নিঃসঙ্গতা মেদবাহুল্যের চেয়ে হুমকিস্বরূপ

আমেরিকান সাইকোলজিক্যাল এসোসিয়েশন সতর্ক করে দিয়েছে যে, একাকীত্ব বা নিঃসঙ্গতার ভয়াবহতা স্থূলতার চেয়ে বেশি। বিস্তারিত জানার আগে জানতে হবে কোনটা একাকীত্ব আর কোনটা একাকীত্ব নয়। আপনার আশেপাশে কতজন মানুষ আছে বা কতজন বন্ধু আছে, তার চেয়ে গুরুত্ত্বপূর্ণ হলো তাদের সাথে আপনি মানসিক ও আবেগীয়ভাবে জড়িত কি-না। বিবাহিত জীবনে পরিবারের অন্য সকল সদস্যদের সাথে থাকা সত্ত্বেও অনেকে নিঃসঙ্গতায় ভোগে, কারণ তারা তাদের জীবনসঙ্গী বা ভালোবাসার মানুষের সাথে মানসিকভাবে জড়িত নয়।
APA বা American Psychological Association এর ১২৫তম সম্মেলনে উপস্থাপিত বেশিরভাগ গবেষণার মূল বিষয় ছিলো সামাজিক বিচ্ছিন্নতা। তারা বলছে, ৪৫ বছর বয়সের উর্ধ্বে প্রায় ৪২ মিলিয়ন মানুষ দীর্ঘস্থায়ী নিঃসঙ্গতায় ভোগে, যা বয়সের সাথে সাথেও ক্রমবর্ধমান।
পূর্বে ধারণা করা হতো, শারীরবৃত্তীয় কিছু অসুস্থতার কারণ নিঃসঙ্গতা। অনেকটা নিয়মিত ধূমপায়ীতার মতো। এখন এটাকে মেদবাহুল্যের সাথেও তুলনা করা হচ্ছে।
নিঃসঙ্গতার প্রতিরোধ ব্যবস্থারও অনেকটা করুণ দশা। প্রধান সমস্যা হলো, ভুক্তভোগী ও তার আশেপাশের মানুষ উভয়েরই অসচেতনতা। কোনো বন্ধুকে বা ভালোবাসার মানুষটাকে তার মেদ বা ধূমপানের বিষয়ে কথা বলাটা অতটা সহজতর না হলেও আমরা বলে দিই। কিন্তু কজনকেই বা তার নিঃসঙ্গতা নিয়ে কথা বলতে জায়গা করে দিই? যারা ধূমপায়ী, তারা তদের আসক্তি ও এর ক্ষতিকর দিকগুলো সম্পর্কে জানে। অথচ একাকীত্বে ভোগা ব্যক্তি এর কুফলগুলো জানে না।
ধরুন, আপনার বন্ধু ধূমপানে আসক্ত। আপনি তাকে অনুরোধ করা ছাড়া আর কি-ই বা করতে পারেন? কিন্তু যখন সে নিঃসঙ্গতায় ভোগে, আপনার সাহচর্যই তার নিঃসঙ্গতার সমাধান হতে পারে। তাকে নিয়ে কোথাও ঘুরতে যাওয়া, নানান কাজে যুক্ত করা বা তার আগ্রহের বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করার মাধ্যমে তার মধ্যে একাকীত্বের অনুভূতিটা কমে আসবে। কিছুটা ভালো অনুভব করবে।
একটি গবেষণায় দেখা গেছে, খুব ভালো ও গভীর সামাজিক সম্পর্ক স্বল্প বয়সে মৃত্যুহার ৫০% পর্যন্ত কমিয়ে আনে। এই সমাধানগুলো আমাদের সমাজ ও প্রতিবেশীদের থেকেও আসতে পারে। সামাজিক সংগঠনগুলো অবসরপ্রাপ্ত মানুষগুলোর জন্য উপকারী নানা কর্মসূচি রাখতে পারে। অসুস্থ, গৃহবন্দি মানুষের খোঁজখবর রাখার জন্য বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অনুপ্রেরণা দেয়া যেতে পারে।
নিঃসঙ্গতা এখন মহামারী আকার ধারণ করেছে। তাই ধূমপান ও মেদবহুলতার মতো সচেতনতা, জনমত তৈরি ও নিজেদের চেষ্টায়ই এটা কমে আসতে পারে। এবং আমরাই পারি এমনটা ঘটাতে।
তথ্যসূত্র: সাইকোলজি টুডেতে প্রকাশিত Guy Winch এর রচনা অবলম্বনে লিখেছেন সাদিয়া আফরোজ শামস।
লিংক: https://www.psychologytoday.com/intl/blog/the-squeaky-wheel/201708/loneliness-poses-greater-public-health-threat-obesity

Previous articleযৌন আগ্রহ খুব কম?
Next articleবয়সভেদে হৃদরোগ বিভিন্ন রকম হতে পারে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here