মহামারীর এই সংকট কালীন মুহূর্তে যারা সামনে থেকে সাধারণ মানুষের ঢাল হয়ে আছেন এবং অবিরাম চিকিৎসা সেবা প্রদান করে চলেছেন তাদের মানসিক স্বাস্থ্য ভাল রাখতে কি কি করা প্রয়োজন তা কি আমরা ভেবে দেখেছি? আসুন আজ এসব বিষয় নিয়ে একটু ভাবা যাক।
আমরা জানি যে, প্রতি দিন অনেক অনেক মানুষ তাদের রোগ, শোক, দুঃখ, দুশ্চিন্তা ইত্যাদি সমস্যা নিয়ে ডাক্তারদের শরণাপন্ন হয়। দুশ্চিন্তা শুধু নিজের অসুস্থতা নিয়ে নয়, বরং প্রিয় জনের অসুস্থ হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থেকেও সৃষ্টি হয়। তাদের মাঝে শারীরিক ও মানসিক বিভিন্ন সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে। যেহেতু কোভিড-১৯ অত্যন্ত সংক্রামক, এর ছড়িয়ে পড়ার হার অত্যন্ত বেশী। ঘরে থাকা ছাড়া এর বিরুদ্ধে আমাদের আর কোন হাতিয়ার অবশিষ্ট নেই। আমাদের সাধারণ মানুষের পক্ষে ঘরে থেকে লকডাউন পালন করা সম্ভব। কিন্তু যারা সামনে থেকে করোনার সাথে লড়াই করছেন, যেমন ডাক্তারদের জন্য ঘরে বসে থাকার কোন সুযোগ নেই। তাদেরও পরিবার রয়েছে, কাছের মানুষ রয়েছে। কিন্তু এই চ্যালেঞ্জিং সময়ে তারা কেবল আমাদের জন্যই লড়াই করছে। তাহলে প্রকৃতপক্ষে একজন স্বাস্থ্যকর্মী বা একজন ডাক্তারের উপর কতো বেশী মানসিক চাপ এই সময়ে রয়েছে সেটি কল্পনা করাও বেশ কঠিন। তবু তারা প্রতিনিয়ত কাজ করে চলেছেন আমাদের ভাল রাখার জন্য।
একজন ডাক্তার সামনে থেকে দেখেন একজন করোনা আক্রান্ত রোগী কিভাবে করোনার সাথে লড়াই করে। আক্রান্তের পরিবারের সদস্যদের তাদের কাছে যেতে দেওয়া হয়না কারণ তাদেরও সংক্রমণের আশংকা থেকে যায়। আক্রান্ত তাদের চোখের সামনেই পরিবারের সদস্যদের ছাড়া, একা, এই করোনার সাথে লড়াই করে এবং অনেক ক্ষেত্রে একাকী অবস্থাতেই মৃত্যুবরণ করে। এসব বিষয় একজন ডাক্তারকে প্রতিনিয়ত মানসিক পীড়ার মাঝে রাখে। আবার নিজের সাথে সাথে তারা তাদের পরিবারের সুরক্ষা নিয়েও চিন্তিত থাকেন। নিজের অসুরক্ষার কথা মাথায় রেখেই তারা এই পেশায় আসেন কিন্তু পরিবারের অসুরক্ষার কথা তাদের প্রতিনিয়ত মানসিক চাপের মাঝে রাখে। তারা নিশ্চিন্তে নিজের বাড়িতে বা পরিবারের সদস্যদের কাছেও যেতে পারেন না। আজ কাজ এবং ব্যক্তিগত ও পারিবারিক জীবনের মাঝে সামাঞ্জস্য বিধান করাই তাদের জন্য সব থেকে বড় মানসিক চ্যালেঞ্জে পরিণত হয়েছে।
এভাবে মানসিক চাপের মাঝে থেকে তাদের মানসিক ও শারীরিক অবস্থাও ধীরে ধীরে বিভিন্ন জটিলতার সম্মুখীন হচ্ছে। তাই তাদের জন্য অবশ্যই কিছু বিশেষ পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে যা তাদের মানসিক শক্তি বজায় রাখার জন্য জরুরী। এ লক্ষ্যে তাদের জন্য নির্দিষ্ট সময় পর পর কাউনসেলিং-এর ব্যবস্থা করতে হবে। তাদের কাজ কর্ম, চিন্তাভাবনা সব কিছু ফলো আপের ব্যবস্থা করতে হবে। ফোন বা অন্য ভার্চুয়াল মাধ্যমের দ্বারা তাদের সমস্যা শোনা এবং সমাধানের ব্যবস্থা করতে হবে। প্রয়োজন হলে এক্ষেত্রে গোপনীয়তা অবলম্বন করতে হবে যাতে করে তারা মানসিকভাবে নিশ্চিন্ত থাকতে পারেন।
যারা আমাদেরকে স্বাস্থ্য সেবা প্রদান করেন, তাদের মানসিক স্বাস্থ্যের খেয়াল রাখা আমাদের সবার কর্তব্য। তাদের জন্য আমাদেরকেও ভাবতে হবে কারণ বিপদে তারাই আমাদের সব থেকে বেশী সহায়তা করেন এবং এই মহামারীর সময় তারাই আমাদের নব জীবন প্রদান করছেন। তাদের মানসিক অবস্থা ভাল থাকলে আমাদের চিকিৎসা করা আরও সহজ এবং সফল হবে। তাই তাদের এবং আমাদের উভয়ের স্বার্থেই তাদেরকে শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ রাখতে হবে।
স্বজনহারাদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য পেতে দেখুন: কথা বলো কথা বলি
করোনা বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য ও নির্দেশনা পেতে দেখুন: করোনা ইনফো
মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক মনের খবর এর ভিডিও দেখুন: সুস্থ থাকুন মনে প্রাণে