বড়রা তাদের মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কিত সমস্যা বা অনুভূতিগত অসুবিধাগুলি চিহ্নিত করতে পারে, এমনকী অন্যের কাছে সেই সমস্যার কথা জানাতেও পারে। কিন্তু বাচ্চাদের ক্ষেত্রে, বিশেষত যারা বয়সে খুবই ছোট, তাদের পক্ষে এই কাজ করা সম্ভব না। কিছু বাচ্চা তার অসুবিধার কথা মুখ ফুটে বলতেই পারে না। এরা স্বভাবতই লাজুক প্রকৃতির হয়। সেই কারণে নিজেদের সমস্যা অন্যদের সঙ্গে ভাগ করে নিতে সক্ষম হয় না। এইসব পরিস্থিতিতে খেলাধূলা খুবই কার্যকরী হতে পারে।
সাইকোথেরাপির অঙ্গ হিসেবে খেলাধূলাকে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। খেলতে-খেলতে বাচ্চারা থেরাপি বিশেষজ্ঞ বা তার অভিভাবককে নিজের মানসিক স্বাস্থ্যের যেকোনো অসুবিধার কথা খুব সহজেই জানাতে পারে এবং সেগুলি মোকাবিলা করতেও উদ্যোগ নিতে পারে।
“অনেক সময় আমরা বড়রা নিজেদের অনুভূতিগুলিকে ঠিকভাবে বুঝতে পারি না। আর বাচ্চাদের ক্ষেত্রে তো এহেন সমস্যা আরও বেশি করে হতে পারে। খেলা এমন একটি স্বাভাবিক বিষয়, যা একজন বাচ্চার নিজস্ব জগতকে উন্মুক্ত করতে সাহায্য করে। এর ফলে শিশুদের দৈনন্দিন জীবনের নানা সমস্যা খেলাধূলার মাধ্যমে দূর করা সম্ভব হয়। একজন শিশুর মনের শুদ্ধিকরণের জন্য খেলাধূলার কোনও বিকল্প নেই।
খেলাধূলাহীন জীবন বনাম জীবনযাপনের অঙ্গ হিসেবে খেলা— এই দুইয়ের পার্থক্য একজন শিশুর কাছে স্পষ্টভাবে ধরা পড়ে। এর জন্য তাদের উপর কোনও মতামত বা সিদ্ধান্ত জোর করে চাপিয়ে দেওয়া যায় না। একজন বাচ্চার ভালো-মন্দ বুঝতে প্লে থেরাপি সাহায্য করে। এই থেরাপিতে শিশুরাই মুখ্য ভূমিকা নেয়। এর মাধ্যমে বাচ্চারা নিজেরাই নিজেদেরকে শাসন করে এবং নিজের জীবনের নিয়ন্ত্রণ বাচ্চাদের নিজেদের হাতেই থাকে।
জীবনের ক্ষতিকারক বস্তুগুলিকেও এরা এই থেরাপির সাহায্যে ধ্বংস করতে সক্ষম। খেলাধূলার মাধ্যমে শিশুরা তাদের জীবনের নিজস্ব গতি খুঁজে পায়। খেলা একজন বাচ্চার জীবনের খুব স্বাভাবিক, স্বচ্ছন্দ এবং পরিচিত একটি বিষয়,”— ভারতের ন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন ফর প্লে থেরাপির এগজিকিউটিভ ডিরেক্টর লুসি বাওয়েন-এর এমনই মত।
প্লে থেরাপি একজন থেরাপিস্টকে শিশুদের চাহিদাগুলি বুঝতে সাহায্য করে। এর জন্য কোনও নির্দেশের প্রয়োজন হয় না। বিভিন্ন মনোগত পরীক্ষা-নিরীক্ষার ক্ষেত্রেও প্লে থেরাপি ব্যবহৃত হয়। কখনও একজন থেরাপিস্ট বাচ্চাদের প্রকৃত সমস্যা প্রকাশের ক্ষেত্রে একে কৌশল হিসেবে ব্যবহার করেন। তিন বছর এবং তার বেশি বয়সের বাচ্চাদের জন্য এই থেরাপি ব্যবহার করা হয়।
খেলাকে কেন চিকিৎসার মাধ্যম করা হয়?
