জীবনের কোনও না কোনও সময়ে আমরা প্রত্যেকেই ডিপ্রেশনের কবলে পড়েছি! প্রতিনিয়ত মানসিক চাপ, উদ্বেগ ইত্যাদির কারণে মন খারাপ হওয়া, ডিপ্রেশন বা “লো ফিল” করা খুবই স্বাভাবিক। বিশেষত, বর্তমান পরিস্থিতিতে মনখারাপ বা অবসাদে ভোগা ভীষণই সাধারণ ঘটনা। অবশ্য অপুষ্টির সঙ্গেও ডিপ্রেশনের সরাসরি যোগ রয়েছে। যারা ডিপ্রেশনে ভুগছেন, তাদের দৈনিক ডায়েট রুটিনে প্রায়শই ভিটামিন, মিনারেল, ওমেগা-৩-ফ্যাটি অ্যাসিডের মতো উপাদানের ঘাটতি থেকে যায়। সুতরাং মন ভাল রাখতে ডায়েটে এখনই কিছু পরিবর্তন আনুন!
১. ডায়েটে কার্বোহাইড্রেটের পরিমাণ কম থাকলে সেরোটোনিন ও ট্রিপটোফ্যান জাতীয় কেমিক্যালের পরিমাণ কমে যায়। এরফলে মানসিক অবসাদ দেখা দিতে পারে। তাই ডায়েটে বেশি পরিমাণে ফল, সবজি, হোল গ্রেনের মতো “স্মার্ট কার্বোহাইড্রেট” রাখুন। এগুলো ধীরেধীরে রক্তে কার্বোহাইড্রেটের পরিমাণ বাড়াতে সাহায্য করে, যা ব্রেনকে সেরোটোনিন হরমোনের ক্ষরণে সাহায্য করে।
অন্যান্য মিষ্টিজাতীয় খাবারের তুলনায় এই খাবারগুলো থেকে প্রাপ্ত কার্বোহাইড্রেট অনেকক্ষণ রক্তে চিনির মাত্রা সঠিক রাখে। ফলে বারবার কার্বোহাইড্রেট খাওয়ার প্রয়োজন হয় না।
২. ডায়েটে অ্যামাইনো অ্যাসিডের পরিমাণ কম থাকলে, ডোপামিন ও সেরোটোনিনের মতো নিউরোট্রান্সমিটার, যা মন ভাল রাখতে সাহায্য করে, তা কম উৎপন্ন হয়। ব্রেনের এই দুই কেমিক্যালের পরিমাণ সঠিক রাখতে প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার খাওয়াও তাই অতন্ত জরুরি। কার্বোহাইড্রেটের সঙ্গে ডেয়ারি প্রডাক্ট, ডিম, বিনস ইত্যাদিও ডায়েটে রাখুন।
৩. আমাদের মস্তিষ্কে ফ্যাটের ঘনত্ব সবথেকে বেশি। মস্তিষ্কের কোষে প্রচুর পরিমাণে ওমেগা-৩ ও ওমেগা-৬ ফ্যাটি অ্যাসিড থাকে। ডায়েটে পর্যাপ্ত পরিমাণে আখরোট, ফ্লাক্সসিড, ক্যানোলা অয়েল, সামুদ্রিক মাছ বা ফিশ লিভার অয়েল থাকলে তা মস্তিষ্কে ফ্যাটের সরবরাহ অক্ষুণ্ণ রাখে। ফলে মনও ভাল থাকে।
৪. বিনস, লিন মিট, বাদামে থাকা সেলেনিয়াম মন ভাল রাখতে এবং উদ্বেগ কমাতে সাহায্য করে। ডায়েটে এই ধরনের খাবার বেশি করে রাখতে পারেন।
৫. মন খারাপ লাগলে ডার্ক চকোলেট খেতে পারেন। এক টুকরো ডার্ক চকোলেট সেরোটোনিন ও এন্ডোরফিনের মতো “ফিল গুড” হরমোনের পরিমাণ বাড়াতে সাহায্য করবে। ভিটামিন ডি-ও এই ধরনের হরমোন তৈরির জন্য আবশ্যক। প্রতিদিন কিছুক্ষণ রোদে থাকলে উপকার পাবেন।
৬. শরীরে জিঙ্কের ঘাটতি থাকলে খাবার বিস্বাদ লাগতে পারে, এমনকি ডিপ্রেশনও দেখা দিতে পারে। তাই কুমড়োর বীজ, ডিম, মাছ, চিকেন খেতে পারেন। এতে পর্যাপ্ত পরিমাণে জিঙ্ক থাকে যা ডিপ্রেশন কমাতেও সাহায্য করবে।
৭. শরীরে এনার্জি বাড়াতে ভিটামিন বি-কমপ্লেক্স অত্যন্ত প্রয়োজনীয় উপাদান। যারা প্রতিনিয়ত উদ্বেগ কিংবা চাপের সম্মুখীন হন তাদের জন্য ভিটামিন বি-কমপ্লেক্স দারুণ কার্যকর। অ্যান্টি-ডিপ্রেসান্ট হিসেবেও ভিটামিন বি-কমপ্লেক্স ভাল। ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে ভিটামিন বি-১২ ও ফোলেটের সাপ্লিমেন্ট নিলে উপকার পাবেন।
৮. জীবন-যাপনের দিকেও নজর দিন। অ্যালকোহল, কফি, ড্রাগস ইত্যাদি ঘুমের ব্যাঘাত ঘটায়। এতে বিভিন্ন অ্যান্টি-ডিপ্রেসান্টের কার্যকারিতাও কমে যায়। তাই এই ধরনের আসক্তি থেকে দূরে থাকুন।
স্বজনহারাদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য পেতে দেখুন: কথা বলো কথা বলি
করোনা বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য ও নির্দেশনা পেতে দেখুন: করোনা ইনফো
মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক মনের খবর এর ভিডিও দেখুন: সুস্থ থাকুন মনে প্রাণে