তোমার অসুখটির নাম 'ফোবিক অ্যাংজাইটি ডিজঅর্ডার'

সমস্যা:
আমার নাম বেলাল আহমেদ। বয়স ২১ বছর। আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অনার্স ৩য় বর্ষের ছাত্র। ২০১৫ সালের মার্চ মাসে আমার এক বন্ধু এক্সিডেন্টে মারা যায়। তার বাসা থেকে ফেরার পর আমি সারা রাত ঘুমাতে পারিনি, বারবার তার চেহারা আমার চোখের সামনে ভেসে উঠে। তারপর থেকে সামান্য কারণে আমি খুব অস্থির হয়ে পড়তাম; আমার গলা শুকিয়ে যাওয়া, বুক ধড়ফড় করা, শ্বাস-প্রশ্বাস বন্ধ হয়ে যাওয়া ইত্যাদি সমস্যাগুলো দেখা যেতো। আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কাউন্সেলিং বিভাগে কিছুদিন কাউন্সলিং করাই। তারপর কিছুদিন আমার অস্থিরতা সামান্য কমলেও বর্তমানে আরো খারাপ হয়ে গেছে। আমি কোনো কাজ ঠিকভাবে করতে পারছি না। সামনে আমার পরীক্ষা, কিন্তু পড়াশুনায় মনোযোগ দিতে পারছি না। রাস্তায় ভারী বাসে উঠা, লিফটে উঠা, এমনকি বাসা থেকে একা একা বের হতে গেলেও আমার খুব ভয় লাগে। মনে হয় আমি রাস্তায় অসুস্থ হয়ে পড়ব বা অজ্ঞান হয়ে পড়ে যাবো। ইদানিং বাসায় একা থাকতেও ভয় লাগে। আমার এই সমস্যাগুলোর কারণে দিন দিন খুবই অসহায় বোধ করছি। কিভাবে আমি সুস্থ ভাবে বাঁচতে পারব দয়া করে জানালে উপকৃত হব।

পরামর্শ:
ধন্যবাদ বেলাল তোমার প্রশ্নের জন্য। তোমার সমস্যাটা শুরু মূলত অ্যাংজাইটি নিউরোসিস বা উদ্বেগের আধিক্যজনিত মানসিক রোগ দিয়ে। সমস্যা গত মার্চে তোমার বন্ধুর মৃত্যুর পর থেকে শুরু হয়েছে, সুতরাং তুমি বেশ কিছুদিন অর্থাৎ প্রায় ৯ মাস যাবৎ কষ্ট পাচ্ছো। সাধারণ উদ্বেগজনিত বা দুশ্চিন্তাজনিত মানসিক চাপে মানুষের বুক ধড়ফড় করা, গলা শুকিয়ে যাওয়া, শ্বাসকষ্ট হওয়া ইত্যাদি লক্ষণগুলো দেখা যায়। বন্ধুর মৃত্যু তোমার মধ্যে এক ধরনের মানসিক চাপের সৃষ্টি করেছিল এবং বর্তমানে তুমি সাধারণ কিছু বিষয়েও খুব ভয় পাচ্ছ; একে আমরা ‘ফোবিক অ্যাংজাইটি ডিজঅর্ডার’ বলে থাকি। ফোবিক অ্যাংজাইটি ডিজঅর্ডার হলো অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা এবং যেসব বিষয়ে ভয় পাওয়ার কথা নয় সেসব বিষয়ে ভয় পাওয়া। যেমন, ভীড় বাসে উঠা, লিফটে চড়া, একা বাসা থেকে বের হওয়া বা বাসায় একা একা থাকা ইত্যাদি। তোমার ভয়ের পরিমাণ ক্রমাগত বাড়ছে, মনে করছো তুমি রাস্তায় বের হলে অসুস্থ হয়ে পড়বে, অজ্ঞান হয়ে পড়বে। এমতাবস্থায় তোমার প্রতি পরামর্শ রইলো তুমি শীঘ্রই নিকটস্থ কোনো মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞকে দেখাও এবং মেডিসিন ও কাউন্সেলিং গ্রহণ কর। যেহেতু তুমি আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কাউন্সেলিং বিভাবে কাউন্সেলিং করিয়ে উপকার পেয়েছো কিন্তু সমস্যা আবার দেখা দিয়েছে এবং ক্রমাগত বাড়ছে। অতএব বোঝা যাচ্ছে শুধুমাত্র কাউন্সেলিং-এ তোমার কাজ হবে না, তোমাকে মেডিসিন ও কাউন্সেলিং দুটোই নিতে হবে। আশাকরি এতে তুমি দ্রুত সুস্থ হতে পারবে।

পরামর্শ দিচ্ছেন,
প্রফেসর ডা. মুস্তাফিজুর রহমান


দৃষ্টি আকর্ষণ- মনেরখবর.কম এর প্রশ্ন-উত্তর বিভাগে, মানসিক স্বাস্থ্য, যৌন স্বাস্থ্য, মাদকাসক্তি সহ মন সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয়ে আপনার কোনো জানার থাকলে বা প্রশ্ন থাকলে বা বিশেষজ্ঞ পরামর্শ দরকার হলে question@www.monerkhabor.com এই ইমেলের মাধ্যমে প্রশ্ন পাঠাতে পারেন।

Previous articleমাদকাসক্তি: সচেতন হতে হবে অভিবাবককে
Next articleআমি অল্পতেই রেগে যাই

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here