অধিকাংশ হাসপাতাল এবং চিকিৎসালয় বড়দের কথা চিন্তা করেই গড়ে ওঠে। সেখানেই ডাক্তাররা তাদের রুগিদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার মধ্য দিয়ে তাদের সমস্যাগুলি জানতে এবং বুঝতে চান। এহেন ব্যবস্থা শিশুদের জন্য উপকারী না-ও হতে পারে। তারা চিকিৎসকের সামনাসামনি থাকার কারণে নিজেদের অনুভূতিগত অক্ষমতা প্রকাশের ক্ষেত্রে আগ্রহ না-ও দেখাতে পারে।
শিশুদের ক্ষেত্রে খেলাধূলা-পদ্ধতির উপযোগিতা
১. খেলার মাধ্যমে শিশু মনের দিক থেকে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে – একটা ঘরে যদি বিভিন্ন রকমের খেলার সরঞ্জাম থাকে, তাহলে বাচ্চাদের কাছে সেগুলি খুবই লোভনীয় বিষয় হিসেবে গণ্য হয়। এইসব সরঞ্জামগুলির মধ্যে পুতুলের বাড়ি সমেত পুতুল, সেই পুতুলের বাবা-মা, ঠাকুমা-দাদু, ছেলে-মেয়ে, পোষা জীবজন্তু বা অন্যান্য খেলনা থাকতে পারে। সেই সঙ্গে কাগজ, পেন, ছবি আঁকার রং-তুলি ইত্যাদির মধ্য দিয়ে একজন বাচ্চা নিজেকে প্রকাশ করতে সক্ষম হয়। খোলা জায়গায় ছুটোছুটির মাধ্যমে শিশুরা নিজেদের ব্যস্ত রাখতে পছন্দ করে।
২. শিশুর পছন্দ এবং চাহিদা অনুযায়ী এই ধরনের থেরাপির ক্রম তৈরি হয়। এখানে বিশেষজ্ঞদের নির্দেশ-অনুসারে গঠিত চিকিৎসা সূচি খুব একটা ফলদায়ক হয় না।
এই ধরনের চিকিৎসা ব্যবস্থায় কোন কোন বিষয় যুক্ত থাকে?
এ পদ্ধতি প্রয়োগের স্থায়িত্বকাল ৪৫ মিনিট থেকে ১ ঘণ্টা হয়ে থাকে।
এই ধরনের ব্যবস্থায় বাচ্চাকে খেলাধূলার জন্যে একটা ঘরে নিয়ে যাওয়া হয় এবং বয়স অনুযায়ী তাদের হাতে নানা খেলনা দেওয়া হয়। যখন একজন বাচ্চা এতে স্বতঃস্ফূর্তভাবে সাড়া দেয়, তখন তাদের মনের প্রকৃত অবস্থা বোঝার চেষ্টা করা হয়। ছবি আঁকার মধ্য দিয়েও একজন শিশু তার মনের ভাব প্রকাশে সমর্থ হয়। যদি কোনও বাচ্চার পরিবারে ঝগড়া-অশান্তি চলে, তাহলে সে একখানা সুখী পরিবারের ছবি আঁকতে পছন্দ করবে। বাচ্চা যদি কোনও সমস্যার মুখোমুখি হয় তাহলে সে খেলনা বন্দুক নিয়ে পুতুলকে মারতে উদ্যত হয়, অথবা হিংসা প্রতিরোধের জন্য খেলনার সাহায্য নিয়েই নানা অঙ্গভঙ্গি শুরু করে।
