সেদিন নীলা চুমু খাওয়ার পরে বাথরুমে ঢুকে ভক ভক করে বমি করেছিল। আয়নায় নিজেকে দেখে তখন ভীষণরকম অসহায় লেগেছিল তার। নিজের অসহায়তার কথা জানিয়ে সে বলে, ‘দোষ তো আমারই।’ বলে সে কাঁদতে শুরু করে। আমি তাকে শান্ত হতে বললাম। চোখ মোছার জন্য টিস্যু এগিয়ে দিলাম।
তার সমস্যাটা একটু ভিন্ন ধরনের। নুহাশের সাথে তার পরিচয় দীর্ঘদিনের। ক্যাম্পাসের জীবনের শুরুর দিনটি ধরলে বারো বছর। যদিও তাদের সম্পর্কটা শুরুর দিন থেকেই হয়নি। ক্যাম্পাস জীবনের ছয় মাসের মাথায় হয়েছে। তারপর কিছুিদন মনোমালিন্য ছিল, এখন সেসব নেই। নারী-পুরুষের সম্পর্কের মধ্যে যৌনতার বিষয়টি বাদ দিলে বলা যেতে পারে তাদের মতো এত ঘনিষ্ঠ জুটি বিরল। নীলা কোনোরকমেই কোনো যৌন আকর্ষণ বোধ করে না নুহাশের প্রতি। নুহাশ লম্বা চওড়া দোহারা গঠনের, তবে সুপরুষ নয়। ভদ্র মার্জিত তার আচরণ। সিগারেট খায় না বলে তার ঠোঁটটা লাল, যদিও হালকা। ফর্সা ত্বক। ক্রিম ফিগার। ত্রুটি যদি বলতেই হয় তা হলো, আর পাচঁটা পুরুষের মতো তার শরীরে লোমের আধিক্য নেই। আমি বললাম-সে তো শাহরুখ খানের বুেকও নেই। তবওু তাকে ম্যানলি লাগে। বললেন নীলা।
বুঝলাম নীলার সমস্যার জটিলতাটা এখানেই লুকিয়ে আছে। আমি বুঝতে পারছিলাম না কোনো প্রকার আকর্ষণই যদি না থাকে তাহলে প্রেমটা হলো কী করে! জানতে চাইলাম আগে কি আকর্ষণ বোধ করতেন? জানালেন, আগেও তেমন কিছু বোধ করতেন না। আচরণটাই তার ভালো লাগত। এখনো তাই লাগে। নুহাশের প্রতি ভীষণরকম নির্ভরশীল তিনি। নুহাশও তাই। সে কারণেই কেউ কাউকে না বলতে পারছেন না। এদিকে বিয়ের বয়স গড়িয়ে যাচ্ছে। উভয় পক্ষের অভিভাবক এখন বিরক্ত। আবার মনের বিরুদ্ধে, রুচির বিরুদ্ধে যেয়ে শারীরিক মিলন সম্ভব নয়। সেজন্যই নীলার আমার কাছে আসা।
সুলুতান মিঞা সিএনজি চালক। বিয়ে করেছেন আট বছর হলো। সেই প্রথমদিন থেকেই যৌন সমস্যায় ভগছেন। গত তিন বছর ধরে তার স্ত্রী তাকে আল্টিমেটাম দিয়েছেন ডাক্তার দেখিয়ে ঠিক না হলে এমন লোকের সংসার তিনি করবে না। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোরোগ বিভাগ পরিচালিত সাইকিয়াট্রি সেক্স ক্লিনিকে সলুতান মিঞা গত এক বছর ধরে চিকিৎসা নিয়েছেন কিন্তু কোনো লাভ হয়নি। ঔষধ দিলে প্রথম একদিন কী দইুদিন ভালো হয় তারপর আবার আগের মতো। ইরেক্টাইল ডিজফাংশনে ভুগছেন তিনি, ভায়াগ্রা বা ঐ জাতীয় কোনো ঔষধে প্রাথমিকভাবে রেসপন্স করলেও তার ভালো হওয়াটা স্থায়ী হচ্ছে না। আজ একটা ঔষধ খেয়ে ভালো হয় তো কাল আর সেই ঔষধ তার ওপর কাজ করে না। তাদের দাম্পত্য সম্পর্ক দিনে দিনে আরো খারাপের দিকে যাচ্ছে। আমাদের চিকিৎসায়ও তিনি আর আশার আলো দেখতে পাচ্ছেন না।
মানুষের দাম্পত্য সেক্স বলে কথা, কোথায় কোন রহস্য লুকিয়ে আছে বোঝা মুশকিল। শারীরিক কোনো সমস্যা যে তার নেই সে ব্যাপারে আমরা ক্লিনিকের সবাই আগেই নিশ্চিত হয়েছিলাম। তার সব ল্যাব টেস্টের রিপোর্ট নরমাল পেয়েছিলাম। তাকে আরেকটু জানা এবং বোঝার জন্য আবার সময় দিলাম। তার বিয়েটা ছিল অ্যারেঞ্জ ম্যারেজ। পাত্রী দেখে তার মা বিয়ে ঠিক করেছিলেন। তিনি মেয়ে দেখতেও যাননি। মেয়েদের আর্থিক অবস্থা তাদের চেয়ে বেশ ভালো ছিল। বিয়েতে পাত্রীর বাবা একটা সিএনজি যৌতুক দিয়েছিলেন। তার স্পষ্ট মনে আছে, মেয়ের বাবা যখন মেয়েকে তার হাতে তুলে দেন তার স্ত্রী ভীষণ কাঁদছিলেন। সেই কান্নারত অবস্থায় তিনি দেখছিলেন তার নব্য স্ত্রীর দাঁতগুলো অনেক বড়ো বড়ো। সুলতান মিঞার ভাষায়, ‘স্যার কোদালের ফলার মতো বেকায়দার দাতঁ।’ তাকে প্রশ্ন করলাম সেই দাঁতগুলোতেই কি আপনার সমস্যা? সলুতান মিঞা একটু থেমে উত্তর দিলেন ‘একবার মন কয়-হয়। আরেকবার মনে কয়-না। আমরা গরিব মানুষ সবকিছু তো আর মনমতো হয় না।’ বললাম, ‘দাঁতের কথা মনে আসাতে কখনো আপনার সেক্স ডাউন হয়ে গেছে?’
