত করার চেষ্টা করুন। কেন তা ট্রিগার হয়েছিল তা বোঝার চেষ্টা করুন। এই পরিস্থিতিতে কীভাবে তাদের সাথে আচরণ করতে হবে তা সম্পর্কে আপনাকে জানতে হবে।

যাতে আপনি পরিস্থিতি খারাপ করে না দিয়ে তা নিয়ন্ত্রণে আনতে পারেন।

প্রবীণ ব্যক্তিদের সাথে তর্ক না করে প্রশ্ন জিজ্ঞেস করুন। তারা কী বলে শুনন, তাদের অনুভূতিগুলোর সঙ্গে একমত প্রকাশ করুন। তাদের এই আচরণটি অন্যভাবে প্রকাশ করতে পারেন কিনা সেই চেষ্টা করুন। যদি এটি কাজ না করে, তবে কিছুক্ষণের জন্য নিজেকে সরিয়ে রাখুন।

প্রবীণ ব্যক্তিদের সাথে শান্তভাবে কথা বলুন, সহজ বাক্য ব্যবহার করুন। কোনো ইতিবাচক কাজ করুন যা তারা করতে পারে। যেমন একটি পুরোনো স্মৃতি যা তাদের আনন্দ দেয়। তাদের আক্রমণাত্মক আচরণটি ব্যক্তিগতভাবে গ্রহণ করবেন না।

গবেষণায় দেখা গেছে যে প্রবীণদের আক্রমণাত্মক আচরণ কমাতে এবং শান্ত করতে গান শোনানো সাহায্য করে। তাদের কোনো শারীরিক বা মানসিক অসুস্থতা থাকলে তার চিকিৎসা করুন। প্রয়োজনীয় ওষুধ, কাউন্সিলিং সেইসঙ্গে নিয়মিত ফলোআপ করুন।

যারা পরিবারের প্রবীণ সদস্যদের দেখাশোনা করেন তাদের কোনো মানসিক-শারীরিক সমস্যা যদি হয়ে থাকে তাহলে তার চিকিৎসা করুন।

ডা. ফাতেমা জোহরা

সহকারী অধ্যাপক, মানসিক রোগ বিভাগ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া মেডিক্যাল কলেজ।

Previous articleমানসিক সমস্যায় ভুগছি তিন বছর যাবত
Next articleমেসির রেকর্ডে শিরোপা প্রত্যাশী আর্জেন্টিনা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here