এই অবস্থায় একজন থেরাপিস্টের কাজ হল, শিশুর খেলার ধরনের প্রতি লক্ষ্য রাখা এবং এই বিষয়ে নিজেদের ব্যাখ্যাগুলি লিখে রাখা। (কয়েকটি ক্লিনিকে থেরাপিস্টের সাহায্যের জন্য আয়না থাকে, যার সাহায্যে তিনি বাচ্চার খেলার দিকে নজর রাখতে সক্ষম হন। আসলে যখন কোনও কারণে বাচ্চার কাজকর্মের প্রতি খেয়াল রাখা সম্ভব না হয়, তখন এই ধরনের আয়নার ব্যবহার করা হয়)। কখনও কখনও বাচ্চাকে জিজ্ঞাসা করা হয় বা তাকে বলতে অনুরোধ করা হয় যে সে কী খেলছে। এই চিকিৎসা পদ্ধতির প্রত্যেকটি পর্যায় শেষ হওয়ার পরে একজন বিশেষজ্ঞ শিশুদের বাড়ির লোককে বা শিশুটি কে মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতির বিষয়ে নিজেদের মতামত জানান।
অনেক সময় শিশুদের চাহিদা অনুযায়ী থেরাপিস্টরা গ্রুপ থেরাপির ব্যবস্থা করে থাকেন। সেই ব্যবস্থায় সমবয়সি অনেক বাচ্চা একসঙ্গে খেলাধুলো করার সুযোগ পায় এবং বাচ্চাদের বাড়ির লোকরাও অংশ নিতে পারে।
এই ধরনের চিকিৎসা পদ্ধতি প্রয়োগ করার সময়ে থেরাপিস্ট কতগুলি নির্দেশ মেনে চলেন – শিশুদের গ্রহণযোগ্যতাকে বোঝার জন্য গাইডলাইন তৈরি করা হয়। বাচ্চারা নিজেরা তাদের সমস্যাগুলির সমাধান করতে পারছে কি না, সে বিষয়ে এখানে নজর রাখা হয়। এবং এইভাবে শিশুদের সমস্যা সমাধানের সক্ষমতা বা যোগ্যতা বিচারের চেষ্টা করা হয়ে থাকে।
“এই ধরনের ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে থেরাপিস্ট এবং শিশুদের মধ্যে পারস্পরিক বিশ্বাসের সম্পর্ক গড়ে ওঠে এবং শিশুদের নিরাপত্তার দিকটিও সুনিশ্চিত করার চেষ্টা করা হয়। এখানে একজন থেরাপিস্ট বিচারকের ভূমিকা পালন করেন না, বরং বাচ্চাদের বিষয়ে তাঁর অভিজ্ঞতা প্রকাশ পায়। এই ব্যবস্থার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক হল যে, শিশুদের বিশ্বাস এবং নিরাপত্তার বোধকে বজায় রাখা, সম্ভাব্যতা এবং সৃষ্টিশীলতাকে প্রকাশের মাধ্যমে তাদের আচরণের পরিবর্তন সাধন করা। শিশুদের সমস্যার সমাধান করে তাদের সুস্থ করে তোলাই এই ব্যবস্থার অন্যতম লক্ষ্য। বাচ্চাদের খেলাধুলো সম্পর্কে থেরাপিস্টের ব্যাখ্যা এখানে ততটা গুরুত্বপূর্ণ নয়। খেলাধুলো এবং থেরাপিস্টের সাহায্য একজন শিশুকে তার মনের অস্বাভাবিকতাগুলিকে দূর করতে এবং পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতিকে তার কাছে বোধগম্য করে তুলেতে সাহায্য করে”, – এমনটাই জানিয়েছেন বাওয়েন।
কীভাবে খেলার মাধ্যমে একজন থেরাপিস্ট শিশুদের সমস্যাগুলি বুঝতে পারেন?
