পরশ্রীকাতরতা মানসিক প্রশান্তির অন্তরায়

পরশ্রীকাতরতা মানসিক প্রশান্তির অন্তরায়
পরশ্রীকাতরতা মানসিক প্রশান্তির অন্তরায়

নিজের ও অন্যের ক্ষতি না করে আমার মন যা চায় তাই করা উচিত কিন্তু আমরা কি পারি সবসময় যা ভাবি তাই করতে ?
কেন পারিনা? পরিবারের,সমাজের,আত্মীয়,প্রিয়জনের মনে আমার সম্পর্কে যে ভালো ইমেজ অর্থাৎ À+ হারিয়ে ফেলার ভয় , এই ভয় নামের মনের কাঁটা কিন্তু ঠিকই আমার মনে খছ খছ খছ খছ করছে , এই মনের কাঁটা কে ঢাকার জন্য এর উপর একটা ঢাকনা বাবহার করে প্রকৃত ভালো লাগার বা থাকার চেষ্টা মাত্র আমরা সবসময় করেই যাই, আসলে কি তাই?
অবশ্যই সবার জন্য এমনটি নাও হতে পারে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে অন্যদের বলতে দেখা যায়, আমি একা, একা একা লাগে। অর্থাৎ আমি একা বড় একা আমার আপন কেউ নেই , মনের ভেতরে একেবারে ভেতরে এমনি অনুভব হয় । যাই হোক, আসলেই কি মানুষ একা ?
আমি যদি আপনাকে বলি আপনার পরিচয় কি ? আপনি বললেন, আমি ডাক্তার সাথে বেশ বড় বড় ডিগ্রী বা ইঞ্জিনিয়ার যেভাবে বললে নিজেকে আরো বেশি হাইলাইট বা হাইফাই ভাবে উপস্থাপন করা যায় । এটি তো ক্যারিয়ারের দিক থেকে। এরপর আমি কে ? আমার পরিচয় কি?
ক্য়ারিয়ারের পরিচয় তো একটা মানুষের জীবনের মূল বা সবকিছু হতে পারে না কারণ ক্য়ারিয়ারও একটা পর্যায়ে এসে অবসর নেয় । তখন মানুষ পূর্বের মতো ব্যাক্তিকে মূল্যায়ন করে না। আর সেই সময়, বাক্তি সামাজিক বন্ধন গুলোর দিকে এগিয়ে যায় এবং এই সামাজিক বন্ধন গুলো বাক্তির মৃত্যুর পর ও পরিচয় ধরে রাখে।
বাস্তবে রিলেশনশিপ এতো সহজ কথা নয় শুনতে যতই মধুর আর বলতে যতই সহজ মনে হোক না কেন। রিলেশনশিপ বিষয়টি মাকড়সার জালের মতো। আমি কিন্তু ক্যারিয়ারের পরিচয়ের পরও কারো মেয়ে, বউমা, বউ ,খালা , মামী , বোন , ভাবি ইত্যাদি ইত্যাদি।
যদিও বর্তমান প্রেক্ষাপটে রিলেশনশিপ এর এই সুন্দর সুন্দর সম্পর্ক গুলোর বেশিরভাগই মিথ্যা বলা , লুকিয়ে রাখার প্রবণতা , নিজেদের স্বার্থের কথা ভাবা, ঈর্ষা পরায়ন মনোভাব, শিশুদের ঈর্ষা শেখানো ইত্যাদি। যেন এক মৌন অভিনব অভিনয় প্রতিযোগিতা।
যেমন : একজন বলছেন , ফেসবুকে দেখলাম আমার ওমুক বন্ধু তো গাড়ি,বাড়ি সবই করলো আর তুমি তো ওই,যেই লাউ সেই কদু’তেই পইরা রইছো হায়রে জীবন টা ধানাপানা এক্কেবারে মাটি হইয়া গেল।
অন্য একজন বলেছেন, বন্ধুরা সবাই বড়বড় ডিগ্রি অর্জন করলো জীবনে কি করলাম অন্যেরটা দেখলেই এলার্জি শুরু হয় ।
আর একজন বলেছেন , দেখলাম ভাবি তো তার ছেলে কে ১০০০০ টাকার মোবাইল কেনে দিল আমি কিন্ত বাবুসোনা ২৫০০০ টাকার মোবাইল কিনে দিবো ।
আর একজন বলেছেন , আবার অনেক সোনার গয়না কিনেছে কিন্তু দেখাবে কেমনে আত্মীয় স্বজনদের ডাকবেনা কারণ কাজের লোকের সমস্যা আবার যাবেও না কারণ কিছু নিয়ে যেতে হবে এতো ক্যালকুলেশন সেখানে একমাত্র ফেসবুক পিকচারই খুব সহজ উপায় ।
অর্থাৎ ফেসবুকে ঢোকার আগ মূহুর্ত পর্যন্ত সংসারে শান্তি ছিল। আর যেই ফেসবুক ঢুকলো তখনই শুরু হচ্ছে অশান্তি , হাহাকার , অফসোস , এলার্জি ইত্যাদি ইত্যাদি। এখন প্রশ্ন তাহলে কি ফেসবুক বাবহার করবো না?
ফেসবুক বাবহার করবো তবে consciously .সবসময় চেষ্টা করবো Sub-conscious mind থেকে সরে এসে Conscious mind এ থাকার ।
Subconscious part টি হলো নদীর মতো আমাদের মনের একটি অংশ যেখানে ভালো টাও মিশে যায় খারাপ টাও মিশে যায় আর এই অংশটি থেকেই আমাদের সমস্যা গুলো তৈরি হচ্ছে আমাদের বেশিরভাগ আচরণ এই Subconscious part দ্বারা তাড়িত হয় ।
Conscious part টি হলো নদীর মাঝে একটা পিলারের মতো দাঁড়িয়ে থাকে যেমন; মানুষের মূল্যবোধ , Self limitation থাকতে হবে । যদি নিজের মধ্যে limitation থাকে তাহলে অহংকার আসবেনা । আমি দিয়ে কথা বলতে হবে তুমি দিয়ে নয় ।
