নারীর যৌন প্রতিক্রিয়া পুরুষের থেকে কিছুটা ভিন্ন। একটা সময় ধারণা করা হত নারীর শরীরও পুরুষদের মতো লিনিয়ার মডেলে যৌন উদ্দীপনায় সারা দেয়। এই ধারণাটা চলে আসছিল মাস্টার অ্যান্ড জনসনের সারা জাগানো গবেষণা হিউম্যান সেক্সুয়াল রেসপন্সের পর থেকে।
মূলত মানুষের যৌন প্রতিক্রিয়ার ক্ষেত্রে লিনিয়ার মডেলের প্রবক্তা তারাই। ১৯৭০ এর পর থেকে ২০০১ পর্যন্ত লিনিয়ার মডেলকে নর নারী উভয়ের জন্য প্রযোজ্য মনে করা হত। কিন্তু ২০০১ এর দিকে এসে যখন রোজ মেরী ব্যাশন নারীর যৌন প্রতিক্রিয়ার ক্ষেত্রে সারকুলার মডেলের প্রস্তাবনা দেন তখন বেশিরভাগ যৌন বিজ্ঞানীই তা সাদরে গ্রহণ করেন।
এর আগে আমি নারীর যৌন রোগ নিয়ে লিখতে গিয়ে ফিমেল সেক্সুয়াল ইন্টারেস্ট বা এরাউজাল ডিসঅর্ডার সম্পর্কে লিখেছিলাম। ফিমেল সেক্সুয়াল ইন্টারেস্ট বা নারীর যৌন আগ্রহ বুঝতে হলে বিজ্ঞানীদের প্রস্তাবিত ওই দুটি মডেল সম্পর্কে সামান্য কিছু ধারণা থাকা প্রয়োজন। তাহলে বিষয়টা বিজ্ঞানের ভাষায় বোঝা যাবে।
সাধারণ জ্ঞানে আমরা যা বুঝি তা হলো একটি যৌন আকাঙ্ক্ষা মনে কাজ করবে তখন উদ্দীপনা দিলে শরীর উত্তেজিত হবে এবং উত্তেজনা ক্রমাগত বাড়তে বাড়তে চূড়ান্ত পর্যায়ে যাবে। তারপর চরম পুলকের মধ্য দিয়ে উত্তেজনা প্রশমিত হবে। এটাই লিনিয়ার মডেল।
বিজ্ঞান মানেই পর্যবেক্ষণ। পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে এরকমটা পুরুষের ক্ষেত্রেই ঘটে। নারীদের ক্ষেত্রে যৌন উত্তেজনার কোনো কোনো লক্ষণ উত্তেজিত না হলেও দেখা যেতে পারে। বিষয়টা লিনিয়ার মডেলের মতো ধারাবাহিক বা ক্রমাগত নয়। অর্থাৎ যৌন উত্তেজনার অনেক শারীরিক লক্ষণ থাকা সত্ত্বেও একজন নারী যৌন মিলনে আগ্রহ বোধ নাও করতে পারে। রোজ মেরী ব্যাশন তাঁর প্রস্তাবিত সার্কুলার মডেলে এই বিষয়টাই তুলে ধরতে চেয়েছেন।
নারীর যৌন মিলনে অনীহা বোধ করার কারণগুলোকে আমরা দুটি গ্রুপে ফেলতে পারি। এক বায়োলজিক্যাল বা জৈবিক কারণ দুই সাইকোলজিক্যাল বা মানসিক কারণ।
জৈবিক কারণ
=> ক্লান্তি
=> বিষন্নতা
=> ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
=> হরমোন জনিত সমস্যা
মন খারাপ মানেই বিষন্নতা নয়। বিষন্নতা একটি রোগ। যেখানে বলতে গেলে প্রায় সব সময়ই মন খারাপ লাগে এবং দুই সপ্তাহের ও অধিক সময় ধরে তা থাকে। এই মন খারাপের পাশাপাশি আরো কিছু লক্ষণও থাকে। সেসব বিবেচনায় এনে বিষন্নতা রোগটি ডায়াগনসিস করতে হয়। এই বিষন্নতার একটি জৈবিক ভিত্তি থাকে। তা হলো শরীরে সেরোটনিন নামক জৈব উপাদানটি কমে যাওয়া। বিষন্নতায় ভুগলে কারো কারো যৌন আগ্রহ কমে যায়। কিছু কিছু ওষুধে যৌন আগ্রহের উপর নেতিবাচক প্রভাব আছে। বিশেষ করে যে ওষুধগুলো ডোপামিন নামক জৈব উপাদনের কাজে বাধা সৃস্টি করে।