একজন প্রশিক্ষিত থেরাপিস্ট খেলার সময়ে বাচ্চাদের আচার-আচরণের উপর ভালোভাবে নজর রাখেন। শিশুদের সমস্যাগুলি বুঝতে চেষ্টা করেন। এইভাবে রোগ চিহ্নিতকরণ এবং তা সমাধানের যথাযথ ব্যবস্থা খুঁজে বের করার মধ্য দিয়েই বাচ্চা ধীরে-ধীরে সুস্থ হয়ে ওঠে। সাধারণভাবে দেখা যায় যে, একজন বাচ্চা খেলাধুলোর মাধ্যমে তার অনুভূতি এবং সমস্যাগুলি প্রকাশ করতে সক্ষম হয় এবং থেরাপিস্ট সেগুলিই বোঝার চেষ্টা করেন এবং সঠিক চিকিৎসা পদ্ধতি প্রয়োগ করে বাচ্চাদের সুস্থ করে তোলার উদ্যোগ নেন।
- একজন সাত বছরের মেয়ে যৌন নির্যাতনের শিকার হওয়ার ফলে মুখের ভাষা হারিয়ে ফেলেছিল। তাকে যখন খেলনা রাখার ঘরে নিয়ে যাওয়া হয়, সে ছেঁড়া জামাকাপড় পরা একটি পুতুল হাতে নিয়ে সেই পুতুলের অবশিষ্ট জামাকাপড় ছিঁড়তে শুরু করে। এই দেখে থেরাপিস্ট মেয়েটির সঙ্গে খুব শান্তভাবে কথাবার্তা বলতে থাকেন। ঘটনাক্রমে বাচ্চাটি থেরাপিস্টকে জানায় যে, ওই পুতুলের মতোই তারও জামাকাপড় ছেঁড়া হয়েছিল। এইভাবে প্রথমবার সেই মেয়েটি তার করুণ অভিজ্ঞতার কথা থেরাপিস্টকে জানিয়েছিল।
- খেলার মাধ্যমে যখন চিকিৎসা শুরু হল, তখন একটি পাঁচ বছরের ছেলে পুতুলবাড়ির পরিবার নিয়ে খেলা আরম্ভ করেছিল। থেরাপিস্ট লক্ষ্য করলেন যে ছেলেটি একটা বাচ্চা পুতুলকে বালির গর্তের মধ্যে লুকিয়ে রেখে দিল। কিন্তু ওই পরিবারের অন্যান্য পুতুলগুলিকে যেমন—বাবা, মা, ছেলে, ঠাকুমা-দাদু কাউকেই সে লুকালো না। থেরাপিস্ট যখন তাকে এমন কাজ করার কারণ জিজ্ঞাসা করলেন, তখন সে জানিয়েছিল যে, ওই লোকানো পুতুলটি তার ছোট বোন। এই বোনের জন্য মা তাকে মারে এবং তার প্রতি কোনও খেয়ালই রাখে না। থেরাপিস্ট বুঝতে পারলেন যে, এটা শত্রুর বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নেওয়ার একটা পন্থা এবং ওই বাচ্চা ছেলেটিকে এই সমস্যা থেকে মুক্ত করার জন্য যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করলেন।
(এই উদাহরণ দুটি একজন মানসিক স্বাস্থ্যের বিশেষজ্ঞের রোগী সম্পর্কে অভিজ্ঞতা এবং রোগীর সমস্যার উপসর্গগুলির উপর নির্ভর করে লেখা হয়েছে)
একজন থেরাপিস্ট একটি বাচ্চার সুস্থ থাকার জন্য তার বাবা-মা এবং পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের শিশুটির প্রতি লক্ষ্য রাখার পরামর্শ দিতে পারেন। শিশুরা কীভাবে তাদের বিশেষ আচার-আচরণগুলি প্রকাশ করে? যে কোনও স্বাভাবিক পরিস্থিতিতেই কি তারা এরূপ ব্যবহার করে, নাকি কোনও নির্দিষ্ট পরিবেশে তাদের আচরণের অস্বাভাবিকতাগুলি প্রকট হয়ে ওঠে? এইসব তথ্যের সাহায্যেই একজন থেরাপিস্ট বাচ্চাদের সমস্যাগুলি চিহ্নিত করেন এবং সেগুলি সমাধান করতে সাহায্য করেন।
কোন ধরনের সমস্যার ক্ষেত্রে খেলার ছলে চিকিৎসা কার্যকরী হয়?