যেমন: আমার খারাপ লেগেছে তোমার কাছে এমন বাবহার আশা করিনি । অর্থাৎ ,আমার খারাপ অনুভূতিকে দিয়ে আগে শুরু করবো , ডিরেক্ট তুমি (যে খারাপ ব্যবহার / কটু কথা বললো ) তাকে আঘাত করবো না । রিলেশনশিপ এর ক্ষেত্রে যদি তাকে সরাসরি আঘাত করি তাহলে , ঐ আঘাত তার বুকের মাঝখানে একবারে তলোয়ারের মতো ডিরেক্ট এসে আঘাত হানে। যার ফলে , গুড রিলেশনশিপ , গুড কমিউনিকেশন তৈরী হয় না।
রিলেশনশিপ হলো একটা গাছের মতো । যার ডালপালা , পাতা , ফুল , ফল , শাখা প্রশাখা হতে মাটির গভীরে শিখর পর্যন্ত বিস্তৃত । এখানে একজন আরেকজনকে দোষারোপ করা যাবে না এতে করে গাছ মরে যায় । মন থেকে খাঁটি প্রশংসা করতে হবে । মিথ্যা বলা , পাম দেয়া যাবে না , মিথ্যা মানুষের হায়াত কে কমিয়ে দেয় পাশাপাশি নিজেকে অন্যের কাছে Valueless করে তোলে ।
এছাড়াও Self love , Self adjustment , Self responsibility বাড়াতে হবে । আর Self attuestment মাঝামাঝি লেভেলে থাকতে হবে , এইগুলো বারবার নিজের মনের সাথে নিজের প্রাকটিস করার মনোভাব গড়ে তুলতে হবে ।
নিজেদের মনের যত্ন নিতে হবে । নিজের যা আছে তাতেই সন্তুষ্ট থাকার চেষ্টা চালাতে হবে এবং তা থেকে আত্মতৃপ্তি লাভ করতে হবে। একজন অন্যজনের সাথে নিজেকে কখনোই তুলনা তে যাবনা। কারণ, আমার তুলনা আমি নিজেই। আমি আমিই । আমি আপনি কখনো হতে পারবো না । আর আপনি আপনি । আপনি কখনো আমার মতো হতে পারবেন না ।
নিজের মাথার উপর একটা ভাড়া বাসার ছাদ আছে । ছাদের নিচে দামি দামি ফারনিচার নাই সেটা মূল বিষয় নয় । কারণ , বসতুগত জিনিস যতই মূল্যবান হোক না কেন প্রকৃত পক্ষে বসতুগত জিনিসের কোনো মূল্যই নেই যদি না মনের সুখ , ভালোবাসা , স্নেহ , মমতা , মূল্যবোধ , পারস্পরিক সহমর্মিতা আমাদের মধ্যে না থাকে ।
প্রতিহিংসা ভুলে গিয়ে সবসময় নিজের অবস্থানে থেকে নিচের দিকে তাকাই । আমার চেয়ে আল্লাহ যাদের খারাপ রেখেছেন , একটু সময় বের করে ভাবি বা চিন্তা করি । তাহলেই মনের সুখ পাখি মনেই বিরাজ করবে আর ভালোবাসার বন্ধন গুলো ফিরে পাবে খাঁটি সুখের পরিপূর্ণতা ।
আসুন , আমরা সবাই ভালো থাকার , সুন্দর বলার ও মন খুলে হাসার চেষ্টা করি, আমাদের মনোবল শক্ত করি , ধৈর্য্য ধরে এবং সচেতন ভাবে কোভিড -19 এর মোকাবিলা করি ।
লেখক: আয়শা আখতার বানু ,সাইকোলজিস্ট, মানসিক স্বাস্থ্য বিভাগ,রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল।
মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ে চিকিৎসকের সরাসরি পরামর্শ পেতে দেখুন: মনের খবর ব্লগ
করোনায় মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক টেলিসেবা পেতে দেখুন: সার্বক্ষণিক যোগাযোগ
করোনা বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য ও নির্দেশনা পেতে দেখুন: করোনা ইনফো
করোনায় সচেতনতা বিষয়ক মনের খবর এর ভিডিও বার্তা দেখুন: সুস্থ থাকুন সর্তক থাকুন


প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব। মনের খবরের সম্পাদকীয় নীতি বা মতের সঙ্গে লেখকের মতামতের অমিল থাকতেই পারে। তাই মনের খবরে প্রকাশিত কলামের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা বা অন্য যেকোন ধরনের দায়  সর্ম্পূণই লেখকের।

Previous articleকোভিড ১৯: চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের মানসিক সমস্যায় ভোগার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি
Next articleকোভিড ১৯: নানা ধরনের ওষুধ খেয়ে নিজেদের নিরাপদ ভাবার সুযোগ নেই

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here