সুলতান মিঞা বললেন, ‘তাই তো হয়। ভাবছিলাম ওষুধ খাইয়া শক্তি বাড়াইলে হয়ত সব ঠিক হয়ে যাবে। আগে তো এই সব কোনো বিষয় আছিল না। মানে বিয়ার আগের কথা কইছিলাম তহন তো রাস্তার পাগলিরে দেখলেও…।’ কথাটা সে শেষ না করেই থেমে গেলেন।
তবুও তাতে বঝুতে কোনো অসুিবধা হলো না। সলুতান মিঞা এবং নীলা দুজন ভিন্ন মানষু হলেও তাদের সমস্যা একই। মূলত সেটা তাদের ডিজায়ার বা যৌন ইচ্ছায়। যদিও ইথিক্যাল কারণে নামগুলো ছদ্মনাম। তবু গল্প দুটি নিছক গল্প নয়। সত্যিকারের জীবনকাহিনি।
মানুষ যৌন প্রতিক্রিয়ায় সাড়া দেয় যৌন অবদমনের ক্রমাগত অপসারণের মাধ্যমে। কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রের উচ্চ পর্যায়ের কাজ এটি। যাকে বলা হয়-দ্বৈত নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি বা ডুয়েল কন্ট্রোল মডেল। এই পদ্ধতিতে ব্রেইন সিদ্ধান্ত নেয় কার প্রতি সে যৌন আকর্ষণ বোধ করবে বা উত্তেজিত হবে এবং সাড়া দেবে। সঙ্গী সংক্রান্ত এই ব্যাপারে ব্রেইনের যে অংশ কাজ করে সেটি হলো প্রি ফ্রন্টাল কর্টেক্স। ব্রেইনের এই অংশ রাজি না হলে যৌন উত্তেজনা সন্তোষজনক হবে না। তাই বিয়ে করার আগে প্রয়োজন নিজের যৌন ইচ্ছা, আকাঙ্খাকে বঝুতে চেষ্টা করা। সঙ্গীর যৌন আবেদনময়তা অন্যের চোখ দিয়ে না দেখে নিজের চোখে দেখুন। সবার ভালো লাগা না লাগার চেয়ে আপনার নিজের ভালো লাগাকে বেশি গুরুত্ব দিন। কারণ যৌনতা দাম্পত্য সম্পর্কের একটি গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ। কতটা গুরুত্বপূর্ণ?
সম্প্রতি বিয়ে হওয়া দম্পতিদের মধ্যে করা গবেষণায় দেখা গেছে, যারা ঘন ঘন মিলিত হয় তাদের সম্পর্ক দীর্ঘদিন ভালো থাকে। ফ্লোরিডার স্টেট ইউনিভার্সিটির একদল গবেষক ২১৪ জন দম্পতির ওপর গবেষণা করে এই তথ্য দিয়েছেন। এর আগে বয়স্ক দম্পতিদের ওপর এধরনের গবেষণা করা হয়। কারণ হিসেবে দেখা গেছে, প্রতিটি যৌনমিলন সম্পন্ন হওয়ার পর সন্ধ্যারাগের মতো একটা আলো বা গভীর আনন্দ দম্পতিদের মধ্যে দেখা যায়। সন্ধ্যারাগ হলো সূর্য অস্ত যাওয়ার পর পশ্চিম আকাশে সূর্যের আলোর যে রেশ থেকে যায় সেটি। তেমনি শারীরিক মিলনে সন্তষ্টি লাভ করলে দুজনের মুখে আনন্দের রেশ থেকে যায়। এই সন্ধ্যারাগ বা আফটার গ্লো ৪৮ ঘণ্টা স্থায়ী হয়। যৌনমিলন যতটা সন্তোষজনক হয় সন্ধ্যারাগ বা আফটার গ্লোও ততটা শক্তিশালী হয়। আফটার গ্লো শক্তিশালী হলে দাম্পত্য সম্পর্কের সন্তুষ্টিও বেশি হয়।
স্বাভাবিক নিয়মেই চার থেকে ছয় মাস পর দাম্পত্য সম্পর্কের সন্তুষ্টি কমে যেতে থাকে। গবেষণায় এ-ও দেখা গিয়েছে, যাদের সেক্স পরবর্তী আফটার গ্লো যত বেশি শক্তিশালী তাদের সম্পর্কে সন্তুষ্টিও তত কম হ্রাস পায়।
সূত্রঃ মনের খবর মাসিক ম্যাগাজিনে প্রকাশিত।
স্বজনহারাদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য পেতে দেখুন: কথা বলো কথা বলি
করোনা বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য ও নির্দেশনা পেতে দেখুন: করোনা ইনফো
মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক মনের খবর এর ভিডিও দেখুন: সুস্থ থাকুন মনে প্রাণে