শিশুদের নানা ধরনের সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রে এই চিকিৎসা পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এটি সেই সব শিশুদের ক্ষেত্রে উপযোগী, যারা
- শরীর এবং মনের দিক থেকে ভয়াবহ বিপর্যয়ের সম্মুখীন হয়েছে
- শরীর, মন এবং যৌন নির্যাতনের ক্ষেত্রে যাদের তিক্ত অভিজ্ঞতা রয়েছে
- ঝগড়া-অশান্তির প্রতক্ষ্যদর্শী বা যারা সব সময়ে ধমকের মুখোমুখি হয়
- শিক্ষকের দ্বারা কঠিন শাস্তিপ্রাপ্ত বাচ্চারা
- সশস্ত্র আক্রমণ এবং প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের অভিজ্ঞতা অর্জন
- আচার-আচরণের প্রকাশভঙ্গিগত ত্রুটি
- জীবনযাপনের ক্ষেত্রে বড়সড় পরিবর্তন, যেমন—বাবা-মায়ের মৃত্যু, বাবা-মায়ের বিবাহ বিচ্ছেদ প্রভৃতি ঘটনা
- লক্ষ্য পূরণের ক্ষেত্রে বাধার মুখোমুখি হওয়া
- মানসিক উদ্বেগের সমস্যায় আক্রান্ত হওয়া
- চারপাশের পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে না নিতে পারার সমস্যা
অনেক সময় কোন ধরনের ওষুধ প্রয়োগের ফলে একজন শিশু সুস্থ হয়ে উঠবে, তা স্থির করার জন্য প্লে থেরাপির সাহায্য নেওয়া হয়। প্লে থেরাপির আগে এবং পরে কী ধরনের চিকিৎসার সাহায্যে রুগির অবস্থার উন্নতি ঘটছে এবং ঘটতে পারে— সেই বিষয়ে নিশ্চিত হতে চান একজন থেরাপিস্ট।
“এটা মনে রাখা দরকার যে, সব শিশুর সমস্যাই প্লে থেরাপির মাধ্যমে সমাধান করা সম্ভব নয়। এক্ষেত্রে একজন থেরাপিস্ট একটি বাচ্চার সর্বাঙ্গীন পরিস্থিতির উপর নজর রেখে এই পদ্ধতি প্রয়োগ করেন। যদি দেখা যায় যে, বাচ্চা প্রচণ্ড রেগে যাচ্ছে বা আক্রমণাত্মক হয়ে উঠছে, তাহলে এই থেরাপির সাহায্য নেওয়ার মাধ্যমে অবিলম্বে একজন বিশেষজ্ঞের হস্তক্ষেপের প্রয়োজন”, – এমনই মত নিমহ্যান্সের শিশু এবং বয়ঃসন্ধিগত মনোরোগ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডাক্তার জন বিজয়সাগরের।
কোন জায়গায় এই ধরনের চিকিৎসা পদ্ধতির আয়োজন করা হয়ে থাকে?
সাধারণত খেলার ঘরেই এই পদ্ধতির প্রয়োগ করা হয়। এই জায়গাটির পরিবেশ এমনভাবে গড়ে তোলা উচিত, যাতে বাচ্চারা নিজেদের ভাব প্রকাশের সময় নিরাপদ এবং স্বচ্ছন্দ থাকতে পারে। এই ঘরে সাধারণত বাচ্চাদের নানা ধরনের খেলার সামগ্রী থাকে, যেগুলি তাদের চিকিৎসায় ব্যবহার করা হয়। এই ধরনের খেলনা বিভিন্ন বয়সের শিশুদের ক্ষেত্রেই উপযোগী। অনেক জায়গায় একটা আয়নাও থাকে, যা শিশুকে লক্ষ্য করার জন্য থেরাপিস্টের কাজে লাগে।
একটি শিশুর ক্ষেত্রে এই থেরাপি কীভাবে সাহায্য করে?
