দেশের অন্যতম জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী ‘লালনকন্যা’ খ্যাত বিউটি। ‘ক্লোজ আপন ওয়ান: তোমাকেই খুঁজছে বাংলাদেশ’ প্রতিযোগিতার মাধ্যমে তিনি সঙ্গীতাঙ্গনে আত্মপ্রকাশ করেন। অল্প দিনের মধ্যেই তিনি দেশের সেরা একজন লালনশিল্পী হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করেন। সম্প্রতি বিউটি নিজের গান ও মনের হালচাল নিয়ে কথা বলেছেন মনের খবর-এর সঙ্গে। সাক্ষাৎকার গ্রহণ করেছেন মামুন মিজানুর রহমান।
মনের খবর: কেমন আছেন?
বিউটি: ভালোই আছি মোটামুটি।
মনের খবর: গানের সাথে কীভাবে নিজেকে জড়িয়েছেন?
বিউটি: আমি গানের সাথে জড়াইনি, গানই আমার সাথে জড়িয়েছে। সংগীতের মধ্যেই আমি বড় হয়েছি। বাবা-মা দুজনই গান করেন। বাবার কাছে আমার গানের হাতেখড়ি। তার কাছেই শেখা। গান আমার সাথে পারিবারিক সূত্রে এমনভাবেই জড়িয়ে আছে যে, বলা যায়, গানের সাথে আমার রক্তের সম্পর্ক।
মনের খবর: ছোটবেলায় কী হওয়ার স্বপ্ন দেখতেন?
বিউটি: ছোটবেলায় নানা ধরণের স্বপ্ন দেখতাম। সময় যত পার হয়, স্বপ্নও তত বদলায়। এক সময় আমি নার্স হওয়ার স্বপ্ন দেখতাম। একটু বড় হয়ে গান নিয়ে স্বপ্ন দেখতে শুরু করি। গান নিয়ে স্বপ্নটা আমার চেয়ে আমার বাবারই বেশি ছিলো। গানের মাধ্যমে আসলে আমার নার্স হওয়ার স্বপ্নটাও পূরণ হয়েছে। সঙ্গীত একটা চিকিৎসা পদ্ধতি। গানের মাধ্যমে মূলত আমি নার্সের মতোই মানুষকে স্বাস্থ্যসেবা দিয়ে যাচ্ছি।
মনের খবর: আপনার সাফল্যের পিছনে নিজের কোন গুণটির ভূমিকা বেশি?
বিউটি: অবশ্যই সাধনা। যা হতে চেয়েছি, তার জন্য ছোটবেলা থেকেই সেভাবে তৈরি হয়েছি। পরিশ্রম আমাকে সফলতা দিয়েছে।
মনের খবর: আপনার গানের অ্যালবাম কয়টি?
বিউটি: এ পর্যন্ত ছয়টি একক অ্যালবাম বেরিয়েছে। এছাড়া একটি ডুয়েট অ্যালবামও রয়েছে। অনেকগুলো মিক্সড অ্যালবাম তো রয়েছেই। আমার প্রথম একক অ্যালবাম ‘চরণদাসী’। সর্বশেষ একক অ্যালবাম ‘পাষাণবন্ধু’।
মনের খবর: আপনার নতুন গান ও অ্যালবাম নিয়ে বলুন।
বিউটি: গত সপ্তাহে বাজারে এসেছে আমার মিক্সড অ্যালবাম ‘বনমালী’। ‘প্রেমসাধনা’ নামেও একটা অ্যালবাম প্রকাশ হয়েছে সম্প্রতি। এছাড়া বেশ কিছু গান ও মিউজিক ভিডিও প্রকাশের অপেক্ষায় রয়েছে।
মনের খবর: ভালো থাকার জন্য কী করেন?
