ধূমপানের মাত্র ১০ সেকেন্ডের ভেতর ক্ষতিকারক নিকোটিন (একপ্রকার স্নায়ুবিষ) মস্তিষ্কে পৌঁছে যায়। সিগারেট টান দেয়ার পরপরই সারা শরীরেও খুব অল্প সময়ে এই নিকোটিন ছড়িয়ে পড়ে। ধূমপানের কারণে কার্বন মনোক্সাইড নামক ক্ষতিকর গ্যাস দেহের লোহিত রক্তকণিকার সাথে মিশে এর অক্সিজেন পরিবহনের ক্ষমতা কমিয়ে দেয়। গবেষকরা বলছেন, কেবল ধূমপানই হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি ৩০ শতাংশ বাড়িয়ে দিতে পারে। এছাড়াও ধূমপানে শরীরে ক্যান্সার সৃষ্টিকারী পদার্থের মাত্রা বাড়ে। বৈজ্ঞানিক মতে, পরীক্ষিত ও প্রমাণিত যে, প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে ধূমপান ফুসফুসের ক্যান্সারের প্রধান কারণ। ধূমপায়ীদের স্মৃতিবিনাশী রোগ আলঝেইমার্সে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিও বেশি।
যুক্তরাষ্ট্রে আলঝেইমার্স রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের ওপর পরিচালিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, যারা দৈনিক ২০টির বেশি সিগারেট টানেন, তারা অধূমপায়ীদের চেয়ে বছর দুয়েক আগে এ রোগে আক্রান্ত হন। কেবল ধূমপায়ীদেরই বার্জারস রোগ হয়ে থাকে যাতে সাধারণত পায়ের রক্তনালী আক্রান্ত হয়ে তীব্র ব্যথা হয়, পরবর্তীতে পায়ে গ্যাংগ্রিন হয়ে পচন ধরে। এছাড়াও ধূমপান মাইগ্রেনের ঝুঁকি বাড়ায়। ধূমপায়ী ব্যক্তি নিজের পাশাপাশি শিশু, পরিবারের অন্যান্য সদস্য অথবা অধূমপায়ী সহযাত্রীরও হৃদরোগ, নিউমোনিয়া, ব্রঙ্কাইটিস, হাঁপানি, ফুসফুসের ক্যান্সারসহ নানা রোগের ঝুঁকি বাড়ান। তাই, স্বাস্থ্য সুরক্ষায় ধূমপান থেকে বিরত থাকুন।
ধূমপান ত্যাগের জন্য সবচেয়ে জরুরী বিষয় হচ্ছে নিজের ইচ্ছেশক্তি। ধূমপান ছাড়ার জন্য নিজের সিদ্ধান্তের ব্যাপারে আপনি যতটা দৃঢ় থাকবেন, ততই সাফল্যের সম্ভাবনা বাড়বে। এই সিদ্ধান্তের জন্য প্রয়োজন ধূমপানের ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে জানা। ধূমপান আপনার নিজের জন্য কতটা ক্ষতিকর আর ধূমপানের ফলে আপনি কাছের মানুষটির বা আপনার শিশু সন্তানটির জন্য পরোক্ষ কী ক্ষতি ডেকে আনছেন তা জানুন। প্রয়োজনে কুফলগুলো নিজ হাতে কাগজে লিখে ফেলুন, কাগজটি সঙ্গে রাখুন এবং যখন ধূমপানের ইচ্ছে জাগবে, তখন কাগজটি বের করে পড়ুন। ধূমপান ত্যাগ করতে চাইলে নিচের পরামর্শগুলো অনুসরণ করতে পারেন-
- ধূমপান ত্যাগের জন্য নির্দিষ্ট একটি দিন ঠিক করুন। সেই নির্দিষ্ট দিনটির আগের দিন বাসায় থাকা সিগারেট, অ্যাসট্রে, লাইটার ফেলে দিন বা সরিয়ে ফেলুন। পরিবারের সদস্য, নিকটাত্মীয়, বন্ধুবান্ধব এবং সহকর্মীদের সহযোগিতা নিন। তাদের জানিয়ে রাখুন ধূমপান ত্যাগের তারিখটি। এর পর থেকে যেন তারা আপনাকে ধূমপানের আহ্বান না জানায় এবং আপনার আশপাশে ধূমপান না করে এ ব্যাপারে সচেতন হতে অনুরোধ জানান।
- ধূমপান ত্যাগের প্রাথমিক পর্যায়ে কিছুটা শারীরিক ও মানসিক অস্বস্তি বোধ হতে পারে। কারণ, দীর্ঘদিন ধূমপানের ফলে এর প্রতি শারীরিক ও মানসিক নির্ভরতা গড়ে ওঠে। তবে, ধীরে ধীরে এ সমস্যাগুলো কেটে যায়। মুখে ‘কি যেন নেই’ ধরনের অস্বস্তি কাটাতে চিনিমুক্ত চুইংগাম, মিন্ট বা ক্যান্ডি ব্যবহার করতে পারেন। হাত বা আঙুলের অস্বস্তি কাটাতে মাঝে মাঝে দুই আঙুলের ফাঁকে পেনসিল বা পেপার কিপ, হাতে ছোট আকারের বল ব্যবহার করতে পারেন। প্রচুর পরিমাণে পানি ও জুস পান করুন। শাকসবজি ও ফলমূল বেশি খান।
- একঘেঁয়ে ভাব ও বিরক্তি কাটাতে মনকে ব্যস্ত রাখুন। ম্যাগাজিন-গল্পের বই পড়ুন, পছন্দের গান শুনুন, সুস্থ বিনোদনে অংশ নিন। প্রতিদিন হালকা ব্যায়াম করুন।
- ধূমপায়ীদের সঙ্গ যথাসম্ভব এড়িয়ে চলুন। অধূমপায়ীদের সাথে বেশি সময় কাটাতে চেষ্টা করুন।
- একবারে পুরোপুরি ধূমপান ছাড়তে না পারলে ধীরে ধীরে প্রতিদিন একটি বা দুটি বা সপ্তাহে নির্দিষ্ট পরিমাণ করে সিগারেট সেবন কমিয়েও সম্পূর্ণ ত্যাগের লক্ষ্যে পৌঁছতে পারেন।
- প্রয়োজনে চিকিৎসকের সহায়তা নিন। ধূমপান ছাড়ার জন্য মানসিক রোগ চিকিৎসকের পরামর্শমতো ওষুধ ব্যবহার করতে পারেন।
ডা. মুনতাসীর মারুফ
মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞ, জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট
marufdmc@gmail.com
প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব। মনেরখবর-এর সম্পাদকীয় নীতি/মতের সঙ্গে লেখকের মতামতের অমিল থাকতেই পারে। তাই এখানে প্রকাশিত লেখার জন্য মনেরখবর কর্তৃপক্ষ লেখকের কলামের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে আইনগত বা অন্য কোনও ধরনের কোনও দায় নেবে না।