খেলা একজন শিশুর মনের শুদ্ধিকরণে সাহায্য করে। এবং তাদের সমস্যা সমাধান করার জন্য মানসিক শক্তি জোগায়। এই থেরাপির সাহায্যে শিশু তার মনের ভাব প্রকাশ করতে পারে। আরও কিছু শেখার ক্ষেত্রে এই থেরাপি বাচ্চাদের সাহায্য করে —
- প্রাথমিকভাবে এবং তারপর ভালোভাবে বাচ্চাদের সূক্ষ্ম অথবা স্থূল কার্যবিষয়ক অঙ্গ সঞ্চালনের কৌশল আয়ত্ত করতে শেখায়
- সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা এবং সমস্যা সমাধানের দক্ষতা বাড়ে
- সামাজিক দক্ষতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে
- অতিরিক্ত শক্তি ক্ষয় থেকে রেহাই দেয়
- অনুভূতি এবং সমস্যা বুঝতে সহায়তা করে
- নিজের মনের ভাব প্রকাশের মাধ্যমে তাদের আত্মবিশ্বাস মজবুত হয়
- কল্পনাশক্তির বিকাশ এবং সৃষ্টিশীলতাকে বাড়াতে সাহায্য করে
এই ক্ষেত্রে শিশুর পরিবারের সহযোগিতা প্রয়োজন?
অধিকাংশ প্লে থেরাপির ক্ষেত্রে থেরাপিস্ট এবং বাচ্চাদের অংশগ্রহণই জরুরি। গ্রুপ থেরাপির জন্য একাধিক শিশুর দরকার পড়ে। অভিভাবকরা বাড়িতে বাচ্চাদের বিভিন্ন খেলাধূলার প্রশিক্ষণ দিতে পারে। বাচ্চাদের সঙ্গে কীভাবে যোগাযোগ স্থাপন করতে হয়, সেই বিষয়ে অভিভাবকদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।
অনেক সময় থেরাপিস্টরা বাচ্চাদের বাবা-মাকে গ্রুপ থেরাপির সময়ে বা ফ্যামিলি থেরাপির জন্য আমন্ত্রণ জানাতে পারেন। এই আয়োজনের মধ্য দিয়ে বাবা-মায়েরা তাদের বাচ্চাদের সমস্যাগুলি সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা করতে সক্ষম হন। শিশুর প্রতি পরিবারের বন্ধন দৃঢ় করতেও এই পদ্ধতি সাহায্য করে। একে ফিলিয়াল থেরাপি বলা হয়।
কে পারে এই প্লে থেরাপি ব্যবস্থার আয়োজন করতে?
যে কোনও মানসিক স্বাস্থ্যের বিশেষজ্ঞ, তিনি সাইকিয়াট্রিস্ট হতে পারেন, বা সাইকোলজিস্ট অথবা সাইকিয়াট্রিক সোশ্যাল ওয়ার্কারও হতে পারেন। তবে এক্ষেত্রে তাঁর বিশেষ প্রশিক্ষণ থাকা জরুরি। একজন থেরাপিস্ট স্বাধীনভাবে এই চিকিৎসা করতে পারেন। অথবা কোনও হাসপাতাল বা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত থেকেও এই কাজ পরিচালনা করতে পারেন। যখন একজন রুগির জন্য থেরাপিস্টের ব্যবস্থা করা হবে, তখন কতগুলি বিষয় অবশ্যই মনে রাখতে হবে। সেগুলি হল—
- এই দায়িত্বপালনের ক্ষেত্রে তিনি কি আদৌ যোগ্য?
- তাঁর কি শিশুদের সঙ্গে দীর্ঘ সময় ধরে কাজ করার অভিজ্ঞতা রয়েছে?
সবচেয়ে যা জরুরি তা হল, কয়েক সপ্তাহ বা মাস ধরে একজন থেরাপিস্টের সঙ্গে কাজ করার পরে একটি বাচ্চা এবং তার পরিবার স্বচ্ছন্দ বোধ করছে কি না, তা খতিয়ে দেখা।