বিউটি: মন ভালো রাখার জন্য সাধারণত শুধুই গান শুনি। মন খারাপ থাকলেও গানই শুনি। গান আমাকে ভালো রাখে। আমার দুই বছরের পুত্রের সাথে সময় কাটিয়েও মন ভালো রাখার চেষ্টা করি।
মনের খবর: বিষণ্ন হন? মন খারাপ হলে কীভাবে মন ভালো করার চেষ্টা করেন?
বিউটি: বিষণ্ন হই মাঝে মাঝে। চারপাশের মানুষ, বিশেষত পরিবারের লোক যখন ভুল বোঝে, খুব মন খারাপ লাগে। খুব মন খারাপ হলে বাবা-মায়ের সাথে কথা বলি, পরিবারকে সময় দিই। পরিবারের অন্যদের সাথে সমস্যাটা শেয়ার করি। বিষণ্নতা আরো বাড়লে নামাজ পড়ি, খোদার ওপর ছেড়ে দিই।
মনের খবর: হতাশা বোধ করেন কখনো? কীভাবে হতাশা কাটান?
বিউটি: না, আমি হতাশা বোধ করি না। হতাশ হতে চাই না আমি। ছোটবেলা থেকেই কখনো আমি হতাশ ছিলাম না। হতাশা ধ্বংশ করে, হতাশা কোনো সমাধান আনতে পারে না। হতাশ হয়ে যদি একটা চিন্তার ভেতরই ডুবে থাকি, সেই চিন্তা থেকে আর বেরিয়ে আসতে পারবো না। হতাশা কাটানোর জন্য সবসময় ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করতে হবে
মনের খবর: স্বপ্ন দেখেন? কী রকম স্বপ্ন?
বিউটি: হ্যাঁ, স্বপ্ন দেখি। নানা রকম স্বপ্ন দেখি। স্বপ্ন দেখি বলেই বেঁচে থাকি। ঘুমিয়ে যেসব স্বপ্ন দেখি, সেগুলো সব সময় শুভ হয়, তা নয়। যেসব ভালো স্বপ্ন দেখি, তার রেশ ঘুম ভাঙার পর অনেকক্ষণ নিজের মধ্যে ধরে রাখার চেষ্টা করি, সেই ভালো দিকটা নিজের জীবনে বাস্তবায়নের চেষ্টা করি।
মনের খবর: মনের স্বাস্থ্য ভালো রাখার জন্য গান কেন প্রয়োজন?
বিউটি: সঙ্গীত একটি থেরাপি। নানা দেশে সঙ্গীতের মাধ্যমে চিকিৎসা দেওয়া হয়। ডাক্তাররা রোগীদেরকে হাসিখুশি রাখার পরামর্শ দেন। শরীর ও মন সুস্থ রাখার জন্য প্রয়োজন গান।
মনের খবর: শিল্পী হতে চাওয়া নবীনের জন্য আপনার পরামর্শ?
বিউটি: প্রতিভার বিকাশের জন্য এখন প্ল্যাটফর্মের অভাব নেই। কিন্তু তাড়াহুড়া করা যাবে না, দীর্ঘ সাধনা করতে হবে। নতুনদের রেওয়াজের প্রতি অভিভাবকদের জোর দিতে হবে। সাধনা চালিয়ে গেলে সাফল্য আসবে।
মনের খবর: আপনার জীবনের লক্ষ্য কী?
বিউটি: নানা স্বপ্নই দেখি। প্রতিনিয়তই নিজেকে শোধরাতে চাই। যতদিন বাঁচি, গান নিয়েই বাঁচতে চাই। নিজের আইডেন্টিটি তৈরি হয়, এমন কিছু গান শ্রোতাদের উপহার দিতে চাই। আমি যেহেতু লালনের গান দিয়ে যাত্রা শুরু করেছি, লালনের গান নিয়ে একটি আর্কাইভ স্থাপনের চেষ্টা করবো।
মনের খবর: ধন্যবাদ আপনাকে।
বিউটি: মনের খবরকেও অনেক ধন্যবাদ।