বেশ কয়েকটি হরমন নারীর যৌন ইচ্ছার সাথে জড়িত যেমন ইস্ট্রোজেন, টেসটোস্টেরন, প্রোল্যাকটিন ও থাইরক্সিন। এই হরমনগুলো যথাযথ না থাকলে যৌন আগ্রহ কমে যায়।
মানসিক কারণ
=> প্রাত্যহিক ব্যস্ততা
=> নেতিবাচক ফলাফল
=> অপরিকল্পিত গর্ভধারণের ভীতি
=> যৌন বাহিত রোগের ভীতি
=> বন্ধ্যা প্রমাণিত হওয়ার ভীতি
=> নেতিবাচক যৌন অভিজ্ঞতা
প্রতিদিনের ব্যস্ত জীবনে যৌনতায় এক সময় চাপা পরে যায়। একটু পুরোনো দম্পতিকে (মানে মাত্র বিবাহিত এমন নয় ) যদি সাদা কাগজ আর পেন্সিল দেওয়া হয় প্রাত্যহিক কাজের লিস্ট করতে তাহলে দেখা যাবে বেশির ভাগ দম্পতির ক্ষেত্রেই যৌন মিলনের বিষয়টি আছে লিস্টের একেবারে শেষ প্রান্তে। কারো কারো ক্ষেত্রে সেটা নাও পাওয়া যেতে পারে।
এছাড়া নেতিবাচক ফলাফল যেমন ডিসপেরোনিয়া বা মিলনকালিন ব্যথা অথবা স্বামীর যৌন রোগ যেমন দ্রুত বীর্যপাত, লিঙ্গ উত্থান জনিত সমস্যা যা স্ত্রীর উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে, স্ত্রীর উত্তেজনা আসার আগেই মনে হতে পারে উত্তেজিত হয়ে লাভ কী, আগ্রহ করে লাভ কী -আবার তো কস্ট পাওয়া ইত্যাদি ইত্যাদি।
অনেকে যৌন নিপিড়নের শিকার হন। কারো অতীত জীবনে এ ধরনের অভিজ্ঞতা থাকলে পরবর্তী জীবনে যৌন উদ্দীপনায় যথাযথ সারা দিতে পারেন না। আর ভীতি তা যে কারণেই হোক তা যৌন অনুভুতি নস্ট করার জন্য যথেষ্ট।
আক্রান্তের হার
আমাদের দেশে এ বিষয়ে কোনো জরিপ পরিচালনা করা হয়নি। ইউরোপ ও আমেরিকায় যে জরিপ পরিচালিত হয়েছে তার তথ্যের ওপর ভিত্তি করে যদি বলি তাহলে বলা যায় আমাদের দেশে এ ধরণের রোগীর সংখ্যা সেখানকার তুলনায় কম হবে। সেখানে প্রতি ১০ জন নারীর মধ্যে এক জন ফিমেল সেক্সুয়াল ইন্টারেস্ট বা এরাউজাল ডিসওর্ডারে ভোগেন।
চিকিৎসা
যদিও আগামী বছরগুলোতে ওষুধ কোম্পানির জন্য এটা একটা চ্যালেঞ্জ যৌন অনীহার ওষুধ খুঁজে বের করা। যৌন উত্তেজক নির্ভরযোগ্য কোনো ওষুধ বাজারে নেই। তারপরেও বলব হতাশ হওয়ার কিছু নেই। অনেক রোগীর ক্ষেত্রেই সেক্স থেরাপি ভালো কাজ করে।
সূত্র: লেখাটি মনের খবর মাসিক ম্যাগাজিনে প্রকাশিত।
করোনায় স্বজনহারাদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য পেতে দেখুন: কথা বলো কথা বলি
করোনা বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য ও নির্দেশনা পেতে দেখুন: করোনা ইনফো
মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক মনের খবর এর ভিডিও দেখুন: সুস্থ থাকুন মনে প্রাণে