কথায় আছে যেখানেই সমস্যা, সেখানেই সমাধান । আসলেই কি তা সত্য? চলুন জেনে নেওয়া যাক….
এই ভূখণ্ডের একটি প্রাণীও বলতে পারবে না, তার জীবনে কোন সমস্যা আসেনি বা আসবে না। সমস্যা আসবেই তবে বেঁচে থাকার জন্য প্রত্যেকটি প্রাণীকেই সেই সমস্যা সমাধানের উপায় খুঁজতে হয়।
বিশেষ করে মানুষের জন্য তা নিত্যদিনের সঙ্গী। মনোবিজ্ঞান বুঝতে হলে সবচেয়ে সহজ উপায় কোন একটি ঘটনার মাধ্যমে ব্যাখ্যা প্রদান। তাই লেখার শুরুতেই একটি গল্প বলতে চাই।
অনেক বছর আগের কথা, কোন এক জমিদার বাড়িতে একটি কুকুর ছিল। যুবক বয়সে প্রভুভক্তির সাথে জমিদার বাড়ি শত্রু মুক্ত রাখত কুকুরটি।
কুকুরটি একদিন দুর্ভাগ্য বসত অগভীর একটি গর্তে পড়লো। কিন্তু গর্তটির গভীরতা কুকুরের উচ্চতা থেকে বেশি হওয়ায় অবলা প্রাণীটি উঠে আসতে পারছিল না। কুকুরটির চিৎকারে মালিক এবং আশপাশের মানুষ ছুটে আসল। কিন্তু ওরাও বুঝে উঠতে পারল না কী করবে!
ঘণ্টাখানেক নানাভাবে চেষ্টা করার পরও যখন কুকুরটাকে উপরে তুলে আনা গেল না মালিক তখন চিন্তা করল, গর্তটি আগে থেকেই বেশ বিপজ্জনক। এর পূর্বে কয়েকটি বাচ্চা গর্তে পড়ে আহত হয়েছিল। গর্তটা এমনিতেই ভরাট করতে হবে, তার উপর কুকুরটারও এখন অনেক বয়স হয়ে গেছে। সে আর আগের মত পাহারা দিতে পারে না।
তাই মালিক সিদ্ধান্ত নিলেন জীবিত কুকুরসহ গর্তটি ভরাট করে ফেলবে। মালিক সবাইকে ডাক দিয়ে হুকুম দিল। সবাই হাতে বেলচা এবং কোদাল নিয়ে পাশ থেকে মাটি কেটে গর্তে ফেলতে লাগল। কিছু মাটির দলা গিয়ে কুকুরটির উপরেও পড়ল। ওদের মাটি ফেলা দেখে কুকুরটি বুঝতে পারল কী ঘটতে চলেছে, প্রাণীটি ভয়ে-দুঃখে নিরবে কাঁদতে লাগল।
কিছুক্ষণ মাটি ফেলার পরে সবাই হঠাৎ চমকে গেল। কারণ কুকুরটি অদ্ভুত একটা কাণ্ড করে বসেছে। সবাই যখন কুকুরটির উপরে মাটি ফেলছে, কুকুরটি তখন গা-ঝাড়া দিয়ে মাটি নিচে ফেলে দিচ্ছে এবং এক-পা, এক-পা করে ভরাট হওয়া জায়গাতে অবস্থান নিচ্ছে।
সবাই এবার দ্রুত কুকুরটির উপরে মাটি ফেলতে শুরু করল। কুকুরটিও তত দ্রুত মাটি গায়ের ওপর থেকে ঝেড়ে ফেলে ভরাট হওয়া জায়গাতে এসে দাঁড়ায়। এভাবে কিছুক্ষণ মাটি ফেলার পর সবাই অবাক হয়ে লক্ষ্য করল গর্তটি প্রায় ভর্তি হয়ে গেছে। অবশেষে কুকুর গর্ত থেকে বেরিয়ে আসল।
জীবনে চলার পথে এমন অসংখ্য হোঁচট খেয়ে গর্তে পড়বেন আপনি, যা থেকে উঠে আসার মতো সক্ষমতা হয়তো আপনার থাকবে না। যার জন্য জীবন যৌবন উৎসর্গ করবেন সেই মালিকসহ আশপাশের মানুষগুলো আপনাকে টেনে তোলার পরিবর্তে আপনাকে আরো ডুবিয়ে দিতে চাইবে।
কিন্তু এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পেতে আপনাকে ওই কুকুরটির মতই গা থেকে আবর্জনাগুলো একটু একটুকরে ঝাড়া দিয়ে ফেলতে হবে, যতক্ষণ না ওই আবর্জনাতে গর্ত পূর্ণ হয়ে যায়। যখনই সমস্যা এসে আপনার শরীর এবং মনের উপরে চেপে বসবে, প্রতিবার একটু একটু করে ঝাড়া দিয়ে সরিয়ে দিবেন।
তারপর মাথা উঁচু করে একটু আগে ঝেড়ে ফেলে দেওয়া সমস্যার উপরে গিয়ে দাঁড়াবেন। প্রতিটি সমস্যাই আবর্জনার মতো। তাই যত দ্রুত সম্ভব সমস্যা গুলোকে ঝেড়ে পদপিষ্ট করতে পারবেন তত দ্রুত সফলতার মুখ দেখবেন।
আপনি থেমে থাকলে আবর্জনার পাহাড় এসে আপনাকে জীবন্ত কবর দিয়ে দেবে। আর এভাবেই শেষ হয়ে যেতে পারে একটি জীবনের গল্প। এখন আপনার সিদ্ধান্ত আপনাকেই নিতে হবে। কোন পথে হাঁটতে চান আপনি! সমস্যা নাকি সমাধানের?
স্বজনহারাদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য পেতে দেখুন: কথা বলো কথা বলি
করোনা বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য ও নির্দেশনা পেতে দেখুন: করোনা ইনফো
মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক মনের খবর এর ভিডিও দেখুন: সুস্থ থাকুন মনে প্রাণে