ঘরবন্দী জীবন অনেক সময় অসহনীয় হয়ে পরে, বিশেষ করে বৃদ্ধদের বেলায়। কারণ অনেকেই শারীরিকভাবে চলাচলে অক্ষম। যারা চলাচল করতে পারে তারাও এই করোনা পরিস্থিতিতে বের হতে পারছে না। তাই ঘরবন্দী সময়টুকু সুন্দরভাবে কাটানোর জন্য যে বিষয়গুলোতে আগ্রহ আছে বা যে বিষয়গুলো ভালো লাগে সেগুলো নিয়ে সময় কাটানো যেতে পারে। কারণ পরিবারের অন্য সদস্যরা যেমন: ছেলে-মেয়ে বা নাতি-নাতনিরাও এসময় বিপর্যস্ত কারণ অফিস-আদালত বা স্কুল-কলেজ সবই বন্ধ। সবাই একটা আতঙ্কের মধ্যে সময় কাটাচ্ছে।
বৃদ্ধদের জন্য এই সময়টা খুব কষ্টদায়ক। তাই নিজের ভালো লাগার বিষয়গুলোকে এসময় প্রাধান্য দিতে হবে। যেমন: বই পড়া, লেখালেখির ইচ্ছা থাকলে নিজের জীবন নিয়ে লেখালেখি করা, গান শোনা, টেলিভিশনে বিভিন্ন ধরণের অনুষ্ঠান দেখা, ভ্রমণ কাহিনি পড়া ইত্যাদি। যদি স্বামী বা স্ত্রী দুজনেই বেঁচে থাকেন তবে দুজনে মিলে নিজেদের পছন্দের বিষয়গুলো নিয়ে ব্যস্ত থাকতে পারেন। ব্যস্ততার জন্য যে বিষয়গুলো করা হয়নি সে বিষয়গুলো নিয়ে এখন ভাবা যেতে পারে।ধর্মীয় কাজে মনোনিবেশ করতে পারেন। অতীতের আনন্দময় স্মৃতির কথা রোমন্থন করা যেতে পারে। যারা পড়াশোনা করতে পারেন, তাঁরা এসময় আগ্রহ আছে এমন বিভিন্ন বিষয় নিয়ে পড়াশোনা করতে পারেন। ইউটিউব বা সোশ্যাল মিডিয়ায় নিজের পছন্দের বিষয়ে বিভিন্ন ভিডিও বা ডকুমেন্টরি দেখা যেতে পারে।
ব্যস্ততার কারণে আগে হয়তো অনেক আত্মীয়-স্বজনের সাথে যোগাযোগ করা হতো না। এসময় তাদের সাথে ফোনে যোগাযোগ করে পারস্পরিক সম্পর্কের উন্নতি করা যেতে পারে। অনেক বন্ধু-বান্ধব হয়তো আছে যাদের খোঁজ নেওয়া হয়নি অনেকদিন। তাদের সাথে ফোনে বা বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে যোগাযোগ করা যেতে পারে। যারা খেলাধুলা পছন্দ করেন, তাঁরা স্পোটর্স চ্যানেলে বিভিন্ন খেলা দেখে সময় কাটাতে পারেন। আনন্দের খোরাক একেক জনের কাছে একেকরকম। কেউ গান শুনে. কেউ টেলিভিশন দেখে, কেউ বই পড়ে, কেউ গল্প করে আনন্দ পায়। তাই সময় কাটানোর জন্য যার যার ভালোলাগার বিষয়গুলো খুঁজে নিতে হবে। জীবন সম্পর্কে ইতিবাচক ধারণা রাখতে হবে। সংকটময় সময় কেটে গেলে কি কি করা যেতে পারে সেগুলো ভেবে রাখা যায়।
নেতিবাচক চিন্তা থেকে উদ্বেগ ও দুঃশ্চিন্তার সৃষ্টি হয়। তাই নেতিবাচক চিন্তা-ভাবনা থেকে দূরে থাকতে হবে। করোনা সংক্রান্ত খবর যতো কম দেখা যায় ততই ভালো। স্বামী-স্ত্রী সারাক্ষণ পাশাপাশি থাকলে বিরক্তির সৃষ্টি হতে পারে, ভূল বোঝাবুঝি হতে পারে। এসময় পারস্পরিক বোঝাপড়া অনেক জরুরী। নিজেদের ভালো লাগার সময়গুলো মনে করে, জীবনের ভালো দিকগুলো নিয়ে আলোচনা করে সময়টাকে ভালো করে তোলা যায়। বৃদ্ধ বয়সে সীমাবদ্ধতার কারণে জীবন সম্পর্কে ইতিবাচক ধারণা কমে যায়। এসময় কারো অবহেলা বা তাচ্ছিল্য ভীষণভাবে কষ্ট দেয়। অপরদিকে ভালো ব্যবহার ভালো থাকতে প্রেরণা দেয়। তাই জীবনের ভালো দিকগুলো চিন্তা করতে হবে এবং খারাপ ও কষ্টদায়ক বিষয়গুলো এড়িয়ে চলতে হবে। জীবনকে উপভোগ করতে শিখতে হবে।
শ্রুতি লিখন: খুশবু তাহসিন